×

জাতীয়

বিন্দুতে সিন্ধু বঙ্গবন্ধু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২০, ০৫:১৫ পিএম

বিন্দুতে সিন্ধু বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু

বিন্দুতে সিন্ধু বঙ্গবন্ধু

শিশুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু

বিন্দুতে সিন্ধু বঙ্গবন্ধু

শিশুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু

শুধু একজন বিশ্বনেতাই নন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ এক ব্যক্তি মানুষ। হৃদয় ছিল আকাশের মতো উদার। মন ছিল এক মহাসাগরের মতো। মানুষের প্রতি ভালোবাসায় তিনি সব ত্যাগ করেছিলেন। মানুষ মানুষ করে তিনি সেই যে পথে বেরিয়েছিলেন আর ঘরে ফেরেননি। বাংলার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনে দিয়েছিলেন মানুষের হাতে। বিশ্বনেতাদের মূল্যায়নে তিনি ছিলেন হিমালয় মানব। আর সাধারণের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘আমাদের লোক’। তারই কিছু টুকরো স্মৃতির আলোয় উজ্জ্বল মহামানব।

এক. আলী আহমদ গানের বই বিক্রি করেন। সিনেমার গান। বইয়ের মলাটে নায়ক-নায়িকাদের ছবি থাকে। মোহাম্মদ আলী-জেবা। উল্টোদিকের বাড়িতে দুই বাঁধা কাস্টমার আছে তার। অল্পবয়সী দুই কিশোর কিশোরী। হাসিনা ও কামাল। টাকা না থাকলে বাকিতে বই নিয়ে যায়। ঠিক অনিচ্ছেতে নয়, ভয়েই দিয়ে দেন আলী। দোতলা বাড়ির ওই ভাড়াটিয়াকে নিয়ে তার মধ্যে একটা তীব্র আতঙ্কবোধ কাজ করে।

কিছুদিন পরপর এ বাড়িতে পুলিশ আসে। কিছুদিন পর পর গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ওই ভাড়াটিয়াকে। তার মানে কত বড় ডাকাত ওই লোক! ঈদের দিন আলী অবাক হন বাড়ির সামনে গাড়ির ভিড় দেখে। বিখ্যাত সব লোক, শিক্ষিত সব লোক, নামী সব লোক! এরা এই ডাকাতের বাড়িতে কি করে! আলী যান সেই বাড়িতে।

পাওনা টাকা চাইতে এসেছে ভেবে হাসিনা ও কামাল মাকে খবর দেন, বসতে দেন অতিথিকে। তিনি আসেন আলীকে নাশতা-পানি দেন। আর বলেন, ‘সবসময় তো হাতে টাকা থাকে না, ওদের বাবা প্রায়ই দূরে থাকেন। তারপরও ওরা যা চায় দিয়ে দিবেন, আমি টাকা দিয়ে দিব।’

[caption id="attachment_237338" align="aligncenter" width="700"] শিশুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু[/caption]

আলী বলেন, ‘আমি তো পাওনা চাইতে আসি নাই আম্মা। আসলে ফুটফুইটা দুই ছেলে মেয়ে আপনার, বাড়িঘর দেইখা বুঝা যায় বংশ ভালো। সাহেবরে বলেন আজেবাজে কাজ ছাইড়া ভালো হইয়া যাইতে। দুইদিন পরপর পুলিশ আইসা তারে বাইন্ধা নিয়া যায়, এইটা কি ভালো কিছু?’ উত্তরে আলী যা শোনেন তাতে তার চোখ ছানাবড়া। কোনো ডাকাত নন, ওই ভাড়াটিয়ার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান সামরিক জান্তার সার্বক্ষণিক এক মাথাব্যথা, যাকে যে কোনো ইস্যুতে চৌদ্দশিকের আড়ালে না রেখে স্বস্তি পায় না তারা।

আলী সেই প্রথম জানলেন শুধু ডাকাত নয়, দেশের মানুষের রাজনীতি করলেও পুলিশ ধরে। তিনি আগ্রহী হন। পল্টন মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে শোনেন ছয় দফার গান। সিনেমার বই লাটে ওঠে, এই লোকের কথা মানুষের কাছে পৌঁছানোর পণ করেন আলী। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের তখন পর্যন্ত করা বক্তৃতা সংকলন ৩৬ হাজার কপি বিক্রি হয় তার। (সংগ্রহ: অমি রহমান পিয়ালের লেখা থেকে)

দুই. ১৯৭৫ সালের ৭ মে। ৮ দিন আগে পিতা শেখ লুতফর রহমানকে হারিয়েছেন। শোকে মুহ্যমান সে সময়, তবুও নেতা কর্মীদের নিয়ে জাহাজে করে রওনা দিলেন টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে, পিতার চেহলামের জন্য। রাতের খাবার সেরে সিনিয়র নেতারা যে যে যার কেবিনে চলে গেলেন। কেউ কেউ ডেকয়েই বিছানা পেতে শুয়ে পড়লেন। জাহাজের ঢুলুনিতে মধ্যরাতে মাহবুব তালুকদারের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন তার মাথার নিচে একটি বালিশ। অথচ, সবাই যখন কেবিনে কিংবা ডেকে যার যার মতো শুয়ে পড়েছিলেন, তিনি খেয়াল করেছিলেন তার জন্য ঘুমানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। তিনি মাথার নিচে হাত দিয়ে একটা সোফায় টান হয়ে শুয়ে পড়েছিলেন যতোদূর মনে পড়ে। পাশেই এডিসি রব্বানী জেগে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এডিসি সাহেব, মাথার নিচে বালিশ আসলো কোথা থেকে?’

এডিসি রব্বানী জানালেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু দেখতে এসেছিলেন, সবার ঠিক মতো শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে কি না। আপনার কাছে এসে দেখলেন, মাথার নিচে হাত দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। বললেন, ‘মাহবুব এইভাবে শুইয়া আছে। একটা বালিশ ওরে যোগাড় কইরা দিতে পারলা না?’ এরপর উনি নিজের কেবিনে গিয়ে নিজেরই একটা বালিশ এনে আপনার মাথার নিচে দিয়ে দেন। মাহবুব সাহেব একইসাথে বিপন্ন ও বিস্মিত হলেন, কারণ তিনি জানতেন যে বঙ্গবন্ধু মাথার নিচে দুটি বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারতেন না। তিনি একবার ভাবলেন, বালিশটি ফেরত দিয়ে আসবেন কি না। আবার ভাবলেন, এতোক্ষণে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন, এখন ডাক দেয়া সমীচীন হবে না।

ভোরবেলা, সূর্য ওঠার আগেই মাহবুব সাহেব দেখলেন, জাহাজের ডেকে একটি চেয়ারে হেলান দিয়ে পা দুলিয়ে দুলিয়ে আবৃত্তি করছেন। মাহবুব সাহেবকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি রাত্রে ভালো ঘুম হইছে তো?’ মাহবুব সাহেব বললেন, ‘জ্বি না। ভালো ঘুমাতে পারি নি।‘ – ক্যান? আমি তো তোমার মাথার তলে বালিশ দিয়া গ্যালাম। ঘুম হয় নাই ক্যান? – ওই জন্যই তো ঘুম হয় নি। আপনি নিজের মাথার তলের বালিশ আমার আমার মাথায় দিয়ে গেলে ঘুম হওয়া কি সম্ভব? (সংগ্রহ- নিশম সরকারের লেখা থেকে)

[caption id="attachment_237330" align="aligncenter" width="700"] শিশুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু[/caption]

তিন. ১৯৬৫ সালের ৪ নভেম্বর। বঙ্গবন্ধু তখনও বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। ইত্তেফাক অফিসে মানিক মিয়া ‘রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের’ ডিকটেশন দেয়া শেষে তার ইজিচেয়ারে শুয়ে গল্প করছিলেন। এমন সময় শেখ মুজিব ঝড়ের বেগে প্রবেশ করেন অফিসে। এসেই বলতে থাকেন, ‘মানিক ভাই, আল্লার দোহাই, আমাকে বিদেশে যাওয়ার একটা ভিসা জোগাড় করে দেন। বাংলার মানুষের ওপর এই অত্যাচার ও বঞ্চনা আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি জাতিসংঘে অভিযোগ জানাবো। (সংগ্রহ- নিশম সরকারের লেখা থেকে)

চার. ১৯৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেলেন বরগুণায়। সকাল থেকে লাখ লাখ মানুষ কলেজ মাঠে ভিড় জমিয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে দেখবে বলে। প্রথম হেলিকপ্টার এসে নামলো। সেখান থেকে নামলেন সাংবাদিক মার্ক টালি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা তিনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরের হেলিকপ্টার থেকে নামলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে দেখে লাখ লাখ জনতা স্লোগান দিতে থাকে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। নিরাপত্তায় ছিলেন সহকারী তোফায়েল আহমেদ, দেহরক্ষী মুন্সীগঞ্জের মহিউদ্দীন, বরগুণার মন্ত্রী শাহজাদা আব্দুল মালেক খান।

হঠাৎ দেখা গেল, নিরাপত্তা বলয় ভেঙে হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর দিকে ছুটে আসছে! বঙ্গবন্ধুও জনতার দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। দেহরক্ষী মহিউদ্দিন এবং এসডিও সিরাজউদ্দিন আহমেদ দৌড়ে বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার গতিরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু মহিউদ্দীনকে ক্ষুব্ধ হয়ে সরিয়ে দেন এবং চিৎকার করে বলেন, ‘Let them kill me! কি অবিশ্বাস্য ভরসা বাংলার মানুষের প্রতি! কী অদ্ভুত ভালোবাসা দেশের মানুষের জন্য, তার সন্তানদের জন্য! (সংগ্রহ- নিশম সরকারের লেখা থেকে)

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App