×

বিশেষ সংখ্যা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ স্বপ্নের শুরু যেখানে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২০, ১১:৩১ পিএম

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ স্বপ্নের শুরু যেখানে

মিশরে দেয়ালচিত্র দর্শন পাশে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী আজিজ মুহম্মদ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ স্বপ্নের শুরু যেখানে
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ স্বপ্নের শুরু যেখানে
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আজও আমরা বাংলাদেশিরা এ দেশটির ইতিহাস, পরিচয় নিয়ে বিভক্ত হই। আমাদের মধ্যে লড়াই চলছে। অথচ এ বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়েই যে পরিচয় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল সেটি নিয়ে পরবর্তীতে এদেশের নাগরিকদের মনে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়। ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে যে মুক্তির সংগ্রাম হয়েছিল সেই যুদ্ধকে অস্বীকার করা মানেই এদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। সেই যুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা মানেই এদেশের গণমানুষের স্বাধিকারের দাবিকে অস্বীকার করা। আর কারা এই অস্বীকারের রাজনীতিকে লালন করে আসছে সেটিও আজকে আমাদের সামনে পরিষ্কার। মূলত একটি গোষ্ঠী ছিল যারা ধর্মকে কেন্দ্র করে ভাগ হওয়া ঐতিহ্যকে লালন করেছে। তাদের কাছে মানুষের চেয়ে বড় পরিচয় ধর্ম। সেই ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতিকে তারা ব্যবহার করেছে নিজেদের হীন স্বার্থে। ইতিহাস বলে, যারা পাকিস্তানের নীতি আদর্শকে বুকে লালন করেছে তারাই বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। যারা চাঁদ তারার পতাকার রঙ দিয়ে নিজেরা সাজতে চেয়েছিল তারাই মানতে পারেনি লাল সবুজের পতাকাকে। সঙ্গত কারণেই তারা মেনে নেয়নি এদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেও। এর পেছনের কারণটি একদম পরিষ্কার। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু মানেই পাকিস্তানের সর্বনাশ। সুতরাং এই বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রেখে পাকিস্তানের আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা মানে মরুভ‚মির বুকে সাগরের অস্তিত্বকে কল্পনা করা। আজকে যারা বাংলাদেশের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের এই হীন কর্মটি কোনোভাবেই করতে পারতো না যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন। কারণ তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্র জন্ম নেবার আগেই পরিচয় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল সেই পরিচয় প্রতিষ্ঠার কাজটি। জাতির পিতা জানতেন রাষ্ট্রকে আগে সংজ্ঞায়িত করতে হবে যেখানে প্রতিষ্ঠা পাবে জাতিসত্তার পরিচয়। যে নীতির আলোকে চলবে বাংলার শাসন কার্যক্রম। যে চার মূলনীতির আলোকে গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশকে যার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান সেই নীতি থেকে আজ আমরা অনেকটাই দূরে সরে গেছি। নতুন প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি অসহায় হয়ে পড়ি যখন মনে পড়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই নৃশংস কাহিনী। পাকিস্তানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার খায়েসে সেদিন এদেশীয় পাকিস্তানি এজেন্টরা হত্যা করেছিল জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। তারা জানতো বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রেখে তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন কোনোদিনই পূর্ণ করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে খুব বেশি জানার সুযোগ ছিল না আমাদের। পাঠ্যপুস্তকে সামান্য কিছু ঘটনার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। জাতির পিতার নাম উচ্চারণকেও করা হয়েছিল নিষিদ্ধ। এমন এক আবদ্ধ পরিবেশে বেড়ে উঠেছে কয়েকটি প্রজন্ম। সিনেমা, নাটক, গল্প, উপন্যাস কোথাও ছিল না বঙ্গবন্ধু। [caption id="attachment_237073" align="aligncenter" width="700"] মিশরে দেয়ালচিত্র দর্শন পাশে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী আজিজ মুহম্মদ[/caption] আজও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলছে নানা ধরনের কুতর্ক। ইতিহাস যারা জানে তাদের কে না জানে যে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দীনের সম্পর্ককে কোনো নির্দিষ্ট সীমায় বেঁধে রাখা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু আর তাঁর ডান হাত ছিলেন বঙ্গতাজ খ্যাত তাজউদ্দীন আহমদ। দুজন ব্যক্তির মধ্যে ব্যক্তিত্বের পার্থক্যকে আজকে প্রধান হাতিয়ার করে একজনকে আরেকজনের চেয়ে বড় ছোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু একজনই। জাতির পিতাও একজনই। আর সেই ব্যক্তিটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আর তাজউদ্দীনের মধ্যে কখনও বড় ছোট নিয়ে তর্কের জায়গা ছিল না বা থাকতে পারে না। দুজন ব্যক্তি দুজনের অবস্থান ও পদমর্যাদায় প্রাপ্য যোগ্যতা পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই তর্ক কেবল তারাই করবেন যারা ভালো করে জানে যে বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীনের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারলে ফাটল আসবে মুক্তির ইতিহাসেও। এটা এক ধরনের কুটচাল আর এই কুটচালের পিছনে রয়েছে গভীর এক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে আজকাল ইতিহাস জানা লোকেরাও জড়িয়ে পড়ছে। আহত হই এসব দেখে। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ ভাবনার সাথে যদি পরিচিত না হওয়া যায় তাহলে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামক চ্যাপ্টারটি কেবল ১৯৭১ সালেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এটা অন্যায়। এটি এমন এক চ্যাপ্টার যার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাংস্কৃতিক মুক্তির পথ। বঙ্গবন্ধুকে ভুলিয়ে দিতে পারেনি। ভুলাতে না পারলেই চালানো হয় বিতর্কের গুটির চাল। বিতর্ক মানেই বিভক্তি আর বিভক্তি মানেই ষড়যন্ত্রের জয়। বঙ্গবন্ধু বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন এটা তাঁর ব্যক্তিত্বের অংশ কিন্তু এই বড় হৃদয়ের মাঝেই তিনি এঁকেছিলেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে অথচ আজও আমরা একজন জাতির পিতাকে বিনা তর্কে মানতে পারি না। আজও আমরা তর্কে জড়াই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে। অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনার পিছনে রয়েছে এক জঘন্য রাজনীতি। সেই অপরাজনীতিকে ঠেকাতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাঠ করতে হবে বঙ্গবন্ধুকে। ধারণ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও ভাবনাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেমন আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই দেশের প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ঠিক তেমনি ছড়িয়ে দিতে হবে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকেও। বঙ্গবন্ধু এখন আর কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি হয়ে উঠেছেন একজন প্রতিষ্ঠান, একটি দেশ, একটি পরিচয়। সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশের বিকল্প কেবল বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি আটকে দিয়েছে সেসব কর্মসূচিকে কিন্তু থামিয়ে দেয়া যাবে না চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচিটি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যিনি এগিয়ে চলেছেন পিতার স্বপ্নকে বুকে লালন করে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের প্রশংসা আজ দেশে দেশে। তাই প্রত্যাশার ঝাঁপি মেলে ধরি আমরা তাঁরই কাছে। নতুন প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি চাই বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে দেশ থেকে সীমানা ছাড়িয়ে। আশার কথা হচ্ছে এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবে, ভাবতে চায়। এই যে ভাবতে চাওয়ার তৃষ্ণা এটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নানা উদ্যোগে, নানা উদ্যোমে। গবেষণায় যুক্ত আছে অনেকেই তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে যেন গবেষণার নামে কোনো ভুল ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করা না হয়। থেমে নেই স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরাও। গবেষণা করছে তারাও। আর সেই গবেষণারই অংশ হিসেবে ক’দিন পর পর নানা ইস্যুকে সামনে এনে বিতর্কের জন্ম দেয়া হচ্ছে। সরকারকে তাই অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ের গবেষণার জন্যও থাকতে হবে নির্দিষ্ট গাইডলাইন। কিছু মৌলিক বিষয়কে নিয়ে গবেষণার কিছু নেই। কী সেইসব মৌলিক বিষয়? জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক নীতি, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষকসহ কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে কখনই গবেষণার বিষয় করতে দেয়া যাবে না। এগুলো মীমাংসিত বিষয় এবং এর বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত থাকতেই পারে না। যার দ্বিমত থাকবে সে এদেশে বসবাসের যোগ্যতা হারাবে। এখানে ‘যদি’ ‘কিন্তু’ ‘অথবা’ বলার মতো কোনো সুযোগ থাকা উচিত না। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে সেটিও ইতিহাসেই লেখা আছে। সংবিধান হতে হবে যেকোনো কাজের সীমারেখা। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে এমন কাজকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে ঘোষণা দিতে হবে। এখানে আপসের কোনো সুযোগ থাকবে না। থাকতেই পারে না। যে ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে ঘোষণা দিবে তাকে এগুলো মেনেই নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে হবে। কেবল নামেই বঙ্গবন্ধুর চেতনা বাস্তবায়ন নয়, কর্মের মাঝেই বাস্তবায়ন করতে হবে সেই চেতনাকে। নতুন প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু নিজেও কিন্তু স্বপ্ন দেখা এবং বাস্তবায়নের সাহস সবাই করতে পারে না যেটি করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা। নতুন প্রজন্মের মাঝে সেই সাহসকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আজ যে শিশুকাল সে তরুণ, যুবক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম যাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে আজকের ও আগামীর বাংলাদেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে। এর লক্ষ্যেই হাতে নিতে হবে নানামুখী প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই কিন্তু বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাঁর চিন্তা ও স্বপ্নগুলোকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন মানেই বাংলাদেশ যে বাংলাদেশকে দেখতে চাই আমি, আপনি সকলে মিলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App