×

স্বাস্থ্য

ব্যর্থতা ঢাকতেই করোনার বিদায় দেখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ১১:৩৭ এএম

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয় স্বাস্থ্য খাত। স্পষ্ট হয় দৈন্যদশার চিত্র। মহামারি পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের জন্য বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। গত শনিবার জাতীয় শোক দিবসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘ভ্যাকসিন আসুক বা না আসুক- কোভিড-১৯ বাংলাদেশ থেকে এমনিতেই চলে যাবে। ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কিনা জানি না।’ তবে কোন যুক্তির ভিত্তিতে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন তা স্পষ্ট করেননি।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারই যখন টালমাটাল অবস্থা; তখন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানের কাছ থেকে এমন মন্তব্য শুনে অনেকেই হতবাক। এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিব্রত জনস্বাস্থ্যবিদ, রোগতত্ত¡বিদরা। অনেকে বলছেন, ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে তা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি যেসব মন্তব্য করছেন তাতে সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আর তিনি যে এই পদের জন্য অযোগ্য সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

একই অনুষ্ঠানে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে গেছে, সুস্থতার হার বেড়ে গেছে, যা একটা বিরাট অর্জন বলেও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো বলেই হাসপাতালে ৭০ শতাংশ বেড খালি পড়ে আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। করোনায় আক্রান্তের গ্রাফ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। আর স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, আস্থাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ হাসপাতালের পরিবর্তে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, মন্ত্রী কেন এবং কীসের ভিত্তিতে এমন কথা বলেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে এমনি এমনি করোনা চলে যাবে না। একথা ঠিক কুরবানি ঈদের পর করোনার সংক্রমণ আমরা যেভাবে বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছিলাম তা দেখছি না। গ্রামগুলোতে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার।

মেডিকেল অ্যানথ্রোপলজি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা প্রতিরোধের প্রধান সেনাপতির কাছে এমন আশাব্যঞ্জক সংবাদ শুনে জাতি অবশ্যই হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে এবং মানুষ আরো দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের সব সূচকেই বাংলাদেশ ঊর্ধ্বগামী অথচ আমরা নির্বিকার। বারবার বলা হচ্ছে মানুষ বেপরোয়া। মানুষের সামনে যদি কোনো নির্দেশনা না থাকে বা ভজঘট নির্দেশটা থাকে তখন মানুষের বেপরোয়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকে কি?

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোসতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। মন্ত্রীর বক্তব্যের অবশ্যই গুরুত্ব আছে। তবে মন্ত্রীর যে বক্তব্য নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে- আমি মনে করি, এটি মন্ত্রীর অফিসিয়াল কোনো বক্তব্য নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা-ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে বলা শুরু করেছেন করোনা মোকাবিলা প্রায় সমাপ্তির পথে এবং বিজয় সমাসন্ন। এমন ধরনের আশার বাণী শুনতে ভালো লাগলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল কিন্তু বেড়েই চলছে। করোনাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ব্যক্তি বিভিন্ন সময় নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এতে নিজের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস সাধারণ কোনো জ¦র, সর্দি-কাশি কিংবা ডায়রিয়ার মতো রোগ না, যে এমনি এমনি চলে যাবে। এটা ভীষণ সংক্রামক রোগ। এটা যতদিন মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে থাকবে, ততদিন তা থাকবে। শুধু ভ্যাকসিন এলেই একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর তাই সারা বিশ্ব ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App