×

স্বাস্থ্য

লাইসেন্স নবায়ন হয়নি অর্ধেকেরই, সময় শেষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

লাইসেন্স নবায়ন হয়নি অর্ধেকেরই, সময় শেষ

প্রতীকী ছবি

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক শর্ত শিথিলসহ আরো সময় চান মালিকরা

করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম ও দুর্বলতা একের পর এক প্রকাশ পেতে থাকলে নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। রিজেন্ট কেলেঙ্কারির পর দেখা যায়, পুরো দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বেশিরভাগেরই নিবন্ধন নেই। কোনো কোনোটির নিবন্ধন থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। অনিয়ম বন্ধে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে কোনোটি সিলগালা, কোনোটির কার্যক্রম বন্ধ এবং কোনোটিকে জরিমানা করা হয়।

প্রতিষ্ঠান মালিকদের ভোগান্তি কমাতে ২০১৮ সালে অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এতেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ৯ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করলে ওসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। সরকারের এমন কঠোর মনোভাবে হাসপাতাল নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়ন করতে আবেদনের হিড়িক পড়ে। তবে এখনো লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেনি এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যাও কম নয়।

রবিবার মাঝরাতের মধ্যে কতগুলো হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এর জন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। তবে এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশেরই লাইসেন্স নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হাসপাতাল শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২২১টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের আবেদন অসম্পূর্ণ ছিল সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৫১৯টিকে। ৪ হাজার ৩’শর বেশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। তথ্য মতে, নির্ধারিত সময় শেষ হলেও প্রায় অর্ধেক প্রষ্ঠিানেরই লাইসেন্স নবায়ন হয়নি।

বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সদস্যরা রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারি নিয়মকানুন কিছুটা শিথিলের আবেদন জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়নের জন্য সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো পূরণ করা অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন। আমরা বৈঠকে নিয়মকানুন কিছুটা শিথিলের আবেদন জানিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা ভোরের কাগজকে বলেন, সারাদেশ থেকে সব তথ্য এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। সব তথ্য এলে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তবে সিভিল সার্জন এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকদের পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়নের সময় বাড়ানোসহ কয়েকটি প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা সেগুলোও মন্ত্রণালয়ে জানাব। মন্ত্রণালয় থেকে যা সিদ্ধান্ত হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।

সরকারের কঠোর অবস্থান উল্লেখ করে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের আদৌ লাইসেন্স নেই, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, যতই সময় দেয়া হোক না কেন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য তা কখনোই পর্যাপ্ত হবে না। কারণ যারা এসব হাসপাতাল খোলেন এবং দিনের পর দিন লাইসেন্স বিহীনভাবে হাসপাতাল চালিয়ে যেতে পারেন তাদের খুঁটির জোর অনেক। আর সে কারণেই অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নবায়নের জন্য চাপ দিলেও বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সেটা পাত্তা দেয় না। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা থাকে। অনেক সময় প্রশাসনের মদতে কিংবা ম্যানেজ করেই তারা তাদের রমরমা বাণিজ্য করে যান এবং যাচ্ছেনও। এছাড়া এত হাসপাতাল পরিদর্শনের মতো জনবলও নেই অধিদপ্তরের।

প্রসঙ্গত; ২০১৮ সালের পর থেকেই অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স কিংবা তা নবায়নের বিষয়টি ঝুলে পড়ে। ওই বছর ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি ও নিবন্ধন নবায়ন ফি ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এছাড়া ওই একই বছর লিখিত আবেদনের পরিবর্তে অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি চালু হয়। এরপর থেকে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স কিংবা তা নবায়নে আগ্রহ হারায়। অনেকে আবেদন করলেও তা নির্ভুল বা সঠিক পদ্ধতিতে করতে পারেনি। অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক শর্ত পূরণ করতে না পারায় আবেদনও করেনি। আবার যারা আবেদন করেছে তাদের সেই আবেদন খুলে দেখাসহ বাছাই করার জন্য যে জনবল দরকার সেটিও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। একজন সহকারী পরিচালক ও ২ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলে হাসপাতাল পরিদর্শনের কাজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App