×
Icon ব্রেকিং
ইরানের ভূখণ্ডে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, ইরানের বিভন্ন শহরে বিমান চলাচল বন্ধ

জাতীয়

ভয় কমেছে, ভয়াবহতা কমেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:০৮ এএম

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি

প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বোঝার উপায় নেই দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখন কোন পর্যায়ে। করোনাকালে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা, কালক্ষেপণ এবং করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন সময় দায়িত্বশীলদের বালখিল্য কথাবার্তায় সরকারের নির্দেশনা পালনে আগ্রহ হারিয়েছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বালাই নেই কোথাও। শুরুতে করোনা নিয়ে জনমনে যে আতঙ্ক ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক হয়ে এসেছে জীবনযাপন। অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সরকারও অফিস-আদালত খুলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা কম হলেও সংক্রমণের হার এখনো ২০ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ থেকে বেড়ে তা ১ দশমিক ৩৪-এ পৌঁছেছে। তাই সংক্রমণ বা মৃত্যুর হার কমেছে তা বলা যায় না। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা ভাইরাসের ৩৩তম সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩২তম সপ্তাহের তুলনায় বাংলাদেশে শনাক্ত বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সুস্থতা কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ সার্বিকভাবেই সূচকগুলোর বিশ্লেষণে এটি পরিষ্কার, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের গতি এখন ঊর্ধ্বমুখী।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ঈদের পর করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম তেমনটা হয়নি। তবে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি বলে আমি মনে করি। কারণ ঈদের সময় সংক্রমণ বেশি এমন এলাকাগুলো থেকে মানুষ গ্রামে গিয়ে করোনার বীজরোপণ করে এসেছে। আর তাতে তারা সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় তা চিহ্নিত হচ্ছে না। এখন উপসর্গহীন রোগী বেশি। আর এসব উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তিরা অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

জনগণের মধ্যে করোনার ভয় কেটে গেছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার ভয় কেটে গিয়ে মানুষ এখন কেয়ারলেস হয়ে গেছে। তারা আগের মতো আর ভীত নয়।

প্রখ্যাত অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল ভোরের কাগজকে বলেন, সেন্টার থেকে ভাইরাসটি পেরিফেরিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ ঈদের সময় মানুষের যাতায়াতের কারণে এই সংখ্যা বাড়বে এমনটা আগেই বলেছিলাম। এছাড়া সংক্রমণ বাড়ার আরো একটি কারণ আছে। সেটি হলো গত ৩ সপ্তাহ ধরে দেশে অস্বাভাবিক গরম ছিল। গরমে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সংক্রমণ বেড়েছে। তবে চলতি বছরের শীত মৌসুমে কিংবা তার আগেই করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে। তখন অনেকের মধ্যেই হার্ড ইউমিনিটি তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অণুজীব বিজ্ঞানী।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার কৌশল অনুসারে দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছিলাম তার একটি বড় সুফল হলো সংক্রমণের মাত্রা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তা না হলে পরিস্থিতি আরো অনেক বেশি ভয়ানক হতো। তবে এরপর দেশে করোনা সংক্রমণ কমাতে যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছিল তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই সংক্রমণ কমার বদলে গতি ধীর হলেও তা এখনো ঊর্ধ্বমুখীই আছে। ঝুঁকি কাটেনি বরং আরো বাড়ছে।

মেডিকেল এন্থোপলজি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে নির্দেশনাগুলো ছিল আমাদের দেশের মানুষ তা আগেও মানেনি। এখন তো তা আরো মানছে না। এছাড়া দেশে এখন যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সে তুলনায় পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম। সব ক্ষেত্রেই একধরনের ঢিলেঢালা ভাব এসে গেছে। মানুষ ধরেই নিয়েছে অদৃশ্য এই ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App