স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত যশোরের চৌগাছায় ৭১’র তালিকাভুক্ত সশস্ত্র রাজাকারের বাবা এবং পিস কমিটির কুখ্যাত সদস্যের নামে বাজারের নামকরণের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা বাজারকে চৌগাছার তালিকাভুক্ত রাজাকার মুজাহিদ আলীর পিতা ও পিস কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে ‘আহমদ নগর’ নামকরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং ওই বাজারকে ‘কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর’ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে দক্ষিণ কয়ারপাড়া বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী। মানববন্ধন শেষে তারা চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গ্রামবাসীর গণস্বাক্ষরকৃত একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চৌগাছা শহরের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন কড়ইতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন। মানববন্ধনে কলেজ ও স্কুল শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক গ্রামবাসী অংশ নেন।

লিখিত স্মারকলিপিতে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, ‘আমাদের গ্রামে চৌগাছা-যশোর রোডে কড়ইতলা নামক একটি চৌরাস্তা মোড় আছে। গত ২০০৯ সালে সেখানে গ্রামবাসী একটি বাজার বসায়। আমাদের পূর্ব পুরুষদের নাম রাখা কড়ইতলা মোড় বর্তমানে কড়ইতলা বাজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্থানীয় জনগণের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বাজার এবং বাজার সংলগ্ন দক্ষিণের সড়কটি সশস্ত্র রাজাকার (উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের করা রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীদের নামীয় তালিকায় মুজাহিদ আলীর নাম ৮ নম্বরে মুজাহিদ হোসেন হিসেবে রয়েছে) এর পিতা ও পিচ কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে করতে চায়। সেখানে তারা ‘আহমদ নগর’ নামে একটি সাইনবোর্ডও স্থাপন করেছে। যাতে লেখা আছে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন। আমরা উক্ত কড়ইতলা বাজারকে ‘‘কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর’’ নামে রাখতে চাই। স্মারকলিপিতে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রহিমা বেগম, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেনসহ গ্রামবাসীরা স্বাক্ষর করেন।

স্মারকলিপির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন, যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও চৌগাছা সদর ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন তারা।

২০১১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তালিকায় দেখা যায় ৮ নম্বরে রয়েছে মুজাহিদ হোসেন পিতা মৃত- আহম্মদ আলী, সাং কয়ারপাড়া। এই মুজাহিদ হোসেনই বর্তমানে মুজাহিদ আলী নামে পরিচিত। তার পিতা তৎকালিন পিস কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে ওই বাজারে ‘আহমদ নগর’ বলে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন ওই পরিবারের লোকজন। একই সঙ্গে গ্রামের রাস্তার শুরুতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে আহমদ আলী সড়কও নামকরণ করেছেন ওই পরিবার। সেখানে আবার বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদও লেখা হয়েছে। এটা নিয়ে দির্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের মানুষের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।