×

জাতীয়

সাইবার পর্নোগ্রাফির শিকার ৬০ শতাংশ টিনেজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:৩৫ এএম

সাইবার পর্নোগ্রাফির শিকার ৬০ শতাংশ টিনেজার

প্রতীকী ছবি

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে লড়তে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন সাভারের এক তরুণ ও নারায়ণগঞ্জের এক তরুণী। কোচিং ক্লাসেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব ও একসময় মন দেয়ানেয়া। এরপর সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নানা মুহূর্তের ছবি ও ভিডিওর আদানপ্রদান। ভালোই চলছিল দিন তাদের। তবে এক সময় সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে দুরে সরে যেতে চায় মেয়েটি। নানা চেষ্টায় ও অনুরোধে প্রেমিকের ডাকে সাড়া না দেয়ায় বাধে বিপত্তি। হুমকি দিতে শুরু করে প্রেমিক। ফিরে না এলে বিভিন্ন সময় আদানপ্রদান হওয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে ইন্টারনেটে। শেষমেষ একটি সাইটে ছড়িয়ে দেয়া হয় তা। পরে ভুক্তভোগীর অভিযোগ তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ইউনিট। তবে সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসলে, কোনো ছবি-ভিডিও বা গোপন নথি অরক্ষিত মোবাইল বা অন্যান্য মাধ্যমে রাখা ঠিক নয়। তা একবার ইন্টরনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর মুছে ফেললেও পুনরায় উদ্ধার সম্ভব।

সিটিটিসি সাইবার ইউনিট সূত্র বলছে, প্রতিদিনই তাদের কাছে ২০টির মতো সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ আসে। এরমধ্যে অধিকাংই সাইবার পর্নোগ্রাফি সংশ্লিষ্ট। গত চার বছরে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, শতকরা ৯০ ভাগ নারীই সাইবার পর্নোগ্রাফির ভিকটিম হন। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই টিনেজার। প্রাক্তন প্রেমিক বা স্বামীর মাধ্যমেই সাইবার পর্নোগ্রাফির শিকার হন তারা।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণীদের অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গত বুধবার রাতে জয়পুরহাটে শহরের রেলস্টেশন রোড এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরের দিন ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্কুলছাত্রীর আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বোয়ালমারী থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান বলেন, স্কুলছাত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজ ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। এ সময় ছাত্রের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে ওই ছাত্রীর কিছু ছবি পাওয়া যায়। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় বিইউবিটির বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা ভোরের কাগজকে বলেন, একান্ত ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও কিংবা নথি অরক্ষিত হাতের থেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। কারণ

এগুলো অরক্ষিত হাতে ছড়িয়ে গেলে চিরতরে মুছে ফেলা দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই এ বিষয়ে নিজের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, তবে ঘটনা ঘটলে তা সমাধানে দেশের ৮ বিভাগেই সাইবার ট্রাইবুন্যাল করতে হবে। প্রতিটি জেলায় থাকবে সাইবার ফরেনসিক ল্যাব।

সাইবার ইউনিটের কর্মকর্তা আবু বক্কর জানান, সাইবার পর্নোগ্রাফি হচ্ছে ভুক্তভোগীর একান্ত ব্যক্তিগত বা আপত্তিকর ছবি কিংবা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া বা ছাড়ার হুমকি দেয়া। আগের বা বর্তমান প্রেমিক কিংবা স্বামীর মাধ্যমেই এ ধরনের সাইবার অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়। তবে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে অর্থাৎ টিনেজাররাই সাইবার পর্নোগ্রাফিতে বেশি জড়ায়। অবাধ ইন্টারনেটের যুগে ছেলেমেয়েরা ফেসবুকসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় কাটান। করোনাকালে যা আরো বেড়েছে। তাই অভিভাবকদের সঠিক নজরদারি ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার সময়ই টিনেজারদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধ বেশি ঘটে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টি ছাড়া আরেক ধরনের প্রতারণাও খেয়াল করা যায়। বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, ফেসবুকে নিজের সুন্দর ছবি দিয়ে আকর্ষণীয় প্রোফাইল খোলা হয়। সেখানে নিজের অ্যাবাউট ইনফোতে ধনী পরিবারের প্রমাণ করতে লেখা হয় বাবা বড় সরকারি চাকুরে। বোন অস্ট্রেলিয়াতে ডাক্তারি পড়ছে। নিজেও প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র। বেশির ভাগ মেয়ে বন্ধু বানানো ওই একাউন্টধারীর টার্গেট থাকে। এর পরে মেয়েদের সঙ্গে চ্যাট করার চেষ্টা করা হয়। যারা ফাঁদে পা দেন তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একসময় তাদের কাছেই বাবার কাছে এখন চাওয়া সম্ভব নয় বা নানা বিপদের কথা বলে টাকা ধার চায়। টাকা ধার দিলেই আর সম্পর্ক রাখে না। এমন আসামিও গ্রেপ্তার করেছি আমরা।

এ বিষয়ে সিটিটিসির সাইবার বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, কারো পোস্টে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা পর্নোগ্রাফি আইনের ৮/৩ এর ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধ। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য শাস্তি হতে পারে। তাই সাইবার বিষয়ে জানতে হবে। এজন্য মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে সাইবার ইথিকস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App