×

সারাদেশ

বন্যায় ভেঙে গেছে মাদ্রাসা, শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৭:০১ পিএম

বন্যায় ভেঙে গেছে মাদ্রাসা, শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত

ছবি: প্রতিনিধি

বন্যায় ভেঙে গেছে মাদ্রাসা, শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত

ছবি: প্রতিনিধি

অবশেষে ভেঙে গেছে ফলুয়ার চর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাটি। চলতি বছরে তৃতীয় দফায় বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার পানিতে মাদ্রাসাটি ৯ আগস্ট ভেঙে যায়। এ ব্যাপারে মাদ্রাসাটি মেরামতের দাবিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন।

এর আগেও, ঝুকিপূর্ণ টিনশেড ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ ছাপা হলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। দ্রুত মাদ্রাসাটি মেরামত করা না হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করানো সম্ভব হবে না।

শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, সংসারের হাল ধরতে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শিক্ষক-কর্মচারী। ভেবেছিলেন একদিন সুখের মুখ দেখবেন। কিন্তু চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হলেও সেই সুখের দেখা মেলেনি। একদিকে শিক্ষার্থীদের বেতন নেই। অন্যদিকে এমপিওভূক্ত না হওয়ায় সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা কিছুই পাননি। তাই তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাছাড়া আগেও মাদ্রাসায় বর্ষার সময় একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি উঠত। বেশি বৃষ্টি হলে পাঠদান চালু রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। ঘরগুলো মজবুত না হওয়ায় ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। আগেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে।

মাদ্রাসাটির পঞ্চম শ্রেণির সোমাইয়া, শান্তি খাতুন, সুজন মিয়া, আশরাফুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বৃষ্টির সময় বেশি সমস্যা হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে পানি উঠে। বই-খাতা ভিজে যায়। তারপরও এবারের বন্যায় আমাদের মাদ্রাসার ঘরটি ভেঙে গেছে। তাড়াতাড়ি মেরামত না করলে আমাদের লেখাপাড় করা খুবই কষ্ট হবে।

[caption id="attachment_238052" align="aligncenter" width="700"] ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, অসমাপ্ত টিনের ঘরে ঝুঁকি নিয়ে মাদ্ররাসার পাঠদান চালু রেখে ছিলাম। মাঝে মাঝে শিক্ষকদের সহায়তায় পাঠদানের জন্য ঘর নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে টিনের চালা, বেড়া, জানালা অকেজো হয়ে আছে। টাকার অভাবে ঘরটি মেরামত করতে পারেনি। চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। সর্বশেষ এবারের কয়েক দফা বন্যার পানিতে মাদ্রাসার ঘরটি ভেঙে যায়। আমরা মাদ্রাসার ঘরটি মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েছি। আশা করি, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসাটির দিকে সুনজর দিবেন।

অবসরে যাওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানালেন, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব থেকে নিজ উদ্যোগে ও বিভিন্ন দপ্তরে দিনের পর দিন ঘুরেও মাদ্রাসাটির কোনো উন্নতি করতে পারিনি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এমপিও’র চূড়ান্ত সমাধান। এমপিও হলে প্রতিষ্ঠানটি বেঁচে থাকবে। এই এলাকার গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, মাদ্রাসা মেরামতে ব্যাপারে আবেদন পেয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়ালেও এখনও মাদ্রাসাটি এমপিও হয়নি। শিক্ষার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী পাননি কোনো পারিশ্রমিক। অন্যদিকে কোনো ভবন না থাকায় অসমাপ্ত একটি ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ঘরে চলছিল নিয়মিত পাঠদান। ফলে একদিকে শিক্ষকরা যেমন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান গ্রহণ করছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে উপজেলার ফুলয়ারচর এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে প্রতিষ্ঠিত হয় ফলুয়ারচর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। শিক্ষকদের সহায়তায় মাদ্রাসায় একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়। বর্তমানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছে ১ শত ৬৭ জন। শিক্ষক ৫ জন ও ১ জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে ছিল দিগন্ত জোড়া মাঠ ও খোলামেলা পরিবেশ। প্রধান শিক্ষকের দক্ষতা ও নিষ্ঠাবান শিক্ষকের কারণে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় কয়েকবার ভালো ফলাফল করেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ রকম সব ধরনের শর্ত পূরণ করা স্বত্বেও প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরও মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়নি। ওই মাদ্রাসারটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ২০১৮ সালে বিনা বেতনে ও পেনশনবিহীন বয়সের ভারে অবসরে যান। এছাড়া আরেক সহকারি শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বয়সের ভারে মারা গেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App