×

সারাদেশ

কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৮:১৫ পিএম

কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি

ছবি: প্রতিনিধি

নৌকার টিকেট প্রত্যাশী ডজনেরও বেশি কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে ধানের শীষ প্রত্যাশীরা

নওগাঁ জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। ২৭ জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫১, নওগাঁ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ডজনেরও বেশি নাম শোনা যাচ্ছে। আর অপর দিকে কেন্দ্র নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টিরও মনোনয়ন প্রত্যাশীরও নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এলাকার মানুষের মাঝে আলোচনার বিষয় নির্বাচন ও প্রার্থীর। এ আসনটিতে বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে কেন্দ্র থেকে এখনো সাড়া পাননি বিএনপি এমন তথ্য বিএনপি নেতাকর্মীর সূত্রে জানা গেছে। দুটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনে মোট ভোটার প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮ শত ৮৬ জন।

বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালে ভোট যুদ্ধে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকার আমলের উন্নয়ন দাবি করে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এক সময়ের আলোচিত বাংলা ভাইয়ের দুর্গ রক্তাক্ত জনপদ বলে পরিচিত এই রাণীনগর ও আত্রাই দুই উপজেলা।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে ও বিভিন্ন কর্মীসভার আয়োজনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। নির্বাচনী মাঠ দখল এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন।

জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ২০০১ ও ২০০৬ সালে পুনরায় আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত ইসরাফিল আলম। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে আবারো বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।

এক সময় এ দুই উপজেলা জঙ্গি এলাকা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকটায় নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের প্রাণহানি চান না এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনরা।

উপ-নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁ-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের সহধর্মিনী সুলতানা পারভিন বিউটি, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমানের ছেলে নওগাঁ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা, রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান নূরুল, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট পীযূষ কুমার সরকার, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নহিদ ইসলাম বিপ্লব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ মো: রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়, সাবেক ভিপি ও নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাছিম আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন উপ-কমিটির সদস্য ড. মো: জাহেদুল হক জাহিদ, মেজর এস এম আব্দুল জলিল (অব:) সহ আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।

কেন্দ্র থেকে সাড়া না পাওয়ায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম পাওয়া যায়নি। এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রাণীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী গোলাম কবির ও আত্রাই উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো: মোফাজ্জল হোসেন এর নাম শোনা যাচ্ছে।

আসন্ন উপ-নির্বাচন নিয়ে এলাকার সাধারণ তরুণ ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সব বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন এলাকার উন্নয়ন করবেন ও যাকে তাড়া যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।

উল্লেখ্য, লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে গত ২৭ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের এমপি ইসরাফিল আলম। তিন বারের সাংসদ ইসরাফিল আলম। ১৯৬৬ সালে রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App