×

সারাদেশ

শরীরে করোনা, মন জুড়ে জাতির পিতা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৭:০২ পিএম

শরীরে করোনা, মন জুড়ে জাতির পিতা!

শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী

শরীরে করোনা, মন জুড়ে জাতির পিতা!
শরীরে করোনা, মন জুড়ে জাতির পিতা!
শরীরে করোনা, মন জুড়ে জাতির পিতা!
প্রাণঘাতী করোনা দেয়াল তুলতে পারেনি পিতা আর সন্তানের ভালোবাসায়। শরীরে করোনা বাসা বাঁধলে কি হবে, মনের পুরোটা আকাশ জুড়েই যে জাতির পিতা। পনের আগস্টের সেই কালরাত স্মরণ করে তাই হাসপাতালেই আলো জ্বালালেন, তাজা ফুল আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। করোনা আক্রান্ত শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী আপন পিতার আসনেই বসিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা শেখ সাঈদ আলী। ছিলেন পল্লীগীতি শিল্পী ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ খুলনার প্রতিষ্ঠাতা। মা আলেয়া সাঈদ খুলনা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। সাঈদ দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান পলাশী। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পলাশী মেজো। মা ও দুই ভাইকে নিয়ে থাকেন নগরীর ১৩ নং সিমেট্রি রোডে এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। [caption id="attachment_238049" align="aligncenter" width="639"] শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী[/caption] করোনা মহামারিকালে গত ৬ আগস্ট তার আলেয়া সাঈদের করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। এর কদিন পরই উপসর্গ দেখা দেয় পলাশীর। করোনা উপসর্গ নিয়ে মা ও মেয়ে দুজনেই গত ৯ আগস্ট ভর্তি হন খুলনা নূরনগরস্থ করোনা হাসপাতালে (ডায়াবেটিক হাসপাতাল)। সেখানে আইসিইউ রুমের পাশেই চিকিৎসা চলছে তাদের। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই চলে আসে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের যে দিনটিতে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই বিভীষিকার দিনে জাতির পিতাকে চিকিৎসাধীন অবস্থাতে হাসপাতালেই শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন পলাশী। গেল ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহর রাত ১২টা এক মিনিটে হাসপাতালেই তাজা ফুল আর মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। অশ্রসিক্ত হয়ে পালন করেন শোক দিবস। জাতির পিতার প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানোয় সামিল হননি হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ। একা একাই অনেকটা নিভৃতে পালন করেছেন শোক দিবস। [caption id="attachment_238050" align="aligncenter" width="484"] শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী[/caption] পলাশী ভোরের কাগজকে বলেন, জীবনে ভাবতে পারিনি এমন ভাবে শোক দিবস পালন করবো। আমরা সব সময় ব্যক্তিগতভাবে ও সংগঠনের ব্যানারে ১৫ আগস্ট পালন করে থাকি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মনে করেছি যে, যত অসুস্থ থাকি না কেন শোক দিবস পালন করা দরকার। তিনি বলেন, এই দিনে যদি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা না জানাই তাহলে এই দেশকে অস্বীকার করা হবে। পলাশী কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি যখন এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি হাসপাতালে কেউ আমাকে সহযোগিতা করেনি। এমন কি শোক দিবস পালন করার সময়ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের কেউই এগিয়ে আসেননি। কান্না জড়িত কণ্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে পলাশী বলেন, আমার মা বেগম আলেয়া সাঈদ খুলনা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে কেউই কোনো খোঁজ খবর নেননি। [caption id="attachment_238051" align="aligncenter" width="631"] করোনা আক্রান্ত শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী[/caption] ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান পলাশীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা। এরপর থেকে ভূমিহীন এই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এলজিইডির একটি প্রজেক্টে হাজিরা ভিত্তিতে চাকরি করেন তিনি। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়া সত্ত্বেও এখনো চাকরি আত্তীকরণের তালিকায় নাম ওঠেনি পলাশীর। দুই ভাইয়ের গান বাজনার টাকায় চলে তাদের সংসার। পলাশীদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের জালালাবাদ ইউনিয়নের ছোটফা গ্রামে। খুলনা সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে মহিলা সম্পাদিকা পদে বিজয় হন পলাশী। পরে ১৯৯৮ সালে খুলনা জেলা ছাত্রলীগ মহিলা সম্পাদিকা পদে দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের (বসাপ) খুলনার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি খুলনা শিশু হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও খুলনা উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিসহ বেশ কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে জড়িত রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App