×

জাতীয়

চির উন্নত মম শির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪৬ এএম

চির উন্নত মম শির

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

তিনি ছিলেন চির বিদ্রোহী। দ্রোহ আর মানবতার জয়গানে উঁচুশির। বাঙালির জীবনে যিনি উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো ছড়ান। তার ক্ষুরধার লেখনী আজও বাঙালি জাতিকে প্রেরণা জোগায়। সাম্য আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার মর্মবাণী উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের শক্তি জোগায়। যিনি অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ধূমকেতুর মতো জ্বলে উঠে লিখেছিলেন ‘আমি মানি নাকো কোনো আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!’ কিংবা ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান..’। তিনি বাংলাসাহিত্য ও সংগীতে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। সেই চির বিদ্রোহী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) তিনি ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করছে তাকে।

সীমাহীন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও নজরুল কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা বিত্ত-বৈভবের কাছে। আজীবন লড়ে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও ছিলেন তিনি উচ্চকণ্ঠ। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার পক্ষে তিনি কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। বাংলাসাহিত্যকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। শুধু কবিতাতেই নয়, গান রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন ধ্রুপদি ধারার সঙ্গে।রাগনির্ভর গানকে ভেঙেচুরে সাধারণের কাছে করেছেন সহজবোধ্য ও শ্রুতিমধুর।

একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক এবং অভিনেতাও ছিলেন নজরুল। তার কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনা-পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই বাজেয়াপ্ত হয় তার লেখা, কারাবরণ করেন নজরুল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তার কবিতা ও গান ছিল বাঙালির অন্যতম প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে দেয়া হয় একুশে পদক।

কর্মসূচি : জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ভার্চুয়ালি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও আলোচনা। নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল সংগীতশিল্পী পরিষদ পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নজরুলের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য ডকুফিল্ম ‘বায়োগ্রাফি অব নজরুল’ এর ট্রেলার শুভমুক্তি উপলক্ষে অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি সকাল ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে একক বক্তৃতা প্রদান করবেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App