×

জাতীয়

তারের জঞ্জাল আর নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৮ এএম

তারের জঞ্জাল আর নয়

দৃশ্যমান ঝুলন্ত তার বরাবরই নগরবাসীর বিড়ম্বনার কারণ। রাস্তার মাথার উপর কিংবা ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার তার নগরের সৌন্দর্যহানির সঙ্গে ডেকে আনছে বিপদও। ছবিটি ১৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের মগবাজার এলাকা থেকে তোলা -ভোরের কাগজ

অভিযান স্থগিতের আহ্বান ব্যবসায়ীদের শৈথিল্যতার সুযোগ নেই : মেয়র তাপস

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সংযোগের তার (ক্যাবল) অপসারণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু এলাকায় ঝুলন্ত তার ও ক্যাবল অপসারণ করেছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতেই অনুমোদনহীন সব তার অপসারণ করা হবে। ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা মেয়রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিকল্প ব্যবস্থা না করে তার কাটার কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ তাদের। এদিকে, তার কেটে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় ১ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক। নগরবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনায় তার অপসারণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হোক। গত মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে অবৈধ সব তার অপসারণের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী গত সপ্তাহের বুধবার থেকে তার অপসারণ শুরু করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রথম দুদিন ধানমন্ডি, জিগাতলা, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও হাজারীবাগ এলাকায় এসব অবৈধ তারের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দুদিনে প্রায় ৪ কোটি টাকার তার কেটে ফেলা হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক। আর ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও মেয়রের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা না করে তার কাটা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। এরইমধ্যে সোমবার একটি অনুষ্ঠানে দক্ষিণের মেয়র এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বহির্বিশ্বের আকাশের দিকে তাকালে দৃষ্টির কোনো বাধা নেই। কিন্তু ঢাকা শহরে শুধু বাধা আর বাধা, তারের জঞ্জাল। বহির্বিশ্বে আমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ করে বলি, আহ্ কি সুন্দর! ঢাকায় এসে বলি, এত কেন জঞ্জাল! উপরে আবর্জনা, নিচেও আবর্জনা। তাই আমাদের প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সংস্থার আবর্জনা, জলাবদ্ধতার আবর্জনা, বর্জ্যরে আবর্জনাসহ উপরের দিকের তারের আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আবশ্যকীয় ছাড়া সব তার অপসারণ করা হবে। সেটা কোনো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের হোক বা সরকারি সংস্থার হোক। পর্যায়ক্রমে সব তার অপসারণ করা হবে। এই কার্যক্রম চলমান আছে, থাকবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এখানে শিথিলতার কোনো সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের মধ্যেই তারের জঞ্জালমুক্ত একটি নগরী ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে চাই। এদিকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিকাতলী, লালবাগ, পলাশী ও মুগদা এলাকায় তার কাটা হয়েছে। এতে ওসব এলাকার ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি টাকার তার কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেবাদাতারা। করোনা ভাইরাসের এই সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন যারা অনলাইনে কাজ করছেন। মুগদার বাসিন্দা সানোয়ার বলেন, লকডাউনের শুরু থেকেই বাসা থেকে অফিসের কাজ করেছি। এখনো বিভিন্ন কাজ করছি। হঠাৎ এলাকার সব তার কেটে দেয়ায় ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছি না। কাজেই মোবাইল ডাটা দিয়েই কাজ করছি। এতে ব্যয়ও বেশি। কাক্সিক্ষত সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। টিকাতলী এলাকার বাসিন্দা ওয়ারেছ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার দুই ছেলেমেয়ে অনলাইনেই ক্লাস করছেন। কিন্তু বুধবার এলাকার ইন্টারনেটের তার কেটে দেয়ায় দুদিন ধরে ক্লাস করতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ২৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সার্ভিস প্রোভাইডারের যদি সংযোগ স্থানান্তরের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়; তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া ক্যাবল সংযোগের কাজে তারা কারো স্থাপনা ব্যবহার করতে পারবে না। আইনের উপধারা ২৮ (২) অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি এই আইন লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে। এছাড়া অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদÐ অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করার বিধান আছে। কিন্তু কোনো অবকাঠামো তৈরি না করে বা বিকল্প ব্যবস্থা না করেই দেদার সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নিন্দা জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ আগের চাইতে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এখন এই লাইন কেটে দিলে মানুষই দুর্ভোগে পড়বে। আমরা মাটির নিচ দিয়েই তার টানব। ভাড়াও দেব। কিন্তু সেই অবকাঠামো তো নেই। তিনি বলেন, আমরা মেয়রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। দিনের পর দিন এত টাকার ক্যাবল যদি আমাদের কেটে ফেলা হয়। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবে? ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে মানুষ এখন বাসায় বসে কাজ করছে। ভার্চুয়াল মিটিং, টেলি মেডিসিন, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, অনলাইন ক্লাস সবকিছুই ইন্টারনেট ব্যবহার করেই করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইন্টারনেটকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা ইন্টারনেটের তারগুলো মাটির নিচ দিয়ে নিতে চাই, সেজন্য আমাদের সময় প্রয়োজন। এ পর্যন্ত গত কয়েক দিনে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্যাবল কেটে ফেলা হয়েছে। আমরাও মেয়র মহোদয়ের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের অনুরোধ তিনি আমাদের বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ করে দেবেন। আমরাও ক্যাবলগুলো সরিয়ে নেবো। গতকাল দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়ে আনু বলেন, তার কাছে আমরা আমাদের সমস্যা তুলে ধরেছি। আমরা একটা পাইলট প্রকল্প করার প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের বলেছি, আপনাদের পছন্দমতো একটা এলাকার নাম বলেন। আমরা ওই এলাকায় ক্যাবলগুলো কেটে ড্রেসিং করে মাটির নিচ দিয়ে নিতে চাই। সেটা যদি মেয়র মহোদয় সম্মতি দেন, তাহলে পুরো ঢাকা শহরেই সেভাবে কাজ করব। আমরা আপাতত ক্যাবলগুলো কাটা স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছি। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, নগর পরিকল্পনার স্বার্থে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য অবশ্যই ঢাকার মেয়ররা এসব তার অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অবহিত করে তাদের সুযোগ দেয়া উচিত। এতে তারা ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। গ্রাহকদেরও ভোগান্তি হবে না। একটা সমন্বিত পরিকল্পনায় কাজটা করা যেতে পারে। নগর কর্তৃপক্ষ হিসেবে মেয়র অবশ্যই বিষয়টি ভাববেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App