×

সাহিত্য

করোনার কারণে আড্ডা ভুলে যেতে হয়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২০, ১০:৫২ এএম

বিশেষ সাক্ষাৎকার

লুৎফর রহমান রিটন ছড়াশিল্পী

লুৎফর রহমান রিটন। বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, টেলিভিশন উপস্থাপক। সত্তরের দশকে আত্মপ্রকাশ করা রিটনের জাদুকরি হাতে যেকোনো লেখাই হয়ে ওঠে ছন্দময় এবং প্রাঞ্জল। তার গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় বিভাগীয় ও নির্বাহী সম্পাদক ছাড়াও তিনি ২০০১ সালে জাপানে বাংলাদেশের কালচারাল এটাশে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

করোনাকাল কেমন কাটছে? ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন বলেন, একুশের বইমেলায় অংশ নিয়ে মার্চের ১৫ তারিখে ঢাকা থেকে কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ১৭ মার্চ অটোয়া পৌঁছেই বাড়িতে ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশনে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলাম ফেসবুকে। আমার ঘোষিত ১৪ দিন শেষ হতে না হতেই কানাডা সরকার লকডাউন ঘোষণা করল। লম্বা সময় ঘরবন্দি থাকলাম। ভালো লাগে না চার দেয়ালের বন্দিজীবন। প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যু সংবাদ। টিভি পর্দার দিকে তাকাতে পারি না। ক্রিকেটের স্কোর বোর্ডের মতো প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুসংখ্যা বাড়তে থাকে। স্ক্রল পড়তে ভয় লাগে। ট্রাম্পকে দেখলেই ব্লাডপ্রেসার ফ্লাকচুয়েড করে। সিনেমা নাটক দেখি প্রচুর। গান শুনি। তবে খুব মনোসংযোগ থাকে না তাতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব কটা চ্যানেলই আমার রিমোটের আওতায়। তাই বুঝতে পারি, দেশে ভয়াবহভাবে করোনা বিশেষজ্ঞের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। টকশো প-িতদের দেখলে সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে ইচ্ছে করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিককে দেখলে ঢাকাই সিনেমার দিলদারের কথা মনে পড়ে। লেখালেখিতে টানা মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারি না। প্রিয় কারো সঙ্গেই দেখা হয় না কতোদিন! আদৌ দেখা হবে কি না তাও জানি না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে বাংলা হিন্দি ইংরেজি মিলিয়ে অনেক মুভি দেখেছি। বহুবার দেখা পুরনো কিছু প্রিয় মুভি আবারো দেখছি। এই যেমন রসগোল্লা, শংকর মুদি, কেদারা, খাঁদসহ সর্বশেষ দেখলাম দুর্গা সহায়। এপ্রিল মাসজুড়ে নিয়ম করে প্রতিদিন দেখেছি নিকট অতীতের বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোন্স’।

কি লিখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখি। ছড়া তো লিখিই। ছোটদের, বড়দের এবং সমসাময়িক বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক ছড়া। ছোটদের গল্প আর স্মৃতিগদ্য লিখছি। ফেসবুকে সেই লেখাগুলোর কিছু কিছু আপলোড করি। পত্রিকায় লেখা ছেড়ে দিয়েছি অনেক বছর। লেখালেখির জন্যে এখন আমার ফেসবুকই এক নম্বর পছন্দ। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি বিচিত্র বিষয়ের বই পড়ছি। বহু বই শেলফে অপেক্ষমাণ। পড়া হয়নি। সেগুলো পড়ছি। আগে পড়া বইও ফের পড়ছি। এই করোনাকালে আবারো পড়লাম জসীম ঊদ্দীনের ‘বাঙ্গালীর হাসির গল্প’। পড়লাম মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহর বাংলা একাডেমির জীবনী সিরিজ গ্রন্থমালার ‘আবদুস সাত্তার’। সাত্তার ভাই আমার খুব প্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। পড়লাম বিখ্যাত গিটারশিল্পী এনামুল কবিরের ‘আমার সঙ্গীত আমার জীবন’, আনসার উল হকের ‘ছড়াসমগ্র’, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘আজও রোমাঞ্চকর’, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রনাথ ও প্রিয়ম্বদা’। লিটল ম্যাগ ‘ধমনি’র পাগল সংখ্যা এবং শামসুদ্দিন পেয়ারার ‘আমি সিরাজুল আলম খান : একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য’। এই বইটা আরো একবার পড়তে হবে। মহা ইন্টারেস্টিং। কিন্তু ঝামেলা বাঁধিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। এই বইতে বর্ণিত অনেক কিছুই সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার অভিঘাতে চেনা পৃথিবী প্রায় পুরোটাই বদলে গেছে। আমি খুব আড্ডাপ্রিয় এবং প্রকৃতিপ্রিয় মানুষ। করোনার কারণে আড্ডা ভুলে গেছি। কারো সঙ্গে দেখা হয় না। মানুষের কাছে, গাছের কাছে, নদীর কাছে যাওয়া হয় না। মানুষ পাল্টে গেছে। মানুষ খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই পারবে। শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা পৃথিবীর মানুষই ঘুরে দাঁড়াবে। এর আগেও মহামারি এসেছে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও। সেই মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানুষ। এবারো দাঁড়াবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App