×

সারাদেশ

বিচারের রায়ে তিন বোনকে থুথু খাওয়ানো হয়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০, ০৫:১৩ পিএম

গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়ের কোমরে দড়ি বেঁধে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার মধ্যেই আরেক ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর পাওয়া গেল কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে। অশ্লীল আচরণের অভিযোগ এনে একই পরিবারের তিনবোনকে প্রকাশ্যে থুথু খাওয়ানো হয়েছে। আর এ কাজটির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।

তবে ঘটনার বিষয় স্বীকার করে ওই শিক্ষক বলেছেন, তারা অপরাধ করেছে বলেই তাদের থুথু খাওয়ানো হয়েছে। তবে তাদের থুথু তো তারাই খেয়েছিল। অপর অভিযুক্ত আজাহার আলী ও মোকছেদ দেওয়ানীও একই সুরে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই তিন মেয়েকে গ্রামের সবাইর উপস্থিতিতে থুথু খাওয়ানো হয়েছে। তাদের অপরাধের বিচার করে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ আগস্ট সকালে রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছাটকড়াইবাড়ী এলাকায়। প্রভাবশালীদের ভয়ে গত নয়দিন ধরে বিষয়টি গোপন ছিল। তবে সোমবার এ ঘটনায় রৌমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

নির্যাতিত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিচারের নামে তিন বোনকে প্রকাশ্যে জোর করে থুথু খাওয়ানো হয়। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে আর লোকলজ্জায় তারা বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন। অপমানের শিকার তিন বোনের মধ্যে বড় বোন বিবাহিত। মেজ বোনের বয়স ১৬ আর ছোট বোনের বয়স ১২ বছর।

নির্যাতিতদের অভিযোগ, গেল ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পাড়েরচর গ্রামের খোকা ও রাকিব নামের দুই ছেলে ছাটকড়াইবাড়ি গ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে। সেই সুবাদে ছেলে দুটি নির্যাতিত অসহায় দিনমজুরের বাড়িতে এলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে।

পরে অবৈধ কাজে নির্যাতিতাদের বাড়িতে আসার অপবাদ দিয়ে ছেলে দুটির পরিবারের কাছে ১৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ভোরে ছেলে দুটির অভিভাবকরা টাকা নিয়ে ছাটকড়াইবাড়ি গ্রামে এলে নির্যাতিত পরিবারকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১৩ হাজার টাকা গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

এরা হলেন গ্রামে ইনতাজল, জহরুল হক, মনিরুজ্জামান, মোকছেদ আলী, আজাহার আলী, নজির মাস্টার, শাহজাহান ও দাঁতভাঙ্গা ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। তবে শুধু টাকা ভাগ করে নিয়েই ক্ষান্ত হননি তারা। পরদিন ১৫ আগস্ট সকাল ১০ টায় মাতবর জহরুল ইসলামের বাড়ির বাড়ির আঙিনায় বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন।

সেই সালিশে বিচার করা হয় ওই তিনবোনের। বিচারে গ্রামবাসীর সামনেই তাদের প্রথমে নাকে খত দেয়ানো হয়। এরপর জোর করে থুথু খাওয়ানো হয়। এমনকি ওই তিন বোনের মাকেও থুথু খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। গেল ১৫ আগস্ট ঘটনাটি ঘটলেও ভয়ে আর লজ্জায় গোপন রাখে নির্যাতিতরা।

পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত ২১ আগস্ট থুথু খাওয়ানোর ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান নির্যাতিতরা। তারা অভিযোগ করেন, অকারণে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ওরফে সামিউল, মোকছেদ দেওয়ানী ও আজাহার আলী বিচারের নামে তাদের হেনস্থা করেন। নির্যাতিত তিন বোন বলেন, লজ্জায় ও অপমানে আমরা এখন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App