×

সারাদেশ

নদীতে বিলীন হচ্ছে প্রকল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ১০:০৬ পিএম

নদীতে বিলীন হচ্ছে প্রকল্প

রাজিবপুর মোহনগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে নির্ধারিত স্থানে ঘর তৈরির আগেই নদীতে বিলীন হচ্ছে। ছবি: প্রতিনিধি।

নদীতে বিলীন হচ্ছে প্রকল্প

ছবি: প্রতিনিধি

তিন পাশেই নদী। মাটি ভরাট করা হয় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জন্য। এরপরই ভিটের মাটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের গচ্ছা যাচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ফায়দা লুটছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কয়েকটি বিভাগ। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অবগত করার পরও সেখানে তড়িঘড়ি করে চলছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ।

নদী ভাঙন এলাকায় কেন দেয়া হল প্রকল্পটি? আবার কেন সেটি মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে ? এসব প্রশ্ন নিয়ে এলাকায় সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। তবে প্রশাসনের নেই কোনো পদক্ষেপ। এমনই একটি প্রকল্প দেখিয়ে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চড়ই হাটি গুচ্ছগ্রামের অর্থ হরিলুটের পায়তারা করছে অসাধুচক্র।

৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া জানান, নদীর মাঝখানে গুচ্ছগ্রাম হবে আমাকেও জানানো হয়নি। তাছাড়া ইউএনও স্যারকে জাননোর পরও সেখানে কাজ হচ্ছে। কারণ ইউএনও সাহেব নিজে তাঁর সাবেক কর্মস্থল বদরগঞ্জ থেকে মিস্ত্রি এনে নিজেই ঠিকাদারি করছেন।

মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর ফকির পাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বাবুল মিয়া, কৃষক শমসের আলী ও লাল মিয়া জানান, যে জায়গায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি দেয়া হয়েছে তা আগামী ২ মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। অথচ উক্ত প্রকল্পটি নদীর পূর্বপাড়ে হলে সরকারি টাকা কাজে লাগত। উপকৃত হতো আমার মত নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রকল্পটি করার আগে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার পর তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রথম ধাপে মাটি ভরাট প্রকল্পের জন্য ১২৬ মে.টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। যা জুন মাসের মধ্যে সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। ১২৬ মে.টন চাল বিক্রি করে যার টাকার মূল্য হয়েছিল ৪০ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা।

[caption id="attachment_239272" align="aligncenter" width="700"] ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

অভিযোগে আরও জানা গেছে, প্রকল্প চেয়ারম্যান মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ড্রেজার মেশিন মালিক হামিদুল, সাইদুর ও শাহীন মিয়াসহ ৫ জনের সঙ্গে চুক্তি করে ৫ লক্ষ টাকার চুক্তির বিনিময়ে মাটি ভরাট কাজটি সমাপ্ত করেন। শেষ বিল উত্তোলনের আগেই ভিটার ৩ দিক থেকে বন্যায় ভেঙে যায়। প্রশাসন সরেজমিনে পরিদর্শন দেখিয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে শেষ বিল পাশ করে দেন।

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ ভূমি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান জানান, কোন জমির উপর গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে আমার সেটি জানা নেই।

গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম-উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে নদী ভেঙে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। তিন পাশে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদ। সেখানে ৩ একর জমির মধ্যে দেড় একর জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। বাকি দেড় একর জমিতে দ্বিতীয় দফায় মাটি ভরাট করা হবে। বর্তমানে ভিটের উপর ৮টি নদী ভাঙা পরিবারে ২৫ জন সদস্য অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।

সেখানে বসবাসরত চান মিয়া, মধু মিয়া,ওয়াসিম, মোতালেব, মহর আলী, ইব্রাহিম ও মাইদুল জানান, আমরা ৩ মাস আগে থেকে এখানে বসবাস করছি। এখানে এসেই দেখি ভিটের মাটি নদীতে ভেঙে গেছে।

মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, যখন প্রকল্পটি দেয়া হয়েছিল, তখন সেখানে নদী ছিল না। বন্যার কারণে একটি খাল বের হয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, কিছু অংশ বন্যার কারণে ভেঙে গেছে। আর প্রকল্পটি করার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম ও রংপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প কর্মকর্তার অনুমোতিতেই প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। আর যেটুকু ভেঙে গেছে সেটা মেরামত করা হবে। তা ছাড়া বর্তমানে ৩০টি ঘর তৈরির মাল সামানা ক্রয় করা হয়েছে। উপজেলাতে ঘর তৈরির কাজ চলছে। যার বরাদ্ধ প্রায় পোনে ৩ কোটি টাকা। কেন নদী ভাঙন এলাকায় গুচ্ছগ্রাম দেয়া হল? এবং কেনই বা পুনরায় কাজ হচ্ছে? এর তথ্য মেলেনি কোনো কর্মকতার্র নিকট।

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে কিছু অংশ ধসে গেছে। তা পূরণ করে দেয়া হবে। আপনারা যা তথ্য নিবেন পিআইও সাহেবের নিকট থেকে নিবেন।

রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানান, কোথায় গুচ্ছ গ্রাম হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে এলাকার লোকজন অভিযোগ করছে, সেটি নাকি ভেঙ্গে যাচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পটি সরকারের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোড় দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট। তা না হলে উক্ত ইউনিয়নের নাওশাল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পও নদী গর্ভে বিলীন হবে। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা গচ্ছা যাবে। আশ্রয়হীন হবে অসহায় মানুষগুলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App