×

সারাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর অকৃত্রিম ভক্ত জয়নালের বাঁচার আকুতি             

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ০৫:১২ পিএম

প্রধানমন্ত্রীর অকৃত্রিম ভক্ত জয়নালের বাঁচার আকুতি              

ছবি: প্রতিনিধি

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনিয়ে কর্মীদের মন চাঙা করতেন জয়নাল। বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে লঞ্চ থেকে নামার সময় ভেঙে যায় তাঁর পিঠের মেরুদণ্ড।

মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যাথা। ক্রেস্টে ভর দিয়ে কোনো মতে চলে। দুবেলা খাবার জোটাতে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে লেপ, তোষক আর বালিশের কভার সেলাই করতে হচ্ছে। চার ভাই-বোনের আর্থিক সংকট থাকায় কেউ পাশে নেই। স্ত্রী পুত্র পরিজন নেই। আর সে চেষ্টাও মন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মন থেকে সরাতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ধ্যানে জ্ঞানে কেবলই বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা।

কোথাও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারিত হচ্ছে কিংবা শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে এমন খবর জানতে পারলেই ব্যথা ভুলে ক্রেস্টে ভর দিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যায়। এমনই এক মানুষ শারীরিক অনেক কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করছে বাউফলেরর কালাইয়া বন্দরে। তার নাম জয়নাল আবেদীন (৪০)। পেশায় একজন দর্জি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অকৃত্রিম ভক্ত। এক সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনিয়ে কর্মীদের মন চাঙা করতো।

সেই জয়নাল এখন বিনা চিকিৎসায় মানবতের জীবনযাপন করছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনী জনসভা করতে শেখ হাসিনা বরিশালে আসবেন। এমন খবর পাওয়ার পর থেকেই তার মন সেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। বাউফল থেকে আ.স.ম. ফিরোজের নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতাকর্মী লঞ্চ, বাস ও ট্রলার নিয়ে বরিশাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জয়নালও বরিশাল যাওয়ার জন্য কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে দোতলা পারাবাত লঞ্চে উঠে পড়ে। প্রায় দের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে লঞ্চটি দুপুরের দিকে বরিশাল লঞ্চঘাটে পৌঁছে। অন্যান্যদের মতো জয়নালও লঞ্চ থেকে নামতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পা পিছলে লঞ্চের সামনে লোহার পাতের ওপর পড়ে যায়। এখানেই জয়নালের বিধিবাম হলো।

নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দেবেন না কি ক্ষুদ্র এক কর্মীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এই ভাবনাও ভাবার মতো সময় কারো হলো না। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে জয়নাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে শেখ হাসিনার ভাষণ শোনলো। আবার লঞ্চে ফিরে এসে গভীর রাতে পুনরায় কালাইয়া লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছালো। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে রাত কাটালো।

পরদিন স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসকরা মাজার সংযোগস্থলে মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে বলে জানান। চিকিৎসকরা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার কথা বলে কিছু ওষুধ দিয়ে জয়নালকে বিদায় করলো। শুরু হলো জয়নালের দুঃখের জীবন চলা। ভাই বোনেরা প্রথম একটু খোঁজখবর নিলেও এখন পাশে নেই। এক পর্যায়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান একটা ক্রেস্ট কিনে দেয়। এরপর থেকে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে জয়নাল চলাফেরা করছে।

জয়নাল জানায়, এখন আর দর্জি কাজ করতে পারি না। একটি চেয়ারে বসে বালিশের কভার, লেপের কভার ইত্যাদি সেলাই করি, সেখান থেকে যে কয় টাকা পাই তা দিয়ে কোনো মতে পেটের ভাত জোটাই। প্রতিদিন ব্যথার ওষুধ কিনতে হয়। টাকা থাকলে কিনি, টাকা না থাকলে ওষুধও খাই না।

কিন্তু জয়নাল শত কষ্টের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার কথা মুখ থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। মনো বলে, সে অবিচল। জয়নাল কোন পঙ্গু ভাতাও পায়না। চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে কিছু চাল ডাল দেন। সেটা দিয়ে কোনো মতে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারলেও কোন প্রকার চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। জয়নাল খুব ভরসা নিয়েই আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এক দিন আমাকে চিকিৎসা করাবেনই, কারণ সে আমার মা,  সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি এখনো বেঁচে আছি এবং বেঁচে থাকবো।

বাউফলে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের আঁতুরঘর বলে খ্যাত কালাইয়া বন্দরে বসবাসকারী আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী সাঈদ খান জানান, জয়নালের মুখে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনলে যে কেউ ভরকে যায়। মনে প্রাণে আওয়ামী লীগ করা এই তৃণমুল কর্মী জয়নালেরর কষ্টের কথা বিবেচনায় এনে তাকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

অন্যথায় অকালেই জয়নাল আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এস.এ, ফয়সাল আহমেদ মনির হোসেন মোল্লা জানান, আমারা আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে জয়নালের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নত চিকিৎসা দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App