×

জাতীয়

কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হরেক বাধা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:৫২ এএম

কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হরেক বাধা

উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনাগুলো এখনো দৃশ্যমান। ছবিটি আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে তোলা -ভোরের কাগজ।

প্রায় দেড় বছর আগে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদী ও নদী তীরবর্তী স্ট্রান্ড রোড এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। তখন সেসব জায়গায় লাল পতাকা, কাঁটাতারের বেড়া দেয়াসহ কিছু লাল মার্কিংও করে দিয়েছিল। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান রাখারও ঘোষণা দিয়েছিলেন দুটি কর্তৃপক্ষই।

এমনকি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদও সে সময় এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে যে কোনো উপায়ে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেসব জায়গা আবারো বেদখল হয়ে যায়। এদিকে বন্দরের পতেঙ্গায় লালদিয়ার চর এলাকায় প্রায় ৬০ একর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মূল কারণ হিসেবে বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সাংসদের নানা ধরনের আপত্তি ও বাধার কারণে তারা তা করতে পারছেন না।

আবার এদিকে কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে অনেকটা গাছাড়া ভাব রয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, আদালতের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী এসব উচ্ছেদের দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের। আবার বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী সব জায়গাই যে বন্দরের তা কিন্তু নয়। যতটুকু বন্দরের এখতিয়ারের মধ্যে আছে তা বন্দর উচ্ছেদ করছে এবং করবে। তবে সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নদীতে চরপড়া যে জায়গায় নানা স্থাপনা ও বস্তি গড়ে উঠেছে তা সরকারি খাসজমি। এই খাসজমির মালিক সরকার এবং সরকারের পক্ষে তা জেলা প্রশাসনের ওপর বর্তায়। সুতরাং সে জায়গার দায়দায়িত্ব বন্দরের নয়। তবে বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর মূল জায়গা থেকে নদীর দুই পাড়ের ৫০ গজের মধ্যেকার জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদী তীরে অভিযান চালিয়ে দখলদারদের চিহ্নিত করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরকে দেন। বন্দর তাদের অর্থে কর্ণফুলী নদী তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। এটি এখন জেলা প্রশসানেরএখতিয়ারে নেই। অভিযান বন্ধ থাকা এবং প্রশাসনের উচ্ছেদ করা জায়গা আবার দখল করে নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে নগরীর স্ট্রান্ড রোডের বিভিন্ন এলাকায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরের জায়গায় যেসব অবৈধ স্থাপনা ছিল সেখানকার প্রায় ১০ একর জায়গা থেকে সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছর নিজেদের জায়গা আবার বেদখল হলো কিনা সে ব্যাপারে আর কোনো খোঁজ খবর নেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। অবৈধ দখলদাররা আবার সেই জায়গায় নানাভাবে স্থাপনা তৈরি করে নিয়েছে। গত ২৭ আগস্ট সকালে বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ৈর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে সেগুলো আবার উচ্ছেদ করা হয়। বৃহস্পতিবারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই উচ্ছেদ কাজে নগরীর পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনার এহসান মুরাদও সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী ম্যাজিস্ট্র্রেট গৌতম বাড়ৈ জানান, প্রায় ২০০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর আদালত বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি, তাদের উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কর্ণফুলী নদী ও নদী তীরবর্তী উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু নিয়ে আইনি লড়াইকারী এডভোকেট মনজিল মোরশেদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার এক মাস আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সর্বশেষ সময় নিয়েছিল হাইকোর্ট থেকে। করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় তা আর অগ্রসর হয়নি। কিন্তু এর আগের যে আদেশগুলো আছে তা দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ ঠেকাতে করা মামলা আপিল বিভাগ থেকে আমি দুইবার ক্লিয়ার করে দিয়েছি। এ অবস্থায় প্রশাসন চাইলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারে।’

এ ছাড়া এদিকে কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফকলসহ বিভিন্ন স্থাপনা করার প্রতিবাদে গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেছে পাঁচটি সংগঠন। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। বক্তারা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জোর দাবি জানান। বন্দরের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘করোনাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এতদিন উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। তবে একেবারে যে হচ্ছে না তা নয় কিন্তু। তবে বন্দরের মালিকানাধীন পতেঙ্গা এলাকায় লালদিয়ার চরে প্রায় ৬০ একর জায়গাটি থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। সেখানে বসবাসকারী লোকজন স্থানীয়ভাবে ভোটারও হয়েছেন দীর্ঘদিন যাবত। বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিল উচ্ছেদের। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য উচ্ছেদ না করার জন্য নানাভাবে বলেছেন। তাই আর তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App