×

মুক্তচিন্তা

পুলিশি নির্যাতন ও মার্কিন রপ্তানি প্রসঙ্গ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫৫ পিএম

পুলিশের হাতে বিচারবহিভর্‚ত হত্যা প্রক্রিয়ায় যেসব ঘটনা ঘটছে তা জেনে নড়েচড়ে উঠছেন অনেকে, বেরিয়ে আসছে কিছু সত্য। অতীতে অনেক কিছু ধামাচাপা পড়লেও বর্তমানে কিছু ঘটনা কিছুতেই চেপে রাখা যাচ্ছে না। সমাজে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। যে কোনো ঘটনার বাবা-মা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন থাকে। যে কোনো ঘটনা এক বিরাট ঘটনা-পরিবারের সদস্য। একটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি সমপর্যায়ের ঘটনা রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত। ঘটনাগুলোর একটা প্যাটার্ন বা নকশা থাকে। অর্থাৎ আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট কোনো নকশার ফল। দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার যেসব ব্যাখ্যা দেন মাঝে মাঝে তা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। কারণ এসব ব্যাখ্যারও আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। যেমন বিচারবহিভর্‚ত হত্যাগুলোর মাঝেও থাকতে পারে কোনো আশ্চর্য মিল। প্রায়ই দেশে ও বিদেশে পত্রপত্রিকায় নানা কলামে ও সম্পাদকীয়তে এ ধরনের ঘটনার অবসান কামনা করা হচ্ছে। কথায় পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হলেও, বাইরের দেশের অভিজ্ঞতা বলে কার্যত পুলিশ ও জনগণ পরস্পরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে থাকে। বিশেষ করে যখন সমাজে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয় ও মানুষ প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামে। প্রতিবাদকারীদের ঠেঙানোই যেন পুলিশের বড় কাজ আর এই ধারণাই বহু মানুষকে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়েছে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন মূলগতভাবে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ। সব বর্ণ, ধর্ম ও জাতির দরিদ্র, পশ্চাৎপদ ও প্রান্তিক মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হয়েছে কেননা তারাই এর প্রধান শিকার। একইভাবে এ আন্দোলনকারীরাও হয়েছে ব্যাপক পুলিশি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। মিনিয়াপলিসে যে বাহিনীর এক শে^তাঙ্গ সদস্যের হাঁটুর নিচে ৯ মিনিট শ^াসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন জর্জ ফ্লয়েড সে সম্পর্কে মিনেসোটার জনপ্রিয় কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর এবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মিনিয়াপলিসের পুলিশ শিকড় পর্যন্ত পচে গেছে এবং এটা এখন একটা ক্যান্সার।’ তিনি আরো বলেন, পুলিশি কার্যক্রমে ১ হাজার ৯৩০ লাখ ডলার খরচ করা হয়, যা গৃহায়ন খরচের ৬ গুণ, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ১১ গুণ ও অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ব্যয়ের ৪৮২ গুণ। পুলিশের হাঁটুর নিচে শ^াসরুদ্ধ হয়ে ফ্লয়েডের আগে অনেকে এবং পরে আরো কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন, গুলি খেয়ে মারা গেছেন আরো বেশি। মানুষের চাপা পড়া ক্ষোভ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে আর পুলিশ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে দ্বিগুণ শক্তিতে। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বহু দেশে। উক্ত নিবন্ধে মিগ্যান ডে লিখেছেন, ‘মানুষ পুলিশি সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে। পুলিশ তখন পাশবিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদকারীদের ওপর, পুলিশের বিরুদ্ধে আরো ক্ষোভ জমা হয়, আরো প্রতিবাদকারী রাস্তায় নামে। এ হচ্ছে আদ্যিকাল থেকে চলে আসা গল্প।’ আজ রাষ্ট্রের পেটোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পৃথিবীর বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সবখানে পুলিশ বাহিনীর ভ‚মিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ফ্রান্সে ২০১৬ সালে পুলিশের হাতে খুন হন মালিয়ান বংশোদ্ভ‚ত অ্যাডামা ট্রেওর। ফ্লয়েডকে হত্যার পর ফ্রান্সে পুলিশি নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামে মানুষ। ৩০ মে ইসরায়েলি পুলিশের গুলিতে অটিস্টিক ইয়াদ হালাকের মৃত্যুতে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ হয়েছে জেরুজালেমের রাস্তায়। প্যালেস্টাইনবাসীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পুলিশি নির্যাতন সবচেয়ে সুপরিকিল্পিত, সুসংগঠিত ও নিয়মিত এক বর্বরতা। নিজ নিজ দেশে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, ইংল্যান্ড, ইতালি, বেলজিয়ামসহ বহু দেশে। এ প্রসঙ্গে আরো একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, বিশ^ব্যাপী পুলিশি নির্যাতন ছড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিকারকের ভ‚মিকা পালন করে। আলাদা করে একেকটা দেশে পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাণ্ড খুব একটা কমবে না যদি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন না আসে, যে পররাষ্ট্র নীতির মূল কথাই হলো যদি কোনো সরকার তার বশংবদ হয় তবে তাকে রক্ষা করা তা সে যতই দুর্নীতিপরায়ণ বা স্বৈরাচারী হোক না কেন। এ রকম বশংবদ সরকারকে রক্ষা করতে রয়েছে উদার মার্কিনি আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পুলিশি নির্যাতনের কাজে যার একটা বড় অংশ ব্যয় হয়। অতএব এককভাবে কোনো দেশের পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাণ্ডের ছবিটা পূর্ণ হবে না যদি এই মার্কিনি ভ‚মিকা আমলে নেয়া না হয়। ফ্লয়েড হত্যা ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের আচরণে কিছু পরিবর্তন হয়েছে ও কিছু সংস্কার হচ্ছে। যদিও তা খুবই সামান্য। কিন্তু দুনিয়ার কোথাও পুলিশি নির্যাতনের কমতি দেখা যায়নি। মরিয়ম কাবার স্বপ্নের সমাজ ও রাষ্ট্রের আবির্ভাব হতে এখনো অনেক দেরি। তবে সর্বত্র পুলিশের দায়িত্ব, কর্তব্য, ক্ষমতা ও মনোভাবে সংস্কার ও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন জরুরি। লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, শিক্ষালোক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App