×

সারাদেশ

এডিপির কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২০, ০৭:৪২ পিএম

এডিপির কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন

রাস্তার দুই ধারে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ছবি: প্রতিনিধি

এডিপির কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন

ছবি: প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপির) কাজ সম্পন্ন না করেই কৌশলে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে জুন মাসের শেষে এসব কাজের কৌশলে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন না করেই সম্পন্ন বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সঠিক সময়ে কাজ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পারইল ইউনিয়নের কয়েকটি কাজে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখনো শেষ হয়নি সেসব কাজগুলো। কিন্তু সরকারি কোনো নিয়ম না থাকলেও কৌশলে এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে বিডি জমা নিয়ে বিল দিয়েছেন। স্থানীয়রা দ্রুত এই অনিয়মের তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আওতায় পারইল ইউনিয়নের বিলকৃষ্ণপুর গ্রামের জায়ের মিস্ত্রীর পার্শ্বে দিয়ে কাঁচা ড্রেন পাকা করণ, বিলপালশা গ্রামের ভ্রমর মেম্বারের বাড়ি হইতে খোকা মৃধার বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তা সংস্কার করণ, বিলপালশা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে চান্দুর দোকান পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তা সংস্কার করণ, বিলকৃষ্ণপুর গ্রামের ফজলুর বাড়ি হতে জায়ের মিস্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ করার জন্য ট্রেন্ডারের মাধ্যমে কয়েক জন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এ চারটি কাজের বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। নিয়ম অনুসারে জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজ শেষ না করেই জুন মাসের শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অফিসের সঙ্গে যোগসাজসে কৌশলে বিল উত্তোলন করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেসব কাজের ভিন্ন চিত্র। জুন মাসের আগে সমাপ্ত করা হয়নি এসব কাজ। অথচ কাজ সম্পন্ন না করা হলেও জুন মাসের শেষের দিকে এসব কাজের বিল কৌশলে উত্তোলন করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদাররা নাম ছাম কাজ করে কাজ বন্ধ রেখে চলে গেছেন। এসব বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ্য নিতে গেলে কোনো কাজের তথ্য দেয়নি অফিস।

বিলকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল মমিনুল, খোরশেদ আলমসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ফজলুর বাড়ি হতে জায়ের মিস্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও করা হয়নি কাজ। ঠিকাদাররা নির্মাণ সামগ্রী রেখে চলে গেছেন। আর জায়ের মিস্ত্রীর পার্শ্বে দিয়ে কাঁচা ড্রেন প্রায় ৫০-৬০ ফিট পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে তাও নিম্নমানের। পুরোপুরি কাজ করা হয়নি। ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।

[caption id="attachment_237543" align="aligncenter" width="700"] ড্রেন পাকাকরণ কাজও অসমাপ্ত। ছবি: প্রতিনিধি[/caption] বিলপালশা গ্রামের রেজাউল, সাগর হোসেন, রফিকুল সহ কয়েকজনের সঙ্গে বললে তারা জানান, বিলপালশা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে চান্দুর দোকান পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তা সংস্কার কাজ সমাপ্ত করা হয়নি অসমাপ্ত হয়ে পরে আছে। রাস্তার কোথাও কোথাও নাম ছাম করা হয়েছে সংস্কার কাজ আবার কোথাও করা হয়নি। ভ্রমর মেম্বারের বাড়ি হইতে খোকা মৃধার বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তা সংস্কার করণ কাজেও একই চিত্র। নাম মাত্র কাজ করে ঠিকাদাররা চলে গেছে। যে পর্যন্ত কাজ করার কথা সে পর্যন্ত কাজ করেনি ঠিকাদার। অফিসের লোকজন তো এসব বিষয়ে দেখেও দেখে না। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা ও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে এসব কাজের ঠিকাদারদের সঠিক কোনো নাম ঠিকানা না দেয়ায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে।

রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) শাইদুর রহমান মিঞা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সঠিক সময়ে কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি। সরকারি টাকা ল্যাপ্স হয়ে যাবে বলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিডি জমা নিয়ে তাদের বিল দেয়া হয়েছে। কাজ শেষ করলে আবার ঠিকাদারদের বিডি ফেরত দেয়া হবে। এছাড়া এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন তিনি।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুনের বলেন, কাজ না করে বা কাজের আগেই বিল উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App