×

সারাদেশ

শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি শিক্ষকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০, ১১:০২ পিএম

শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি শিক্ষকরা

ফাইল ছবি

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, উৎকোচ ছাড়া কোনো কাজ হয় না এ অফিসে। কোনভাবেই মিলছে না এর প্রতিকার। ধাপে ধাপে বাড়ছে চাহিদাও।

এমনই নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশিষ কুমার আচার্য, বারশত ইউনিয়নের পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবী চৌধুরী ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার) রঞ্জন ভট্টাচার্য্যর বিরুদ্ধে দুনীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাত সংক্রান্ত অভিযোগে অভিযোগ করেন বারশত ইউনিয়নের পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির পক্ষে সভাপতি ফজুল মোবিন চৌধুরী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার কথা থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজসে প্রধান শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে এসব টাকা জমা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের মেইনটেইনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা, ওয়াস ব্লকের নামে ২০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিক বাবদ ১০ হাজার টাকা, বিদ্যালয়ের স্লিপগ্রান্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা তহবিল বাবদ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি বরাদ্দের অর্থ বিদ্যালয়ের নামীয় একাউন্টে জমা হওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের স্লিপগ্রান্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা তহবিলে ৭০ হাজার টাকা ব্যতীত নিয়ম বর্হিভূক্ততভাবে প্রধান শিক্ষিকার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা হয়।

প্রতিটি বরাদ্দের বিপরতীতে আলাদা-আলাদা কমিটি গঠনের নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হলেও স্কুল ফান্ডে অর্থ জমা হওয়ার পূর্বেই প্রতিটি কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বরাদ্দের টাকা কিভাবে খরচ হলো তা কমিটির সদস্যরা জানেন না। অনেক চেস্টা তদবির করে শিক্ষকের শূণ্য আসন পূরণ করা হলেও অভিযুক্ত পরস্পর যোগসাজশে কমিটিকে কোন ধরণের অবহিত না করে নতুন শিক্ষক পদায়ন না করে দুইজন শিক্ষকের একজনকে বদলী এবং অপরজনকে ১ বছরে ট্রেনিং এ প্রেরণ করেন। বর্তমানে শিক্ষক শূণ্যতায় লেখাপড়াও ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানা গেছে এ অভিযোগে।

আরো জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার) রঞ্জন ভট্টাচার্য্য কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানানো হলেও তিনি বরাদ্দকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা প্রদানের নির্দেশ দিলেও পুরানো অর্থ বছর শেষে এবং নতুন অর্থ বছরেও এ টাকা জমা হয়নি। এছাড়াও উপজেলার ১১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ পাওয়া গেলেও অনেকে মুখ খুলতে নারাজ।

অভিযোগকারী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজল মুবিন চৌধুরী বলেন, আমি দুনীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগে জেলা প্রশাসক বরাবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষে লিখিত অভিযোগ করি। এ অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্য্যলয় থেকে আগামী বুধবার (২৬ আগস্ট) ডেকেছেন। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাসায় রয়েছি। তাই যেতে পারব না বলেছিলাম। যদিও বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে ভিডিও কলে কথা বলব বলেও জানিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবী চৌধুরী মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফোনে কথা বলা যাবে না। আপনি স্কুলে এসে দেখা করেন।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৮ মার্চ ২০২০ সালে সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে বুধবার (২৬ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্য্যলয়ে দু’পক্ষকে ডেকেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটি ও অভিযুক্তদের আসার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশিষ কুমার আচার্য মুঠোফোনে বলেন, আপনি নিশ্চয় মুবিনের বিষয়ে কথা বলবেন!’ আমার বিরুদ্ধে অনেক পত্রিকায় লিখেছে, এখান থেকে নিয়ে লিখে দেন? শিক্ষক অফিসার খুবই খারাপ, দুর্নীতি করি এসব লিখে দেন। এটায় আমার বক্তব্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App