×

মুক্তচিন্তা

ধিক মানুষরূপী অমানুষদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২০, ০৮:০৭ পিএম

ধিক মানুষরূপী অমানুষদের

প্রতীকী ছবি

দিনের পর দিন নারী নির্যাতনের ঘটনা যেন বেড়েই চলেছে। গত দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল, দেখা যাচ্ছে মা ও মেয়েকে কোমরে দড়ি বেঁধে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর সেই দৃশ্য অবলোকন করছেন শত শত গ্রামবাসী। প্রথমে দেখলে মনে হবে তা যেন কোনো ছায়াছবির দৃশ্য। চোখের সামনে এমন নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে আর তা দেখেও শত শত মানুষের চুপ থাকা এটাই প্রমাণ করে বিবেকের যেন মৃত্যু ঘটেছে।

গত শুক্রবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে মা ও মেয়েকে গরু চুরির অভিযোগে এমন বর্বর কাজটি করেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম। সমাজের কতটা অধঃপতন হলে এমন জঘন্য কাজ সংঘটিত হতে পারে তা আর বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না। ওই মা ও মেয়ে সত্যিই গরু চুরি করেছেন কি করেননি, তা কিন্তু তখনো প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া কারো অপরাধ প্রমাণ হলেও তার বিচার করার দায়িত্ব জনগণ বা সেই জনপ্রতিনিধির নয়। দেশের আইন হলো- কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া। মা-মেয়ের ওপর যে নিষ্ঠুর ও অমানবিকতা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মা-মেয়ের ওপর নির্যাতনের এমন অমানবিক ঘটনা পুরো মানবসমাজকে লজ্জিত করেছে আর হৃদয়কে করেছে ক্ষতবিক্ষত।

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করার সংবাদও পাওয়া যায়। ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফির নৃশংস হত্যার মর্মন্তুদ ঘটনা দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে ঠিকই কিন্তু এরপরেও নির্যাতনের মাত্রা কমছে না।

সুন্দরভাবে বাঁচার কাম্য কার না রয়েছে। সবাই চায় এ সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে। সবার মতো দিল্লির সেই তরুণীটিও চেয়েছিল বাঁচতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেও পারল না। হায়! সমাজ কতই না নিষ্ঠুর আর কতই না জঘন্য! বছর কয়েক আগে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ৬ নরপশুর গণধর্ষণের কবলে পড়ে মেডিকেল ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা শুধু ভারতকেই নয়, বরং কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা উপমহাদেশ ও বিশ্ববাসীকে। দিল্লির সেই মেয়েটির সঙ্গে যে ধরনের নৃশংসতা করা হয়েছিল তা হয়তো কোনো জঙ্গলি পশুর দ্বারাও সম্ভব হবে না। শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের আজ হয়েছে কী? ধিক, শত ধিক এসব মানুষ রূপধারী অমানুষদের। তাই আমাদের প্রকৃত মানুষ হওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।

এসব ঘটনা শুধু দিল্লির নয় বরং আমাদের দেশেও ঘটছে। বছর কয়েক আগে ঢাকায় এক গারো তরুণীর সঙ্গেও তেমনি বর্বরতার ঘটনা ঘটেছিল, যদিও সে প্রাণে বেঁচে যায় তবে ঘটনা কিন্তু দিল্লির ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। নারীকে ধর্ষণ করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান নারী নির্যাতন মনে হয় একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬০১ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৪৬২ জন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৪ জন। ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৪০ জনের বয়স ৬ বছর এবং ১০৩ জনের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাতজন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১২৬ জন নারীর ওপর। গত ৬ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১০৩ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন নয়জন নারী। এছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন নারী এবং আটজন পুরুষ নিহত হয়েছেন।

একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে আর অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রে পারও পেয়ে যায়। প্রশ্ন হলো আর কতদিন এভাবে নারীরা নির্যাতিত হতে থাকবে? আমরা মনে করি নারী নির্যাতনকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে যতদিন আইনের আওতায় না আনা হবে ততদিন সম্ভব নয় নারী নির্যাতন বন্ধ করা। তাই আমরা দাবি জানাই, চকরিয়ায় মা-মেয়ের ওপর যে বর্বরতা করা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। শেষে এটাও বলতে চাই, সমাজের অপরাধ দূর এবং সমাজকে আলোকিত করার লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যেক পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের সদস্যরা যদি সচেতন হয় তাহলে শুধু নারী নির্যাতনই না বরং সব ধরনের অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। তাই আসুন, নিজে অপরাধ থেকে দূরে থাকি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি রাখি।

লেখক, ঢাকা।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App