×

রাজনীতি

তারেকসহ ১৬ পলাতক আসামি ফেরানোর চেষ্টা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৪ এএম

তারেকসহ ১৬ পলাতক আসামি ফেরানোর চেষ্টা

তারেক রহমান।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৬ বছরেও অধরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৬ আসামি। গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষণার পরও ওই ১৬ আসামি পলাতক থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আসামিরা কে কোন দেশে অবস্থান করছে সে বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আইনি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওইসব দেশের সঙ্গে মিউচ্যুয়ার লিগ্যাল এগ্রিমেন্টের (পারস্পরিক আইনি চুক্তি) মাধ্যমে আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। যাদের আইনি চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যাবে না তাদেরকে ক‚টনৈতিক আলোচনাসহ অন্যান্য উপায়ে ফিরিয়ে আনা হবে।

সূত্র জানায়, গ্রেনেড হামলা হামলার অধরা এ ১৬ আসামির বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। তবে কয়েকজনের অবস্থান এখনো নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, তাদের চিহ্নিতের কাজ চলছে। দূতাবাসগুলোকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই যাদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি দেয়া অব্যাহত আছে।

পলাতকদের কেন ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না? জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, পলাতক ১৬ জনের মধ্যে প্রায় সবারই অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তাদের ফেরত না আনা পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে আইনগতভাবে তারেক রহমানকে কি ফেরত আনা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যর্পণ চুক্তি ছাড়াও দাগি আসামিকে এক দেশ আরেক দেশে হস্তান্তর করে। প্রত্যর্র্পণ চুক্তি নেই, না থাকায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি বা লিগ্যাল এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে আসামিদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্র জানায়, পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন সাউথ আফ্রিকায়, বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ আরব আমিরাতে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ ভারতে, দুই ভাই আনিসুল মোরসালিন এবং মুহিবুল মুক্তাকিন ভারতের কারাগারে, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে এবং লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও ইকবাল পাকিস্তানে অবস্থান করছে। হারিস চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, তারেক রহমানসহ পলাতক ১৬ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। এরমধ্যে তারেক রহমান ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ ইন্টারপোল প্রত্যাহার করেছে। তারেকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রেড এলার্ট জারি করা হয়। পরের বছরের ২৬ জানুয়ারি ইন্টারপোল জারিকৃত রেড নোটিস প্রত্যাহার করে। পরে বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে ইন্টারপোল কোন ভিত্তিতে রেড নোটিস প্রত্যাহার করেছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়।

এর জবাবে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইন্টারপোলের আর্টিকেল-৩ অনুযায়ী তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে কারো বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করলে তা প্রত্যাহার করা হয়। রাজনৈতিকভাবে তারেক ও কায়কোবাদকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই রেড নোটিস জারি করা হয়েছে বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে। তাই তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তারেক রহমান একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে জারি করা রেড নোটিস রাজনৈতিকভাবে নয়- এমন যুক্তি দেখিয়ে কাউন্টার জবাবও দিয়েছিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। তাই এবার মানিলন্ডারিং মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার চিন্তা করছে এনসিবি।

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, তারেক ও কায়কোবাদের বিষয়ে রেড নোটিস জারি করলেও তারা বিদেশে বসে লবিস্ট নিয়োগ করে রেড নোটিস প্রত্যাহার করেছে। তবে যথাযথ কাগজপত্র দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আবারো রেড নোটিস জারি করা হবে। এবার ব্যারিস্টার সমপর্যায়ের অথবা ল’ ফার্ম দিয়ে তথ্যপ্রমাণ করানো হবে। এজন্য গ্রেনেড হামলা মামলা যেসব ইউনিট তদন্ত করেছে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণাদি চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। পলাতক বাকি ১০ জনের বিরুদ্ধেও রেড নোটিস জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে যেসব দেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই সেই ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রতিনিধিত্ব বা প্রতিনিধির মাধ্যমে আসামিদের আনা সম্ভব বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলার নেপথ্যের নীলনকশা।

ঘটনার পর দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুই মামলার রায় একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয়। হত্যা মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই ৩৮ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার মোট আসামি ৫২ জন হলেও তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App