×

জাতীয়

১৫ বছরেও শেষ হয়নি বোমা হামলার বিচার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪১ এএম

১৫ বছরেও শেষ হয়নি বোমা হামলার বিচার

ফাইল ছবি

জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা মোট মামলা ১৫৯, বিচারাধীন মামলা ৪৭ ঢাকার ১৭ মামলার ৫টি বিচারাধীন

রাজধানীসহ সারাদেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা ঘটনার ১৫ বছর পূর্তি আজ। ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট একযোগে এ হামলার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের অবস্থান জানান দেয়। একই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ স্পটে নিজস্ব কায়দায় পরিকিল্পতভাবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে আর কোথাও নেই। তবে ১৫ বছরেও জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। এ ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলা হয়। পুলিশ ও র‌্যাব সাড়াশি অভিযান চালিয়ে এসব মামলায় জেএমবির সহ¯্রাধিক সদস্য গ্রেপ্তার করে। ১৬টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ৯৬টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সাক্ষী জটিলতার কারণেই মামলার নিষ্পত্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র‌্যাব জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। র‌্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়। জঙ্গিরা এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল। এই সেলের মাধ্যমে জঙ্গিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, বোমা হামলা মামলায় ৩০৫ জন আসামিকে আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সাজা ভোগের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। অন্য কোনো মামলা না থাকায় তাদের জঙ্গি পথ থেকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক জীবনযাপনে পুনর্বাসন করতে পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৭ জেএমবি সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্র জঙ্গিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। যারা সাজা ভোগ শেষে বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নজরদারিতে আছেন। এছাড়াও তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। সাজাভোগের পর কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে। এ খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, জেএমবির কার্যক্রম একেবারে শেষ হয়ে গেছে বলব না। তবে দেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যক্রম বিস্তারের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে এক বাড়িতে জেএমবির বোমা বিস্ফোরিত হলে ২ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ জেএমবির ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবির দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিটিটিসিপ্রধান বলেন, বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই জেএমবির। তাদের যে সক্ষমতা তা খুবই সামান্য। তবে তারা বসে নেই। তারা এখন সাইবার স্পেসকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। কোভিড আসার পর মানুষ ঘরে বেশি থেকেছে, ফলে জঙ্গিরা অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা বেশি চালিয়েছে। ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ১৭টি মামলার মধ্যে পুলিশ ৮টির ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ৯টি মামলার মধ্যে তেজগাঁও ও বিমানবন্দর থানায় করা দুটি মামলাসহ ৪টি মামলার রায় হয়ে গেছে। রায়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। বাকি ৫টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ চলছে। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমত পাওয়া যায় না। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেন না। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এরকম নানা কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লাগছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে এসব মামলায় বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেন আদালত। আশা করি, এ বছরের মধ্যে এই ৫টি মামলার বিচার কার্য শেষ হতে পারে। গত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুলাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাতশ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ৭ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুলাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর এই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App