×

মুক্তচিন্তা

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বনাম আয়বৈষম্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ১০:৩৬ পিএম

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বনাম আয়বৈষম্য

ফাইল ছবি

আমরা অনেকেই জানি শুধু মাথাপিছু আয় নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যান্য সূচকেও বাংলাদেশ অভ‚তপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, যদিও নভেল করোনা ভাইরাস সব হিসাব-নিকাশ উল্টাপাল্টা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মাথাপিছু আয় বলতে সাধারণত কোনো দেশের মোট আয়কে জনপ্রতি ভাগ করে দিলে যা হয়, তাকে বোঝায়। জনগণের সর্বমোট ব্যক্তিগত আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। সাধারণত মাথাপিছু আয়কে প্রতি বছর টাকার এককে প্রকাশ করা হয়। মাথাপিছু আয় বেশি হওয়া মানেই যে কোনো দেশের মানুষ খুব ভালো আছে তা নয়। আমাদের অনেকের ধারণা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি মানেই দেশ অনেক উন্নত হয়েছে কিংবা মানুষের জীবনমানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেশি মানেই যে একটি দেশ খুব ভালো আছে তা কিন্তু নয়। ধরা যাক, একজনের আয় ৯ হাজার টাকা। আরেকজনের আয় এক হাজার টাকা। এর অর্থ দুজনের মাথাপিছু গড় আয় ৫ হাজার টাকা। তার মানে তো এই নয় যে দুজনেরই আয় সমান। সুতরাং এখানেই আয়বৈষম্যের বিষয়টি চলে আসে। সুতরাং মনে রাখতে হবে জাতীয় আয় বৃদ্ধিই উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন আরো অনেক বড় বিষয়। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সুষমভাবে সম্পদ বণ্টিত হচ্ছে কিনা সেটা মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তি। কারণ ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম। বাংলাদেশে দ্রুত আয়বৈষম্য বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিগত ১০ বছরে আয়বৈষম্য বেড়েছে ১০ থেকে ১৬ শতাংশ। কোন দেশের আয়বৈষম্য কতটা তা পরিমাপ করা হয় গিনি সহগ দিয়ে। গিনি সহগের মান শূন্য হলে বোঝায় যে, দেশের সবার মধ্যে চরম সমতা বিরাজ করছে; আর এর মান বাড়তে বাড়তে শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) বা বেশি হলে বোঝায় যে, দেশে আয়বৈষম্য চরমতম অবস্থায় পৌঁছেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিকরা জিডিপি বৃদ্ধির ব্যাপারে যেমন উৎসাহী এবং হৈচৈ করে থাকেন, যখন সাফল্য আসে কিন্তু বৈষম্য বৃদ্ধিতে তাদের উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় না। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চয় জিডিপি হিসাব করার সময় গণ্য করা হয়। কিন্তু কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে যে সর্বস্বান্ত হয়, সেটা কোনো বিবেচনায় আনা হয় না। একটি দেশকে আধা উন্নত বা উন্নত এই খেতাব দেয়ার আগে দেখা উচিত যে দুর্বল ও বঞ্চিত শ্রেণির নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের ভিত কতটা মজবুত হয়েছে; মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা। মাথাপিছু আয় বাড়ার খবরটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। সরকারকে আয়বৈষম্যের ব্যাপারটিতেও লক্ষ রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ হতে হবে সুষম সামাজিক উন্নয়ন। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ একটি সামাজিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা। গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App