×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে ফুটপাত দখল করে ছাউনি-দোকান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩১ এএম

চট্টগ্রামে ফুটপাত দখল করে ছাউনি-দোকান

জামালখানে ফুটপাত দখল করে দোকান বাণিজ্য। ছবি: সংগৃহীত

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাতে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে যত্রতত্র ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। নগরের প্রায় অর্ধশত সড়কের ফুটপাত এবং মোড়ে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। ফলে সংকুচিত হয়েছে পথচারী হাঁটার পথ। অনেক সময় বাধ্য হয়ে পথচারীকে সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। অনেক ফুটপাতে ছাউনি নির্মাণ করা হলেও সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্যিক দোকান। সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের বিষয়টি প্রশংসনীয় হলেও ফুটপাত দখল করে দোকান ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় পুরো উদ্যোগটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে চসিকের নবনিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুটপাতে ও যত্রতত্র নির্মাণ করা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে চসিকের সদ্য মেয়াদপূর্ণ হওয়া সাবেক কাউন্সিলরদের যোগসাজশে গড়ে তোলা হয় এসব স্থাপনা। ২০১৬ সালে চসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরই বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতায় চমক দিয়ে দায়িত্ব শুরু করেছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। কিন্তু সদ্যবিদায়ী এই মেয়রের আমলে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজককে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া ও দোকান-বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়।

এদিকে নগরীর ফুটপাত, সড়ক ও সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য চসিকের আইন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন নবনিযুক্ত চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এ ছাড়া চসিকের ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বদলি আদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব প্রশাসনের গতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। চসিক প্রশাসক সুজন বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অনেক ফুটপাতে বা যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, এতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটা আমরা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছি। এসব জায়গার মালিক স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আইন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হবে।’

নগরীর কয়েকটি উন্মুক্ত স্থানের মধ্যে অন্যতম নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার বিপ্লব উদ্যানটি আধুনিকায়নের নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দোকান নির্মাণের অনুমতি দেয় চসিক। শুধু তা-ই নয়, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০ বছরের জন্য এ উদ্যান প্রতিষ্ঠান দুটিকে ইজারা দেয়া হয়। ফলে আগের সেই উন্মুক্ত উদ্যানে এখন গড়ে উঠেছে ২৫-৩০টি দোকান। চট্টগ্রামে যে কয়টি খেলার মাঠ আছে তার মধ্যে অন্যতম কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম মাঠ। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধনের নামে মাঠের পাশে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে সেই মাঠও খেলার অনুপযোগী হয়ে গেছে। আগে যেখানে এ মাঠে একসঙ্গে আট-দশটি গ্রুপে শিশু-কিশোররা খেলা করত, সেখানে এখন জমে থাকে পানি। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে গণশৌচাগার, খাবারের দোকান ও নার্সারির দোকান দেয়া হয়েছে। কথা ছিল নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য অত্যাধুনিক ওয়াকওয়ে করা হবে। থাকবে দ্রুত, ধীরে ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হাঁটার উপযোগী ফুটপাত। কিন্তু সেখানে এখন বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান করা হয়েছে। বসারস্থানগুলোও দখলে নিয়েছে খাবারের দোকানদাররা।

এ ছাড়া নগরীর জামালখানে ফুটপাতে নির্মিত চারটি দোকানই যাত্রী ছাউনির নামে বরাদ্দ দেয়া জায়গায় নির্মাণ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, জামালখান মোড়ের দোকানগুলোর বিনিময়ে বড় অংকের টাকা পরিশোধ করেছে লিজ গ্রহিতারা। কিন্তু সেই টাকার খুব অল্পই সিটি করপোরেশনের ফান্ডে গেছে। বাকি টাকা ঢুকেছে তৎকালীন কাউন্সিলর ও করংপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যক্তিদের পকেটে। এ ছাড়া জামালখান মোড়ের পশ্চিম পাশে নালা ও ফুটপাতের ওপর স্লাব বসিয়ে তার ওপর অ্যাকুয়ারিয়াম ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। চসিকের ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরের যোগসাজশে নালার উপর এ দোকানগুলো চুক্তিভিত্তিক লিজ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এই বাণিজ্য আড়াল করতে পাশেই কিছু ফুলের টব ও সাধারণ মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নগরীর প্রবর্তক মোড় থেকে পাঁচলাইশ মোড় যেতে সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চসিকের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নিয়ে ফুটপাতে দোকান নির্মাণ করেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তা ঘেঁষে নির্মাণ করা দোকান দুটির একটি হচ্ছে ‘ফ্রেশ ফুড রেস্টুরেন্ট’, অন্যটি ওষুধের দোকান ‘শ্রেষ্ঠা মেডিসিন’। এই দুটি দোকানের জন্য ব্যস্ততম ওই সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। চসিক থেকে চুক্তিতে জমি লিজ নিয়ে ফুটপাতের ওপর এ দোকান নির্মাণ করেছে ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চসিকের এক প্রকৌশলীই এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার সিটি গেট থেকে অলংকার মোড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাসমূহ শহরের সৌন্দর্যহানি ও যানজটের কারণ হয়ে উঠেছিল। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে নগরীর অলংকার মোড়ের ২টি যাত্রী ছাউনি সংলগ্ন অবৈধ দুটি দোকান ও নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ করে রাস্তা ও ফুটপাতের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App