‘লাল জমিন’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে জ্বলল মঞ্চের আলো
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০৮:৩৪ পিএম
‘লাল জমিন’ নাটককে মোমেনা চৌধুরী
নাটকের দৃশ্যে মোমেনা চৌধুরী
করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ৫ মাস আলো জ্বলেনি কোনো মঞ্চেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খুলে দেয়া হলেও এখনও বন্ধ দেশের প্রেক্ষাগৃহ থেকে শুরু করে শিল্প সংস্কৃতির মঞ্চ। তবে করোনা ভীতি কাটিয়ে অবশেষে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) মোমেনা চৌধুরীর ‘লাল জমিন’ নাটক প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে খুলল মহিলা সমিতির দরজা। যেখানে এতোদিন জমেছিল ধুলো। সেখানে দর্শকের আগমনে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
মান্নান হীরার রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় শূন্যন রেপার্টরি দল প্রযোজিত নাটকটির ২৪৪তম মঞ্চায়ন হলো বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। এতে একক অভিনয় করেন মঞ্চের শক্তিমান শিল্পী মোমেনা চৌধুরী।
যুদ্ধস্মৃতি জাগিয়ে তোলা নাটকে মোমেনার অনবদ্য অভিনয় আবেগাপ্লুত করে তোলে দর্শকদের। গল্পে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী কিশোরী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন। দুরন্ত বালিকাজীবন, বর্ণিল কৈশোর, দুঃসহ বয়ঃসন্ধিকাল। মুহূর্তেই এককাল থেকে আরেককালে যাচ্ছেন তিনি, নিয়ে যাচ্ছেন যেন দর্শককেও। মঞ্চই বাড়ির উঠোন, খড় ছিটানো, এক্কাদোক্কা খেলা, ফসল ফলনের জায়গা, পদ্ম-শাপলা ফোটা বিল। দর্শকের সামনে পুরো মঞ্চটাই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক নির্যাতিত বালিকার আর্তনাদের কাহিনি ‘লাল জমিন’।
মোমেনার অভিনয় ধীরে ধীরে এক অনন্য উচ্চতায় উঠতে শুরু করে। হলভর্তি সব দর্শক স্তম্ভিত হয়ে মোমেনার অভিনয় দেখে। নিশ্চুপ মুগ্ধতায়। নাটকের ঠিক মাঝামাঝিতে দেখা যায় খানখান হয়ে ভেঙে পড়া মোমেনার স্বপ্ন।
[caption id="attachment_239583" align="aligncenter" width="700"] নাটকের দৃশ্যে মোমেনা চৌধুরী[/caption]শেষে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া বাংলাদেশ যেন লুটেরাদের রাজ্য। অবাধ শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা আর প্রতারণার অভয়ারণ্য। পরিচালক মান্নান হীরা দর্শককে নিয়ে যান আরও অনেক গহীনে। তা না হলে কি প্রত্যেক দর্শকের চোখেই অশ্রু ঝরে?
নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জুলফিকার চঞ্চল ও রমিজ রাজু। কণ্ঠ দিয়েছেন বারী সিদ্দিকী, রমিজ ও নীলা। লাইটে কাজ করেছেন জয়, আতিক ও মির্জা শাকিব। কস্টিউম ডিজাইন করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি এবং তাকে সহযোগিতা করেছেন নীলা মমতাজ। সেট নির্মাণ করেছেন জুয়েল, সানী ও আসাদ।
করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে সংক্রমণের ভয়ে অন্য মঞ্চগুলো এখনও বন্ধ, সেখানে নাটকের প্রদর্শনী কতোটা যুক্তিযুক্ত? ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেনা চৌধুরী বলেন, অফিস-আদালত, হাটবাজার সবই চলছে। এমনকি টিভি নাটকের নির্মাণও থেমে নেই। তাহলে মঞ্চের কার্যক্রম কেন বন্ধ থাকবে? যে শর্ত মেনে সবকিছু চলছে, মঞ্চ নাটকের কার্যক্রমও সেভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করেছি।
নাটক সম্পর্কে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘লাল জমিন’ যেদিন থেকে শুরু করেছি সেদিন থেকে আজ অবধি আমার চিন্তা-চেতনার রাজ্য দখল করে আছে নাটকটিই। এটি এখন আমার জীবনেরই অংশ।
২০১১ সালে ‘লালজমিন’ নাটকের মধ্য দিয়ে একক অভিনেত্রী হিসেবে মোমেনা চৌধুরীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।