×

জাতীয়

ওয়াসার মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন হয় না কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

ওয়াসার মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন হয় না কেন

ওয়াসা ফাইল

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা বেপরোয়া

ঢাকা ওয়াসার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিভাগীয় মামলা হলেও সেসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা পড়ে না। তদন্ত কমিটির জন্য বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় পার হয়ে মাস-বছর গড়ায়। এক সময় বিষয়টির কথা বেমালুম ভুলে যায় কর্তৃপক্ষ। আর এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন অভিযুক্তরা। সম্প্রতি ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে এমন কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে।

২০১৮ সালে ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের ডিজাইন বিল্ড অপারেটর প্যাকেজের টেন্ডার মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে। ওই বছরের ১০ মে একটি বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়। এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খসড়া রিপোর্ট আরেক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে অভিযোগ অস্বীকার করেন খায়রুল বাশার। কিন্তু তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ১ আগস্ট অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৩০ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ৩০ দিন তো দূরের কথা গত দুই বছরেও ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গত বছরের ২ জুলাই কমিটিকে ৭ দিনের সময় দিয়ে তাগিদপত্রও দেয়া হয়েছিল। এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না পড়ায় অভিযুক্ত খায়রুল বাশারেরও শাস্তি বা মুক্তি মিলছে না অভিযোগ থেকে। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান জানান, এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। প্রক্রিয়া চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী অসীম কুমার ঘোষের ক্ষেত্রেও। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজেই কাজ করা ও কিছু কাজ

না করে বিল পরিশোধের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগে ২০১৭ সালে (মামলা নম্বর-০৪/২০১৭ ও ০৬/২০১৭) দুটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন অসীম কুমার। তার ওই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাহরুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় ওই বছরের ১১ ডিসেম্বরে তাকে তাগিদপত্র দেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি এখনো তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই প্রতিবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হবে।

সংস্থাটির আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গত বছরের ২১ অক্টোবর (মামলা নম্বর ৩৩/২০১৯) বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে এলে ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে বহিরাগত ও ওয়াসার কিছু শ্রমিক-কর্মচারী মন্ত্রীকে স্বাগত না জানিয়ে উল্টো বিক্ষোভ করেন। তার বিরুদ্ধে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অফিসে প্রবেশের নিয়ম না মানা, জনগণকে সেবা না দেয়া, অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তোলা হয়। ২০০৯ সালেও এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। সে সময় তার দুটি ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। বিষয়গুলো তদন্ত করতে গত ৩ মার্চ দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. মোহসেন আলী মিয়াকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কোভিড-১৯ এর কারণ দেখিয়ে এ কর্মকর্তা এখনো প্রতিবেদন জমা দেননি।

জানা গেছে, ওয়াসার এমন অনেক অভিযোগই শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে তদন্তের গাফিলতির কারণে। ২০১৫ সালের একটি বিভাগীয় মামলায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এম এ রশীদ সিদ্দিকী দোষীসাব্যস্ত হলেও ২০১৯ সালে মানবিক কারণ দেখিয়ে তাকে ‘তিরস্কারের’ লঘু দণ্ড দেয়া হয়। কারণ ততদিনে তার অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে আসে। মূলত বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থাকারা অভিযুক্তদের ভয়ে অনেক সময় প্রতিবেদন দিতে সাহস পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় তাদের হুমকি দেয়া এবং মাস্তান দিয়ে হয়রানি করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে দেরি হয় সত্যি। আমাদের আইনবিধি মেনে তদন্ত করতে হয়। এতে কখনো কখনো দীর্ঘসূত্রতা ঘটে। তবে ওয়াসা কাউকে বিনা অপরাধে সাজা দেয় না, তেমনি অভিযুক্তকেও ছাড়ার পক্ষে নয়। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হুমকিধামকি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কিছু কিছু অভিযোগ আমিও শুনছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওয়াসার অবস্থান জিরো টলারেন্স। এক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App