×

জাতীয়

অপরাধ না করেও দোষী হবেন বাড়িওয়ালারা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ১২:৩৪ পিএম

অপরাধ না করেও দোষী হবেন বাড়িওয়ালারা!

ফাইল ছবি

ফেসবুকে বন্ধু হয়ে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী নাইজেরিয়ার নাগরিকদের কয়েকটি চক্র। এছাড়া ক্যামেরুন, উগান্ডা ও কেনিয়াসহ আফ্রিকার আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকরা এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে পুলিশের বিশেষ অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতারণায় যুক্ত ৪০ নাইজেরিয়ান। এতদিন এ বিষয়ে কোনো নজর না দিলেও এখন নড়ে-চড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জানা গেছে, বেশির ভাগ নাইজেরিয়ান নাগরিকেরই বাংলাদেশে থাকার বৈধতা নেই। তিন মাসের ভ্রমণ ভিসায় এসে তারা পার করে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। ফেলে দিচ্ছেন তাদের পাসপোর্টও। নিজেদের মার্চেন্ডাইজার অথবা ফুটবল খেলোয়াড় পরিচয় দিয়ে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসাভাড়া নিচ্ছেন তারা। ওইসব বাসার মালিকদের বেশির ভাগই কোনো খোঁজ রাখছেন না- এসব বিদেশি নাগরিক কী কাজ করছে বা তাদের দেশে থাকার কোনো বৈধতা আছে কি না। মোটা অঙ্কের টাকা বাসাভাড়া পাওয়ায় আবার অনেক বাড়ির মালিক জেনে-বুঝেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন এসব অবৈধ বিদেশিকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এতে নিজেদেরই বিপদে ফেলছেন বাড়িওয়ালারা। তদন্তে যদি উঠে আসে, তারা যথাযথ নিয়ম মেনে ভাড়া দেননি সেক্ষেত্রে তারাও আশ্রয়দাতা হিসেবে শাস্তির আওতায় আসবেন। কারণ, পাসপোর্ট দেখে ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করেই বাসাভাড়া দেয়ার নিয়ম। তাই বিদেশিদের ভাড়া দেয়ার আগে নিয়ম মানতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা আরো বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সুফল হিসেবে বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য আদান-প্রদান ও বিনোদনসহ নানা কিছুর অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে তা আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সুযোগেও আরো সক্রিয় হয়েছে নাইজেরিয়ান দুষ্ট চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধু হয়ে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মানুষকে নিঃস্ব করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রতারণার ঘটনায় ডিবি, সিআইডি ও র‌্যাব যাদের গ্রেপ্তার করেছে, সবার প্রতারণার ধরন একই রকম। নাইজেরিয়ান চক্রটির কোনো সদস্য ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেকে আমেরিকা বা ইউরোপের কোনো দেশের নাগরিক দাবি করে মেসেঞ্জারে নানা আলাপের মাধ্যমে প্রেম বা বন্ধুত্বে আস্থা অর্জন করত। এরপর মূল্যবান উপহার পাঠানোর কথা বলে কাস্টমস ও কুরিয়ারের কথা বলে টাকা নিতো। বাংলাদেশি কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিও তাদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ ২১ জুলাই রাজধানীর মিরপুর থেকে প্রতারণার দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী তৃর্ণাসহ ১২ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর নাইজেরিয়ান নাগরিকদের প্রতারণা চক্র সম্পর্কে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। চক্রটির সদস্যরা তাদের অফিসে থাকা সাতটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে দুই শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই প্রতারণার কাজ করত। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রয়েছে তাদের সদস্য। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৭০টি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার অ্যাকাউন্ট সবসময় সক্রিয় থাকত। এই চক্রের অন্য ছয় সদস্য এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তারা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপর গত ২৫ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সিআইডির ধাওয়া খায় চক্রের চার সদস্য। তারা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া সাড়ে ৯ লাখ টাকা ফেলে পালিয়ে যায়।

সিআইডি সূত্র জানায়, এই চক্রের ১৮ নাইজেরিয়ান পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের এক নম্বর লেনের ৫ নম্বর অ্যাভিনিউয়ের ৭/৮ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে অফিস করেছিল। এসব নাইজেরিয়ানের বাংলাদেশে থাকার কোনো বৈধ কাগজ না থাকার বিষয়টি ওই বাড়ির মালিকের জানা ছিল এবং তিনি জেনে-বুঝেই কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।

সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার ভোরের কাগকে বলেন, এখন পর্যন্ত যতজন নাইজেরিয়ান নাগরিককে প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারা অফিস নিয়ে প্রতারণার কাজ করছেন। বাসাভাড়া করেও থাকছেন। মিরপুরে তারা দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিল। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। কারণ, পাসপোর্ট দেখে ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করে ভাড়া দেয়াটাই আইনানুগ বাধ্যবাধকতা। সে সময় ফরম পূরণ করা হলে অনিয়ম সহজেই ধরা পড়ত। এমতাবস্থায় তদন্তে যদি উঠে আসে, বাড়িওয়ালারা যথাযথ নিয়ম মেনে ভাড়া দেননি সেক্ষেত্রে কোনো কিছু না করেও তারা শাস্তির আওতায় চলে আসেন। তাই বিদেশি নাগরিকদের ভাড়া দেয়ার বিষয়ে সাবধান হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

কতজন আফ্রিকান অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছে? এ প্রশ্নর জবাবে রেজাউল হায়দার বলেন, আমাদের দেশে এরকম প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কতজন নাইজেরিয়ান, ক্যামেরুন, উগান্ডা ও কেনিয়াসহ অন্যান্য দেশের নাগরিক আছে তার সঠিক তথ্য জানা নেই। তবে বিষয়টি আমরা ইমিগ্রেশন বিভাগকে জানিয়েছি। তথ্য হাতে এলেই প্রকৃত ঘটনা বলা সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App