×

মুক্তচিন্তা

আমাদের মুখ নেই, মুখোশ আছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২০, ০৭:১০ পিএম

ঘুমের এই সময়টা যদি তারা ব্যবসায়ে লাগান তাতে বিশ^বিদ্যালয়ের কী এমন ক্ষতি! যতক্ষণ না অপরাজিতা শারমিন ধরনের দুয়েকটা কেলেঙ্কারি ‘সেইম সাইড’ গোলযোগে ফাঁস হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভোরের কাগজের ‘অপরাজিতার অনিয়ম নতুন নয়’ প্রতিবেদনে দেখা যায় নকল এন-৯৫ লেখা মাস্ক ও নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ততোধিক নোংরা পরিবেশে গুদামজাত করে শারমিন জাহান আগেও জরিমানা দিয়েছেন।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বড় চাওয়া ছিল চাকরি-বাকরির দিকে না ছুটে বাঙালি যেন ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনের দিকে এগিয়ে আসে। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের সন্দেহের চোখে দেখতেন, মূর্খও মনে করতেন। বাংলায় মাড়োয়ারিরা ব্যবসায় ভালো করছে এবং বাঙালি ব্যবসায়ীদের ঝেটিয়ে বিদায় করছে কারণ প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতে তারা অন্তত নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করে না। বাঙালি নিজেদের সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতারণা করে যেতে পারে। প্রতারণা তাকে অর্থ-বিত্ত-প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক পরিচিতি, নেতৃত্ব অনেক কিছুই অকাতরে দিয়ে যায়, যেন এটাই মন্ত্রিত্ব প্রাপ্তির সোপান। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র যাদের দেখেছেন তারা বাঙালি পুরুষ প্রতারক। প্রতারণায় সুশিক্ষিত নারীও পিছিয়ে নেই, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। তা দেখিয়ে দিলেন ডাক্তার সাবরিনা এবং অচিরে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হতে যাচ্ছেন এমন একজন শারমিন জাহান। শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। লক্ষ্মীর বসতি যে বাণিজ্যে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতো সম্ভবত এই বিদ্যাবতী নারীও জানতেন। কিন্তু করণিকের কাজ এবং বাণিজ্য যে এক সঙ্গে চলার নয় শারমিন জাহান সম্ভবত তাও বুঝতেন তবুও তা চালিয়েছেন কারণ তার জ্যেষ্ঠ ও তার সমকালীন বেশ ক’জন বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিজীবী ব্যবসায়ে ডুবে আছেন। তাদের বেলায় যদি এটা গুনাহের কাজ না হয় তাহলে শারমিন জাহানকে হাতকড়া পরতে হবে কেন এবং দোনোমনো করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার একদা নেতৃত্বগুণে অর্জন করা চাকরি থেকে অস্থায়ীভাবে হলেও চ্যুত করবে কেন? যারা চাকরি দিয়েছিলেন তারা কি এমনটা ভেবেছিলেন যে নেতৃত্বগুণে তিনি তোফায়েল আহমেদ কিংবা মতিয়া চৌধুরীর প্রবাদপ্রতিম নেতৃত্বকে ছাড়িয়ে যাবেন এবং তখন তারা তাদের এই গৌরবময় রিক্রুটমেন্টের কথা গলা ফাটিয়ে সবাইকে বলবেন। কিন্তু তারা একবারও ভাবেননি যে তোফায়েল আহমেদ কিংবা ছাত্রলীগের তখনকার কোনো ডাকসাইটে নেতা কিংবা ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া চৌধুরী বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার হতে মরিয়া হয়ে উঠেননি। তারা তা আদৌ চাননি। চাননি বলেই তারা নেতা হয়ে উঠতে পেরেছেন। শারমিন চাকরি নিয়ে মুখোশ ব্যবসায়ে মন দিলেন। এমনিতেই বিশ^বিদ্যালয় পাস শিক্ষিত মানুষজন মুখোশ পরে থাকেন- কোনটা তাদের মুখ আর কোনটা মুখোশ সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শারমিন জাহানকে তার স্বজনরা দেশে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যশিক্ষা বিদ্যাপীঠ এবং হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধুর নামে যে প্রতিষ্ঠানের নামায়ন তাতে দু’নম্বরি এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের সুযোগ করে দিলেন। এই মাস্ক নিয়ে কেলেঙ্কারির সংবাদ গণমাধ্যম অনেক দিন ধরেই ছেপে আসছে, কোথায় প্রস্তুত হচ্ছে আর কে সরবরাহ করছে গণমাধ্যম তা জানাতেও কসুর করেনি। শারমিন জাহানের সরবরাহ করা মাস্ক বিএসএমএমইউর ডাক্তাররা ব্যবহার করেছেন, তাদের প্রতিবাদেই কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ব্যাপারটা হয়তো এমন হয়েছে- যাদের প্রশ্রয়ে সাহেদ, সাবরিনা, আরিফের মতো শারমিনও সৃষ্টি হয়েছে, তার সরবরাহ করা মাস্ক পরে তাদেরই কারো মেধাবী চিকিৎসক কন্যা কিংবা পুত্র করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগছেন আর তারা তখনো দুর্নীতির উপার্জন গুনে গুনে হাতে কড় ফেলে দিয়েছেন। শারমিন আদালতেও তার রাজনৈতিক পরিচয় ও গুরুত্বের কথা বলেছেন- কে জানে হয়তো তার ধারণা এই গুরুত্বই আবার তাকে নির্দোষ প্রমাণ করিয়ে দেবে। আদালতে অভিযোগকারী পর্যাপ্ত সাক্ষ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারলেই না তবে সাজার প্রশ্ন। না পারলে হেনস্তার জন্য উল্টো মামলা করে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার স্ত্রীসহ স্বজনদের মধ্যে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি বলেই হয়তো নিরাপত্তা মাস্কের বিষয়টি নজরে এসেছে। যেভাবেই তিনি ব্যবসায় লিপ্ত হয়ে থাকুন না কেন, তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট কণ্ঠে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেকেই তো ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাদের কেন ধরছেন না? ঠিকই বলেছেন, তারা হয়তো মাস্ক নয়, জুতার ব্রাশ ও কালির সাপ্লাইও, হারপিক ইত্যাদি সরবরাহ দিয়ে থাকেন। শতবর্ষে পৌঁছে যাওয়া শিঙ্গাড়া-সমুচা-চপ ও চায়ের স্বল্প দামে বিশ^রেকর্ড করা এই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নিরাপদ পোতাশ্রয় হয়ে উঠেছে কিনা এ প্রশ্ন অনেকেই করতে পারেন। শারমিন জাহান যখন গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন তখনো বিশ^বিদ্যালয়ের ভাষ্য- তিনি অনুমতি নিয়ে ব্যবসা (দু’নম্বরিই বলছে গণমাধ্যম, এর আগেও ধরা পড়েছেন) পরিচালনা করেছেন কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যখন কেলেঙ্কারি হয়েই গেল বিশ^বিদ্যালয় দায় না নিয়ে জানিয়ে দিল তিনি বিনা অনুমতির ব্যবসায়ী। যদি তিনি অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী- মাস্ক সরবারহকারী হতেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কী করত? তাহলে কি দু’নম্বরি মাস্ক জায়েজ হয়ে যেত? প্রশ্নটা কি কেবল অনুমতি পাওয়া বা না পাওয়ার? শততম বর্ষে অন্তত কিছুটা গৌরব উদ্ধারের ইচ্ছেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি থেকে থাকে তাহলে তারা যেন এই ব্যবসায়ীদের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করেন। আর কখনো ব্যবসায়ের অনুমতি দেবেন না এমন অঙ্গীকার করেন এবং যারা অনুমতিপ্রাপ্ত তাদের অনুমতি বাতিল করে দেন। তারপরও যারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান অনুগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাম কেটে দিয়ে তাদের চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য হতে পরামর্শ দিন। সেখানে তাদের ভবিষ্যৎ অধিকতর উজ্জ্বল, সিআইপি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিজীবীদের গুরুভাগই পেশায় শিক্ষক, পদের সঙ্গে অধিকাংশেরই প্রফেসর যোগ করা। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে থেকে অন্তত উপদেশ দিতে প্রফেসর পদ বহাল রাখা যাবে না এমন নিষেধাজ্ঞা তো নেই। এমনকি পদের জোরে বড় বড় ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়ে তহবিল শূন্যে নামিয়ে আনতেও তাদের কেউ কেউ বেশি সময় নেননি। একটা সমীক্ষা বিশ^বিদ্যালয়ই চালাতে পারে- তাদের প্রতিনিধি যখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও চেয়ারম্যান তখন তাদের হাত দিয়ে বাণিজ্যের সেবায় কত হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে যা ফিরে পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। সমীক্ষা মানে গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় না এত নতুন সংবাদ নয়- অবশ্য আমরা বলতেই পারি আমার কিউ এস র‌্যাংকিয়ের ধার ধারি না- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হাজারের বাইরে না লাখের বাইরে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাছাড়া গবেষণার টাকা তো প্রতি মাসেই বেতনের সঙ্গে যোগ হয়ে অ্যাকাউন্টে চলেই আসে। আজকাল অবশ্য শারমিনদের আমদানি করা মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে কিছু টাকা খরচ হয়ে যায় মানতেই হবে। গবেষণা না করলে অন্তত সে টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বই কিনুন এমন একটা হুকুমও যদি থাকত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের কাছাকাছি মানের ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রেস নামের বড় প্রকাশনা সংস্থা দাঁড়িয়ে যেত। তারাও চাইলে মাস্ক কিংবা ভেন্টিলেটর জাহাজ বোঝাই করে আনতে পারেন অথবা জিঞ্জিরার গুদামে মেইড ইন ইউএসএ সিল মেরে বুড়িগঙ্গার এপারে এনে বগুগুণ অধিক মূল্যে সরকারের হাতে তুলে দিতে পারেন। বাধা নেই, অনুমতি নিতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ কমবেশি কেরানির কাজ করে থাকেন- পদবি যত ভারিই হোক। ডিএল রায়ের ধনধান্যে গানের ওপর ভর দিয়ে সতীশচন্দ্র লিখেছেন : এমন আপিস কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল বুদ্ধি হানি করা আমার কর্মভ‚মি। ঘরে ঘরে ভরা বাবু। কলম পিষে দেহ কাবু এপ্রেন্টিস বাড়ে তবু পালে পালে গিয়ে তারা টুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে টেবিল মাথায় দিয়ে। ঘুমের এই সময়টা যদি তারা ব্যবসায়ে লাগান তাতে বিশ^বিদ্যালয়ের কী এমন ক্ষতি! যতক্ষণ না অপরাজিতা শারমিন ধরনের দুয়েকটা কেলেঙ্কারি ‘সেইম সাইড’ গোলযোগে ফাঁস হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভোরের কাগজের ‘অপরাজিতার অনিয়ম নতুন নয়’ প্রতিবেদনে দেখা যায় নকল এন-৯৫ লেখা মাস্ক ও নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ততোধিক নোংরা পরিবেশে গুদামজাত করে শারমিন জাহান আগেও জরিমানা দিয়েছেন। কর্ম বলি অপকর্ম বলি, আসলে অনুমোদনও নিতে হয় না। কেবল অবহিত করলেই হয়। প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন, মাড়োয়ারিরা অন্তত বাণিজ্যে স্বজাতিকে ঠকায় না। আমাদের শুরুটা স্বজাতি দিয়েই- এবার কেলেঙ্কারি আন্তর্জাতিক মানে গিয়ে ঠেকেছে। ১ কোটি ডলার আগাম নিয়ে বাংলাদেশের মাস্ক প্রস্তুতকারী বিদেশে প্রথম দফায় যে ২১ লাখ ডলারের চালান পাঠিয়েছে তা কেবল প্রত্যাখ্যাতই হয়নি, সেখানকার কোম্পানি অবিলম্বে টাকা ফেরতও চেয়েছে। বাংলাদেশ যখন চিংড়ি রপ্তানি করে দু’পয়সা উপার্জন করতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের রপ্তানিকারক চিংড়ির ওজন বাড়াতে চিংড়িতে মোলায়েম দেহের ভেতর একটি করে ধাতব পাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ রকম কাণ্ড আমাদের পক্ষেই করা সম্ভব। প্রফুল্লচন্দ্র রায় শিক্ষিত বাঙালিদের ব্যাপারে এ কারণেই সন্দিহান ছিলেন। ম্যাকলে সাহেব আমাদের যেভাবে উপস্থাপন করেছেন শঠতায় ষোলকলা পূর্ণ মানুষ হিসেবে কখনো কখনো প্রতিবাদ করে বলতে ইচ্ছে করত, ঠিক বলেননি গোরা সাহেব, কিন্তু সেই ইচ্ছে উবে গেছে। কারণ তিনি ভুল বলেননি। বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও চাকরি করে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে না, মুখোশের ব্যবসা তো মোটেই নয়- এমন একটা হুকুম শতবর্ষী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় অবশ্যই জারি করুক। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অভিভাবক এবং সব শুভানুধ্যায়ী চাইবেন, এতটুকুও সন্দেহ নেই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে যে অহংকার করি মুখোশের দু’নম্বরি ব্যবসা তার সঙ্গে একটুও খাপ খায় না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মুখ সৃষ্টি করুক, আর মুখোশ নয়।

গরু স্যার বকরি স্যার সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব কিংবা একটি সরকারি কলেজের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক যদি গরু স্যার ও বকরি স্যার হিসেবে সম্ভোধিত হতে চান তাহলে ঠেকায় সাধ্য কার! অতিরিক্ত সচিব অত্যন্ত সতর্ক বলে তার গরুর ব্যবসা জনসমক্ষে আনতে চাননি। সাভার অঞ্চলে কোথাও গরু মোটাতাজা করতে কুরবানি এলে তার পুঁজি, মেধা, উদ্যোগ ও শ্রম পুষিয়ে নিয়ে হাট থেকে লাভের টাকা তুলে নিতেন। তার সহকর্মীদের কেউ কেউ জানতেন এবং সহকর্মীদের কেউ কেউ নাক সিটকাতেন, কেউ কেউ বলতেন সরকারের গলা টিপে টাকা বের করার চেয়ে এটা বরং ভালো। কিন্তু ১৯৮৮-এর বন্যায় গরুর খামারের ভেতর গরুডোবা পানি, কম দামে গরু ছেড়েও দিতে চাচ্ছেন না, ঈদ আসুক। অগত্যা তিনি খামারের সব গরু এনে তুললেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আবাসনের সামনের খোলা জায়গায়- কাহকাহশান আসিয়ান এ ধরনের একটি চত্বরে। গরুগুলো ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক এটা সবাই চেয়েছেন, এমনকি সরকারের লোকজনও। কিন্তু এই চত্বরে নয়। বিপন্ন গরুগুলোর যথাযথ সেবা-যত্ন এবং আঙিনা পরিষ্কার রাখার কাজটি করতে পারলেন না বলে এই চত্বরের সহবাসীরা তার নামের আগে গরু যুক্ত করলেন এবং পিয়ন-দারোয়ানদের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠলেন গরু স্যার হিসেবে। অতিরিক্ত সচিব কি গরুর ব্যবসা করতে পারবেন না? সরকারের অনুমতি নিলেও না? রাষ্ট্রীয় পদ অধিকার করে কোনো ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ কারো নেই, আর এ ধরনের আবেদনে অনুমতি পাওয়ার প্রশ্নই আসে না বরং আবেদনই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ করে দেবে। তারপরও বেনামে কেউ কেউ অন্তত কুরবানির সময় গরুর ব্যবসা করে গরু স্যার সম্মানে ভূষিত হতে ইতস্তত করেন না। মাঠপর্যায়ে চাকরিকালীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অনুযোগের স্বরে তার একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের কথা বললেন ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত তিনি ছাগল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তার খামার নেই, কেনাবেচা করেন। তিনি ছাত্র নেতাদের একজনকে লাভ থেকে কিছু অর্থ দেন, পরীক্ষাতেই কিছু ফাও নম্বর দেন। এই নেতার কারণে স্থানীয় চাঁদাবাজরা তেমন সুবিধে করতে পারেন না। এই নেতার বিরুদ্ধপক্ষের ছাত্ররা সুদর্শন এই শিক্ষকের নাম দিয়েছে বকরি স্যার। শুধু এখানেই শেষ নয়, তারা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা বিভাগের বহু কর্মকর্তার কাছে ‘বকরি স্যার বৃত্তান্ত’ পাঠিয়েছে; স্থানীয় প্রশাসনের চাকরিজীবী হওয়ার কারণে জ্ঞাতার্থে অনুলিপি আমাকেও দিয়েছে। আমি অধ্যক্ষ মহোদয়কে বললাম, আপনার কর্তৃপক্ষকে বলে বকরিশূন্য কোনো স্থানে বদলি করিয়ে দিন। তিনি জবাবে বললেন, বকরির খুঁটির জোর শক্ত। সেই প্রাচীন প্রবচনটিই সত্য। ছাগল নাচে খুঁটির জোরে। করোনাকালে দেশ গরু স্যার, বকরি স্যার এবং সর্বোপরি মুখোশ স্যারদের কবল থেকে মুক্ত হোক এ প্রার্থনা দেশদ্রোহের সমার্থক হওয়ার কথা নয়।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App