×

সারাদেশ

দেড় হাজার বিঘা জমি অনাবাদির আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ১২:১৪ পিএম

দেড় হাজার বিঘা জমি অনাবাদির আশঙ্কা

জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত নাটোরের বাগাতিপাড়ার বিলগোপালহাটি বিল- ভোরের কাগজ

উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা দখল করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন ও নালা-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বছর উপজেলার এসব জমিতে আবাদ করতে পারছেন না কৃষক।

জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২৬টি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো হলো- দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাড়িয়ার বিল, হাতিগাড়া বিল, সারিদিয়ার বিল, হিজলী দীঘাপাড়া বিল, হাট গোবিন্দপুর, ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের হাটদৌল, পাঁচুড়িয়া, সান্যালপাড়া, স্বরূপপুর, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের জিয়ারকোল, বিলগোপালহাটি, নূরপুর মালঞ্চি, কাকফো, শ্রীরামপুর, বড়পুকুরিয়া, ক্ষিদ্রমালঞ্চি, পাকা ইউনিয়নের সলইপাড়া, ধোপার বিল, জামনগরের দেবনগর সোনার বিল, বজরাপুর, খামার বজরাপুর, চক বাঁশবাড়িয়া, জালালপুর এবং বাগাতিপাড়া পৌরসভার নড়ইগাছা, টুনিপাড়া ও পেড়াবাড়িয়া। এসব এলাকার প্রায় ১ হাজার ৩৫০ বিঘা নিচু জমিতে পানি আটকে রয়েছে।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এসব এলাকার মধ্যে দয়ারামপুর ইউনিয়নে ২৬২ দশমিক ৫ বিঘা, ফাগুয়াড় দিয়াড় ইউনিয়নে ৩০০ বিঘা, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নে ৪১২ দশমিক ৫ বিঘা, পাকা ইউনিয়নে ৯৭ দশমিক ৫ বিঘা, জামনগর ইউনিয়নে ১২৭ দশমিক ৫ বিঘা এবং বাগাতিপাড়া পৌরসভায় ১৫০ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধ সৃষ্টির ফলে অনাবাদি রয়েছে। তিন ফসলি এসব জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে চাষের উপযোগী না থাকায় এসব জমিতে আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এদিকে এসব জমি থেকে পানি নিষ্কাশনেরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেকু জব্দ, জরিমানাসহ বিভিন্ন সাজা দেয়া হলেও এসব জমিতে পুকুর খনন থামছে না। তাছাড়া প্রভাবশালীরা দখল করে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে বিলের পানি নদীতে পড়তে পারছে না।

এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বিলের এসব জমিতে এ মৌসুমে আমন রোপণ করতেন। এছাড়া মসুর, খেসারি, মটর, ভুট্টা, রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করতেন। কিন্তু ৩-৪ বছর ধরে বিলের মধ্যে অসংখ্য পুকুর খনন করা হয়েছে। বিভিন্ন সাঁকো ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ বিলে বিভিন্ন উৎপাদিত ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আর এসব জমিতে এ মৌসুমে আবাদ করতে পারছেন না।

জাতীয় কৃষক সমিতির নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাগাতিপাড়ার বাসিন্দা আ. করিম বলেন, চলতি বছর অতিবৃষ্টির ফলে বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। বেশকিছু বাড়িঘরেও পানি ওঠে। ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়। এর আগে যেসব জমিতে বিগত সময়ে বছরে ৩ ধরনের ফসল উৎপাদন হতো। বর্তমানে তা হচ্ছে না। বিলের মাঝে অসংখ্য পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। বিভিন্ন খালও প্রভাবশালীরা দখল করে বন্ধ করে ফেলেছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বিলে যেভাবে পানি জমে আছে, খাল সংস্কার এবং নদীর সঙ্গে ড্রেন করে অতিসত্বর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। আর তা না হলে যতটুকু আবাদি জমি রয়েছে, সেটুকু সারা বছর জলাবদ্ধ থাকবে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোমরেজ আলী বলেন, উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১১ হাজার ২১০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছর ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিলে আটকে থাকা পানি নেমে গেলে আমন চাষ বাড়তে পারে। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি জমিগুলোতে ক্ষেত্র বিশেষে এক ফসল উৎপাদনের ফলে কৃষি অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে। উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য তার দপ্তর থেকে পানাসি ও বিএডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App