×

সারাদেশ

কুফরি-কালামের ভয় দেখিয়ে ইমামের ধর্ষণ, কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০৪:২৪ পিএম

কুফরি-কালামের ভয় দেখিয়ে ইমামের ধর্ষণ, কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা

অভিযুক্ত ইমাম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ। ছবি : সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিশারবাড়ী গ্রামে মসজিদের এক ইমাম কুফরি-কালাম ও আল্লাহর ভয় দেখিয়ে স্থানীয় মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে ইমাম ওবায়দুল্লাহ এর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী। ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে কিশোরীর পরিবারকে সালিসে ডেকে সমাজচ্যুত করে স্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা।

এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ না করে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না বরে জানিয়েছেন কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন।

ভুক্তভোগীর বাবার করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেয়েকে স্থানীয় মাদরাসার অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করান তিনি। মেয়েকে গ্রামের বিশারাবাড়ী মসজিদের ইমাম মাওলানা ওবায়দুল্লাহর কাছে শুদ্ধভাবে কোরআন শিখতেও পাঠান। প্রথম কয়েকদিন মসজিদে তার মেয়েকে কোরআন পড়ান ওবায়দুল্লাহ। কিছুদিন পর থেকে নিজের বাড়িতে পড়াতে পাঠাতে বলেন। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর কুফরি-কালাম ও আল্লাহর ভয় দেখিয়ে তার কিশোরীকে ধর্ষণ করেন ইমাম ওবায়দুল্লাহ।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, এভাবে নিয়মিত কিশোরীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন ইমাম ওবায়দুল্লাহ। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী। বিষয়টি তার পরিবারে টের পাওয়ার পর নিজেকে বাঁচাতে কিশোরীকে গর্ভপাতের দুটি ট্যাবলেট খাইয়ে দেন ওবায়দুল্লাহ। এ ছাড়া এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হুঁশিয়ারি দেন। গত ২৩ জুলাই কিশোরীর পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে সেদিন রাতেই তার গর্ভপাত হয়।

কিশোরীর বাবা জানান, এ ব্যাপারে পরিবারে জানাজানি হওয়ার পর তারা মেয়েকে ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তখন তার মেয়ে ধর্ষণের কথা জানায়। সে এও বলে, হুজুর কুফরি করে তার বাবা-মাকে মেরে ফেলবে, তাই ভয়ে এতদিন কাউকে কিছু জানায়নি। এসব ঘটনা গ্রামে জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা সালিশের আয়োজন করেন। ততদিনে গ্রামের কয়েকজন সর্দারের সহায়তায় পালিয়ে যান ইমাম ওবায়দুল্লাহ।

ভুক্তভোগীর বাবা অভিযোগ করে জানান, ইমাম পালিয়ে গেলেও সালিসে তার পক্ষেই কথা বলেন সবাই। মেয়ের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়া ও গর্ভপাতের কারণে তাকে অছ্যুত ঘোষণা করে সমাজচ্যুত করে। এমনকি তাদেরও একঘরা করে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, এসব ঘটনা নিয়ে কসবা থানায় মামলা করতে যান তিনি। কিন্তু থানার ওসি লোকমান হোসেন অভিযোগ না নিয়ে কাল বিলম্ব করতে থাকেন। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা।

আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে পিবিআই কর্মকর্তাগণ নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৩ আগস্ট মামলার নথি ও নির্দেশ তারা পেয়েছেন। এদিকে সালিসের বিষয়ে জানতে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি হেবজু সর্দারের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা গর্ভপাত কেন করল? কিশোরী যে ইমামের ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা এর সত্যতা কী? দোষ তাদের আছে।’

ওসি লোকমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা গত ২৮ জুলাই থানায় অভিযোগ করতে আসেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করতে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিহাদ দেওয়ান বিশারাবাড়ী মসজিদে যান। এরপর কি হয়েছে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ না করে বলতে পারব না।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App