পার্বতীপুরে বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ‘লিভিংস্টোন বাংলাদেশ’ নামে একটি বিদ্যালয় বিক্রি হতে যাচ্ছে। নজিরবিহীন এই অনৈতিক অপকর্মটি করছেন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক বিমল রায়। তিনি বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সেজে ইতোমধ্যে বিক্রির বায়নানামা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন কামরুল হুদা বাদশার নামে। ২৯ আগস্টের মধ্যে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বিদ্যালয়টি বিক্রি ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে।

বিদ্যালয়টির সম্পত্তি, স্থাপনা ও অবকাঠামো রক্ষার জন্য মন্মথপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মো.মাহাবুবার রহমান পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে ১৯ আগস্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

জানা গেছে, পার্বতীপুর শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের সন্নিকটে ২নং মন্মথপুর ইউনিয়নের রাজাবাসর মৌজায় ৪৫ শতক জমিতে লিভিং স্টোন বাংলাদেশ স্কুলটি অবস্থিত। ২০১১ সালে বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লিভিং স্টোন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরিয়ম সরেন এর নামে জমি ক্রয় করে অত্যাধুনিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়।

সেই সময় বিমল রায় লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজ খেয়াল খুশি মতো স্বুল পরিচালনা ও অর্থ ব্যয় করতে থাকায় এক সময় বিদেশি দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নেয়। অর্থ সরবরাহও বন্ধ করে দেয়। এ সুযোগে বিমল রায় ব্যক্তিগত লাভের আশায় কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে গত বছর নভেম্বরে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলত বিদ্যালয়টিতে। হঠাৎ করে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই বিপাকে পড়েন।

[caption id="attachment_238795" align="aligncenter" width="700"] স্কুল বিক্রির আইনগত বিজ্ঞপ্তি[/caption]

ওই সময়ের পার্বতীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান গত ১১ জুন লিভিংস্টোন স্কুল বাংলাদেশ পক্ষে সভাপতি বিমল রায়ের নামে স্কুলের জমি খারিজ (নামজারি) করে দেয়। তখনকার পার্বতীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান দাবি করেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে খারিজ দিয়েছেন, কোনো ব্যক্তির নামে খারিজ দেননি। এখানে সভাপতি কে সেটি বিবেচনার বিষয় নয়। তবে বিক্রির সময় দেখতে হবে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সভাপতি কি না।

এরপর ২৯ জুলাই কামরুল হুদা বাদশার নিকট স্কুলটি বিক্রি করার জন্য বায়নানামা রেজিস্ট্রি করে দেয়। কামরুল হুদা বাদশার পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হযরত আলী ২৯ আগস্টের মধ্যে উক্ত জমির দাবিদার যদি থাকে তাদেরকে আপত্তি জানানোর জন্য স্কুলের সামনের সড়কে আইনগত বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিয়েছে।

লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুলের একশ গজের মধ্যে বিদেশি মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত ১১৫ শয্যার অত্যাধুনিক ল্যাম্ব হাসপাতাল রয়েছে। ল্যাম্ব হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ও লেভেল ইংলিশ মিডিয়াম একটি স্কুল রয়েছে। ২০১১ সালে লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরিয়ম সরেন এর পরিবারের দু’জন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবিবার ভোরের কাগজকে জানান, বিমল রায় এক সময় ল্যাম্ব হাসপাতাল কম্পাউন্ডে স্থাপিত ‘ও লেভেল’ স্কুলের শিক্ষক ছিল। ল্যাম্ব হাসপাতালে বিদেশীদের আনাগোনা সবসময় ছিল। বিভিন্ন দাতা সংস্থার লোকজনও আসত। বিমল রায়ের সঙ্গে কয়েকটি বিদেশি দাতা সংস্থার লোকজনের গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে।

পরবর্তীতে চাতুরতার সঙ্গে স্কুলের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সেইসব বিদেশি ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুল প্রতিষ্ঠায় অর্থ সাহায্য দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। সে সময় স্কুল প্রতিষ্ঠায় মরিয়ম সরেনের পরিবার সার্বিক সহযোগিতা করেন। এটা বিদেশি অর্থ ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত,তাই কোনো ব্যক্তি তা বিক্রি করে দিতে পারে না। এটা অনৈতিক বলে ল্যাম্ব হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান।

মন্মথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগর আলী জানান, বিদেশি অর্থে লিভিং স্টোন স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত, কারো ব্যক্তিগত অর্থে নয়। বিমল রায় কথিত সভাপতি সেজে তা বিক্রি করে দিতে পারেন না। বিক্রি ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. শাহানাজ মিথুন মুন্নী জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। লিভিং স্টোন স্কুলের জমি, স্থাপনা ও অবকাঠামো বিক্রি বন্ধে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কে নোটিস প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।