×

বিনোদন

নারী হওয়াই অভিশাপ?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:১২ এএম

নারী হওয়াই অভিশাপ?

অভিনেত্রীরা।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাই নারী হয়ে জন্মানোই যেন অভিশাপ! ঘর থেকে দু’পা ফেলতে না ফেলতেই অপেক্ষা করে সমূহ বিপদ। সম্ভাবনা থেকে যায় শারীরিক হেনস্থার। এমন পরিস্থিতিতে কেউ যদি হন অভিনেত্রী, তবে তার বিপদ আরো বেশি। উঠতে-বসতে শিকার হতে হয় হেনস্থা কিংবা নিপীড়নের। বাড়ি, কর্মস্থল, বাস-ট্রাম কোথাও নেই নিরাপত্তা। গত কয়েক বছরে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মও যুক্ত হয়েছে নারীদের ত্রাসের তালিকায়। চুন থেকে পান খসলেই শিকার হচ্ছেন ট্রল কিংবা সাইবার বুলিংয়ের।

সম্প্রতি তারও একধাপ ছাড়িয়ে গেছে উত্ত্যক্তকারীরা। ধর্ষণ কিংবা খুনের হুমকি পাচ্ছেন নারী সেলিব্রেটিরা। উত্ত্যক্তকারীরা বেছে নিচ্ছে আক্রোশ মেটানোর সবচেয়ে সহজ পথ, সেলিব্রেটি কিংবা নারীদের ধর্ষণের হুমকি দেয়া। এখনো দেশের প্রতিটি শহরে সাইবার-অপরাধের বিরুদ্ধে আইন পোক্ত না হওয়ায় এই সুযোগ ক্রমাগত কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে বেরোনো নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, অনলাইনে হেনস্থার পরিমাণ বেড়েছে। সম্প্রতি এই হেনস্থার শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী-পরিচালক পূজা ভাট। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ধর্ষণ ও খুনের লাগাতার হুমকি আসায় তিনি প্রোফাইল ‘প্রাইভেট’ করে দিয়েছেন। অনুরাগীদের জানিয়েছেন, তার আপডেট পেতে প্রোফাইলে ‘রিকোয়েস্ট’ পাঠাতে। ‘সড়ক টু’র হাত ধরে অনেক দিন পরে বড় পর্দায় ফিরতে যাচ্ছেন এই বলিউড অভিনেত্রী।

শুধু পূজাই নন, হুমকির তালিকায় রয়েছেন তার বোন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট এবং শাহিন ভাট। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শাহিন। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু এবং তার জেরে নেপোটিজম বিতর্কের কারণে নেটিজেনদের চক্ষুশূল এখন ভাট পরিবারের কন্যারা। এদিকে সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই ভার্চুয়াল কাঠগড়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের মৃত্যুর এক মাস পর তিনি ইনস্টাগ্রামে হুমকি-চ্যাটের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন। মুম্বাই পুলিশের সাইবার শাখাকে ট্যাগ করে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছিলেন রিয়া। দুটি প্রোফাইল চিহ্নিত করেছিল মুম্বাই পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

অনলাইন নীতি-পুলিশি ও ট্রোলিংয়ের সঙ্গে ছোট-বড় সব মাপের সেলেবই কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের মতো হুমকি দিয়ে যখন কোনো সেলেবকে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়, তখন আর হালকাভাবে নেয়ার জায়গা থাকে না। পূজা ও রিয়া এই ট্রেন্ডের সাম্প্রতিক উদাহরণমাত্র। পর্দায় অবাধ শরীর প্রদর্শনের কারণে, কখনো ছবির কনটেন্ট প্রসঙ্গে বা কোনো আলটপকা মন্তব্যের জেরে হুমকির মুখে পড়ছেন অভিনেত্রীরা। কিন্তু প্রশ্ন যখন ধর্ম বা রাজনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ঘিরে চলে, তখন এই আক্রমণ আরো বিভীষিকার আকার নেয়।

‘পদ্মাবত’ ছবি মুক্তির আগে রাজপুত ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে ‘ধর্ষণ থেকে মুণ্ডচ্ছেদ’ কোনো হুমকি থেকে বাদ যাননি দীপিকা পাড়–কান। এমন উদাহরণ আরো রয়েছে, নির্দিষ্ট এক রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতা করায় প্রায়শই টুইটারে ধর্ষণের হুমকি পান স্বরা ভাস্কর। আবার কোনো পুরুষ সেলেব্রিটিকে ছোট করার জন্য তার বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়ে থাকে। মেয়ে আলিয়াকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার পরই কিছু দিনের জন্য টুইটার অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করেছিলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ।

এমনকি কলকাতার অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহান যখনই কোনো হিন্দু অনুষ্ঠানে শামিল হন, তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। পাশাপাশি ভার্চুয়ালিও চলতে থাকে হুমকি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খোলসা করতে না চাইলেও অভিনেত্রীর বক্তব্য, ‘অনলাইনে যারা ধর্ষণ বা খুনের হুমকি দেয়, তারা বিকৃত মানসিকতার মানুষ। জীবনে কোনো রকম নেগেটিভিটিকে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়। অনলাইনে এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমি চিন্তিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমি বিভ্রান্ত হই না।’ স্পষ্টবক্তা হওয়ার জন্য অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকেও নানা সময় অনলাইন হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এই অন্যায়ের মোকাবিলা করতে সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছেন সোনাক্ষী সিনহা। গত ১৪ আগস্ট মুম্বাইয়ের অপরাধ দমন শাখায় এক ব্যক্তির (ইনস্টাগ্রামে হুমকিদাতা) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ছ’দিন পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। অনলাইন হেনস্থার বিরুদ্ধে সোনাক্ষীর ক্যাম্পেন, ‘অব বাস!’-এর মাধ্যমে সাইবার আইন মজবুত ও কার্যকর করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে আওয়াজ তুলছেন অভিনেত্রীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App