×

পুরনো খবর

জোয়ারের ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড গাছপালা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২০, ১১:১১ এএম

জোয়ারের ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড গাছপালা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে সৈকতের ওপর আছড়ে পড়া ঢেউ ক্রমেই কুয়াকাটার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে। সৈকতের ব্যাপ্তি একই থাকলেও প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে সৈকতের পুরনো দৃশ্য। ছবি: ভোরের কাগজ।

সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সৈকতের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেট ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ঢেউয়ের তাণ্ডবে উপড়ে পড়ছে গাছপালা। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দোকান, ছাতা, চেয়ার। স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের গড়া স্বপ্নগুলো।

অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানি বেড়ে পুরো সৈকত এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। সৈকতে থাকা সরকারি পিকনিক স্পট ও নারিকেল বাগানের গাছগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাদ যায়নি বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেস্ট, ঝাউবন ও জাতীয় উদ্যান। ঝুঁকির মুখে মসজিদ-মন্দির, আবাসিক হোটেল, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও সদ্য নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক। সৈকত লাগোয়া কিংস হোটেলের একাংশ ইতোমধ্যে সমুদ্রের গর্ভে চলে গেছে। সমুদ্রের এমন রুদ্রমূর্তি গত ১০ বছরে আর দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিমত। গত ২-৩ দিনে ২০ থেকে ২৫ ফুট ভ‚ভাগ ভেঙে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা সত্তে¡ও আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে পাবলিক টয়লেট ও কিংস হোটেলটি সমুদ্রগর্ভে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সৈকত পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঝিনুক বিক্রেতা মো. সৈয়দ জানান, রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাওয়ার পর সকালে এসে দেখেন দোকানের একাংশ সমুদ্রের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু তার দোকানই নয়, এ রকম প্রায় অর্ধশত দোকান ও দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো রকম সংসার চালিয়ে আসছেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রের পেটে চলে গেছে। গতকাল বুধবার সকালে

সরেজমিন দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দোকানিরা দোকান সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢেউ এসে পড়ছে মহাসড়ক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পর্যটকরা সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ডকুমেন্টারি ফ্লিম মেকার স›দ্বীপ বিশ্বাস জানান, ১২ বছর ধরে তিনি কুয়াকাটায় আসছেন। কয়েক বছর আগেও প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সৈকত দেখেছেন। তিনি বলেন, কুয়াকাটার এখনকার চিত্র দেখে আমি হতভাগ। সব কিছু এখন স্মৃতির মতো। ঢেউয়ের ঝাপটায় নারিকেল, আম, তালগাছসহ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়তে দেখেছি। ভেসে যেতে দেখেছি ছোট ছোট দোকানপাট। তার মতে, কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেয়া দরকার। অন্যথায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এই বিরল সৌন্দর্য ভ‚মি অচিরেই আমরা হারিয়ে ফেলব।

কুয়াকাটা প্রেস ক্লাব ও কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনের (কুটুম) সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। বিভিন্ন সময় স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। দ্রুত এবং সময়োপযোগী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, সমুদ্রের ভাঙনরোধে পৌর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নেই। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পনা নিতে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পাউবো কর্তৃপক্ষকে বারবার এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App