×

জাতীয়

স্বল্প সময়ে সংসদে বিল পাসের রেকর্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২০, ১০:১৬ এএম

স্বল্প সময়ের আলোচনায় একের পর এক বিল পাসের রেকর্ড করে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। একদিনে ৪-৫টি করে বিল পাস হয়, যার প্রতিটির জন্য সময় ব্যয় হয়েছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ১০ম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ১০ কার্য দিবসে ১৮টি বিল এবং ২৩তম অধিবেশনে ১৯টি বিল পাস ও এক ডজন বিলের রিপোর্ট উত্থাপিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। আবার আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া অধিবেশনটি চলবে মাত্র ৫ কার্যদিবস। কিন্তু এ অধিবেশনে ১১টি বিল উত্থাপিত হবে এবং গোটা পাঁচেক বিল পাস হবে বলে সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে।

আর এত স্বল্প সময়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস হওয়ার রেকর্ড পৃথিবীর অন্য কোনো পার্লামেন্টের নেই এমন মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সবচেয়ে কম সময়ে বিশ্বের কোনো সংসদ যদি আইন পাসের রেকর্ড গড়ে থাকে তা হলো আমাদের সংসদ। তাই আমাদের জাতীয় সংসদ এ বিষয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানোর জন্য আবেদন করতে পারে। কেননা, একদিকে যেমন এটা একটা বিশ্বরেকর্ডের মতো, তেমনি অন্য দিকে এটা একটা বিব্রতকর বিষয়ও বটে। পৃথিবীর কোনো সংসদে এত অল্প সময়ে বিল পাসের ইতিহাস আছে বলে আমার জানা নেই।

আবার করোনা মহামারির কারণে একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন শুরু হয় ১৮ মার্চ, মাত্র দেড় ঘণ্টা পর অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। একাদশ সংসদের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন চলে মাত্র ৮ কার্য দিবস। মাত্র ১৮ জন এমপির ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট আলোচনায় অর্থবিলসহ বাজেট পাস হয়। আবার স্বল্পদিনের এ অধিবেশনে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিল ও প্রায় এক ডজন বিলের রিপোর্ট উত্থাপিত হয়।

এদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোরাম সংকট কাটাতে মাত্র ৭০-৭৫ জন সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। আর ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এত অল্প সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে বিল ও বাজেট পাস হওয়ায় সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। কোনো বিলে বিরোধীদের কোনো মতামত বা গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী না নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এসব বিষয় উল্লেখ করে সংসদ কার্যক্রমকে একটা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার স্থান বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন পাস হওয়ার বিষয়ে সাংসদদের যে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন আমাদের সংসদ তা দিতে পারেনি। আবার দিনে দিনে সংসদ কার্যক্রম একটা আনুষ্ঠানিকতায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে।

তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনার জন্য দুটি অধিবেশন স্বল্পকালীন করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। এই মহামারির সময় অধিবেশন বসাটাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে অধিবেশন বসতে বাধ্য হয়েছে। তবে বাজেট পাসও বা বিল পাসের ব্যাপারে সংবিধানের সব ধারা মেনেই করা হয়েছে। করোনার কারণে হয়তো অধিবেশন স্বল্পসময়ে শেষ করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, কোনো সংসদে কোরাম যদি হয়’ তাহলে বিল পাস হবে বা বাজেট পাস হবে। কোরাম সংকট না হলে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। বিরোধী দলের অভিযোগ, তাদের কোনো মতামত নেয়া হয় না, এমন প্রশ্নে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, তারা বিরোধিতা করতে পারেন বা কোনো বিলে সংশোধনী দিতে পারেন। তবে ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা যদি তা নাকচ করে দেয় তাহলে তাদের সংশোধনী নেয়া হবে না। এটাই তো সংসদীয় নিয়ম।

আবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছেন, বিল পাসের বিষয়গুলো সত্যি হতাশাজনক। আমরা স্টাডি করে দেখেছি অনেক বিল আসে যেগুলো আগে থেকেই আছে ; কিন্তু খালি খালি তা কিছুটা পাল্টে সরকারের স্বার্থে পুনরায় পাস করার জন্য তোলা হয়, সময় নষ্ট হয়। আমরা এ নিয়ে বিরোধিতা করি, প্রয়োজনীয় সংশোধনী দিই। কিন্তু বর্তমান সংসদ এক পেশে হয়ে গেছে। বিরোধীদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বা তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে না। যেটা সংসদীয় রীতি নয়। তাছাড়া বিরোধীরা যে সংশোধনীগুলো দেয় সেগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। সংশোধনীগুলোর দু একটা নেয়া হলেও বলা যেত বিরোধীদের নিয়ে বিলগুলো পাশ হয়েছে। স্বল্প সময়ে বিল পাসের বিষয় তিনি বলেন, বর্তমান সংসদে বিরোধী দল আছে সে তোয়াক্কাই করে না। বিলের ওপর আলোচনাই করতে দেয়া হয় না। দু মিনিটের আলোচনায় বিল নিয়ে একজন এমপি কি বলবেন? সংসদে একটি আইন পাস হতে গেলে বিলগুলো নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনার প্রয়োজন। আর মন্ত্রীর উত্তরটা পয়েন্ট টু পয়েন্ট দিতে হবে। তা হয় না। মাত্র ১৫-২০ মিনিটে আমাদের সংসদে বিল পাস হয়, এ বিষয়ে আমি সত্যি হতাশ। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিল পাসের ব্যাপারে বিরোধীদের বক্তব্য আমরা শুনি, তাদের যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে যেভাবে আমরা সংসদ বসিয়েছি, বিল বা বাজেট পাস করেছি সেটাই যথেষ্ট। কেননা, কোরাম পূর্ণ হলেই সংসদ অধিবেশন বসতে এবং বিল পাসে কোনো বাধা নেই। আর বিরোধীরা তাদের সংশোধনী দিতে পারেন, তবে সংসদ তা নিতে নাও পারে, সেক্ষেত্রে বিল পাসে সমস্যা হবে কেন? তাদের সংশোধনী নেয়ার যোগ্য না হলে কিভাবে তা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বিল পাসের শীর্ষে আছে জাতীয় সংসদের দশম সংসদের ২৩তম অধিবেশন। এ অধিবেশনে ৯ কার্য দিবসে মোট ১৯টি বিল পাস হয়। ২২তম অধিবেশনেও ১০ কার্য দিবসে ১৮টি বিল পাস হয়। পুরো দশম সংসদে ২৩টি অধিবেশনে মোট ১৯৩টি বিল পাস হয়। নবম সংসদে পাস হয় ২৭১টি বিল। গড়ে ১৫-২০ মিনিটের আলোচনায় এসব বিল পাস হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App