×

জাতীয়

সাবেক স্বাস্থ্য ডিজি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৯ এএম

সাবেক স্বাস্থ্য ডিজি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন

দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদত্যাগী মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল দুদকের মুখোমুখি হয়ে বেরিয়ে এলে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন। ছবি: ভোরের কাগজ

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে নিম্নমানের মাস্ক-পিপিই ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘন্টা তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থাটির পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি টিম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়মের বিষয়ে নিজে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি কেনাকাটায় কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায় সিএমএসডির (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) ঘাড়ে চাপিয়ে দেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজিকে জিজ্ঞাসাসাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তারা। যা তদন্তের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হবে। এছাড়া এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা এক কথায় বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সিএমএসডির কেনাকাটার বিষয়ে স্বাস্থ্যের ডিজির কিছু করার থাকে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। এর বাইরে তার কাছ থেকে কি তথ্য পাওয়া গেছে জানতে চাইলে অনুসন্ধানের স্বার্থে আর কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় লিখিত বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি সাংবাদিকদের বলেন, করোনাকালীন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনার বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদক তদন্ত করছে। সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে আমি কী জানি তার জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি যা জানি তা তাদের বিস্তারিত বলেছি। স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে আমার কিছু করার থাকে না। তারা তাদের মতো করে কেনাকাটা করেছে। দুদকের কর্মকর্তারা আমার কাছে যেসব প্রশ্ন জানতে চেয়েছেন আমি তার সব জবাব দিয়েছি। তদন্তাধীন বিষয় সম্পর্কে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে এর বেশি কিছু আপনাদের বলা সম্ভব নয়। তবে আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, কেউ অপরাধ করলে তার কঠোর শাস্তি হোক এটা আমি চাই। এ বিষয়ে তদন্তে আমি প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করব। ২০১৬ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করছিলাম, আমাকে নিয়ে অপপ্রচারের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় পদ আঁকড়ে রাখা আমার কাছে সম্মানের বিষয় নয়। তাই বিবেক তাড়িত হয়ে গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি।

এর আগে দুদকের তলবী নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে দুদক কার্যালয়ে হাজির হন ডা. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। গত ৬ আগস্ট দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ও শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি চিঠির মাধ্যমে ভিন্ন দুটি অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে তলব করা হয়। জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য নি¤œমানের মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ-পূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য তলব করা হয়।

অন্যদিকে শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত অপর চিঠিতে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের প্রতারণার বিষয়ে দুদকে চলমান অনুসন্ধান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে তাকে তলব করা হয়। এ অভিযোগে তাকে আজ বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। এছাড়া একই অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসান, উপপরিচালক মো. ইউনুস আলী, ডা. মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলামকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক বলছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পর যোগসাজশে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ‘নিম্নমানের’ মাস্ক-পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে কমিশনের হাতে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন দুদক পরিচালক জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে কমিশন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) এক উপপরিচালকসহ তিন কর্মকর্তাকে গত ২০ জুলাই দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া একই অভিযোগে এর আগে জুনের শেষ সপ্তাহে সিএমএসডির ছয় কর্মকর্তাসহ কয়েকজন ঠিকাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজির হননি এলান করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন ও মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।

চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দুই বছরের চুক্তিতে ছিলেন ডা. আবুল কালাম আজাদ। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল তার সেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে চিকিৎসা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে সমালোচিত হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক। এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমালোচিত হন তিনি। এরপর রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর তোপের মুখে পড়েন তিনি। রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কোভিড চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমঝোতা স্মারক সই করে।

কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে বেরিয়ে আসে হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের বিষয়টি। এছাড়া নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ দিত রিজেন্ট। এ নিয়ে সমালোচনার শুরু হলে ব্যাখ্যা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যাখ্যায় জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। জবাবে আবুল কালাম আজাদ জানান, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে অধিদপ্তর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App