×

জাতীয়

খুনিদের মদদদাতা মোশতাক, সহযোগী জিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২০, ০৮:০৫ পিএম

খুনিদের মদদদাতা মোশতাক, সহযোগী জিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: ভোরের কাগজ।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তার রক্তের ঋণ শোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার স্বপ্নই ছিল বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সেই উন্নত জীবন দিতে যা যা করণীয় আমরা তা করব। তিনি এদেশের মানুষের জন্য আজীবন কষ্ট করে গেছেন। নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন। জাতির পিতা ও আমাদের পরিবারের সকলের মৃত্যুবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে এই প্রতিজ্ঞাই নেই, পিতা তোমায় কথা দিলাম, তোমার বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাব। এই বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। এই বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এটাই আমাদের শপথ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিয়ে সভাপতির বক্তব্যে এমন প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। দলটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর নেতারা বঙ্গবন্ধু ভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

জাতির পিতার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও মোশতাকের জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনীদের মদদদাতা ছিল খন্দকার মোশতাক আর তার সহযোগী জিয়াউর রহমান। যাকে প্রমোশন দিয়ে জাতির পিতা মেজর থেকে মেজর জেনারেল বানিয়েছিলেন। হত্যাকান্ডের পর বিবিসিতে কর্ণেল ফারুক আর কর্ণেল রশীদ সাক্ষাতকারে স্পষ্ট বলেছিল যে, তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল এবং তার মদদদেই তারা এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সেটা আরো প্রমাণ হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে (রাষ্ট্রপতি) হত্যার পর তার ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রেসিডেন্ট করা হয়নি। সংবিধান লঙ্ঘন করে খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করা হলো। আর মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াউর রহমানকে সেনা বাহিনীর প্রধান বানালো। এতেই প্রমাণ হয় যে খুনিদের সব ধরণের মদদ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু বেইমানরা ক্ষমতায় থাকতে পারে না। নবাব সিরাজদ্দোলাকে হত্যার পর বিশ্বাস ঘাতক মীরজাফর দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি হয়েই সে ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারী করে।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।  আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মাত্র ১৫ দিন আগে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। যারা আপনজন হারিয়েছিল তারা অনেকেই দেশে থাকতে পারেনি। কারণ এই হত্যাকান্ডের পরেও নিহতদের স্বজনদের খুনিরা বেরিয়েছিল। সকলেই আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের মাটিতে। রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। নিজেদের নামটাও ব্যবহার করতে পারিনি। আপনজন হারিয়ে রিফিউজি হিসেবে আমরা যখন বিদেশের মাটিতে অবস্থা করি। ঘাতকের দল তখন বিভিন্ন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের চাকরি পেয়ে আরাম আয়েশে জীবন-যাপন করে। এটা আমাদের দেখতে হয়েছিল। অথচ এদেশ স্বাধীন করে গেছেন আমার পিতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮০ সালে আমি যখন লন্ডনে যাই। রেহানা আগে থেকেই সেখানে ছিল। ১৬ আগস্ট লন্ডনে হত্যার প্রতিবাদে একটা শোকসভা হয়। সেখানে ব্রিটিশ এমপি স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি ও নোভেল লরেড সান ব্রাইডকে নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তদন্ত কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে স্যার টমাস উইলিয়ামকে বাংলাদেশে পাঠানো হয় জাতির পিতার হত্যাকান্ডের তদন্ত করতে। জিয়া তখন রাষ্ট্রপতি। উইলিয়ামকে তিনি ভিসা দেননি। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কেন তাকে ভিসা দিল না, কেন তদন্ত করতে দিল না। কারণ খুনের সঙ্গে সে জড়িত ছিল বলেই ভীত ছিল। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর রুলস এবং রেজ্যুলেশন ভঙ্গ করে জিয়াউর রহমান একদিকে নিজে যেমন রাষ্ট্রপতি হয়, অপরদিকে নির্র্বাচনও করে। এরপর প্রথমে হ্যা/না ভোট। তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এইভাবে সংবিধানকে সে ক্ষত-বিক্ষত করে।

উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর পর অবৈধভাবে মার্শাল জারী করে ক্ষমতা দখলকে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত। সেই সময় মার্শাল ল এর মাধ্যমে যত অর্ডিন্যান্স জারী করেছে, সেগুলি বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে একটা অশুভ-কালো থাবা থেকে রক্ষা করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসকে সম্পর্ণভাবে বিকৃত করা হয়েছিল। কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম থাকলে, সেটা মুছে ফেলা হতো।

স্বাধীনতা ধুলিস্যাৎ করতে জিয়াউর রহমান যা করে গিয়েছিল, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এসে আরো বেশি করে গিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশে একটা ভোটারবিহিন নির্বাচন হয়েছিল। কোনো দল সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নামকাওয়াস্তে কিছু দল জুড়ে দেয়া হয়। খালেদা জিয়া নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা দিল। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্ণেল রশীদ আর মেজর হুদাকে নির্বাচিত করে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এই খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এত দরদ কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচার করি। বিচারের রায় হয়। কিন্তু সেই খুনিদের মদদ দেয় খালেদা জিয়া। খুনিদের অনেকেই তখন বিদেশে। পাশা বিদেশে মৃত্যুবরণ করে। খায়রুজ্জামান চাকরি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ২০০১ সালে প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে মৃত পাশাকে প্রমোশন দিয়ে সমস্ত টাকা পয়সা তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেয়। খায়রুজ্জামানকে রায় ঘোষণার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে পুর্নবহাল করে প্রমোশন দেয়। জেনারেল এরশাদ এসেও এই কাজগুলি করত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে শত শত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের রিসার্চ সেন্টার দখল করে ১৫ টা কম্পিউটার, বই, তিনশ ফাইল, নগদ টাকা সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়, যেন আমরা কাজ করতে না পারি। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। যেখানে সেখানে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল। আর সেই হত্যার বিচার যেন না হয় সেজন্য খালেদা জিয়া ইনডেমনিটি দিয়ে যায়। তার স্বামী জাতির পিতার হত্যাকারীদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি দেয় আর খালেদা জিয়া নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে ইনডেমনিটি দেয়।

আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলার মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন। করোনা ভাইরাসের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের পাশে ছুঁটে গিয়েছে। সেইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীসহ আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করতে গিয়ে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে। কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছে। তাদের তালিকা তৈরীর কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দল থেকে এই তালিকা করা দরকার। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা সংস্থাকে আমরা এভাবে কাজ করতে দেখিনি। আমরা সেটা বিলিয়ে দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত।

মুজিব বর্ষ উদযাপন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক আশা ছিল- মুজিব বর্ষ উদযাপন করব। করোনার কারণে সেভাবে পারিনি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সারাদেশে বৃক্ষরোপন করা, রক্তদান কর্মসূচি আর সেইসঙ্গে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। তিনি বলেন, এবার বন্যায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারা যেন কেউ গৃহহারা না থাকে, সেজন্য যা করার আমরা করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App