×

সম্পাদকীয়

দেশে রাসায়নিক পণ্য মজুতের ওপর সমীক্ষা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪৭ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দরের ‘পি’ শেডে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পড়ে রয়েছে বেশকিছু বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। লেবাননের বৈরুতের বন্দরে রক্ষিত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণের ফলাফল দেখেছে বিশ্ববাসী। মারাত্মক এই বিস্ফোরক নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশও। বিষয়টি সতর্কভাবে সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত রাসায়নিক পণ্য মজুতের ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসছে। বিষয়টি উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাসায়নিক বিপজ্জনক পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ, দ্রুত খালাস করার দায়িত্ব বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বন্দরের ‘পি’ শেডে যেসব বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তা নানা জটিলতার দোহাই দিয়ে সেভাবেই রাখা হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুটেরও বেশি আয়তনের এই ‘পি’ শেডে রাসায়নিক পদার্থ রাখার জন্য কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই। শেডের ভেতরে যেসব বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে সেগুলোও অত্যন্ত পুরনো ও জরাজীর্ণ। এসব পণ্য যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটে বৈরুতের পুনরাভিত্তি হতে পারে। আশার কথা ইতোমধ্যে বৈরুতের ঘটনার পর সারাদেশে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে উঠে আসছে দেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক নিরাপদভাবে আমদানি ও গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। আর আমদানি করা এই রাসায়নিক গুদামজাত করার জন্য দেশের বন্দরগুলোতে কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই। সার এবং খনিতে বিস্ফোরক হিসেবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার বহুদিন ধরেই চলছে। কিন্তু এটা কীভাবে নিরাপদ রাখা হবে, কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে কঠোর নিয়মনীতি রয়েছে। কিন্তু কেন এসব নিয়মনীতি মানা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। প্রতিটি গণপ্রাণহানি দুর্ঘটনার পরে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো সরানোর কথা ওঠে। পরে এ থেকে একসময় গণমাধ্যমের চোখ সরে, সরকারেরও চোখ সরে যায়। এভাবেই চলছে। নিমতলী ও চকবাজারের চুড়িহাট্টায় দুটি দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি যদি আমরা এত সহজেই ভুলে যাই, তবে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। শুধু পুরান ঢাকাতেই ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার রাসায়নিক দাহ্য বস্তুর গুদাম আছে, যা অচিহ্নিত। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের দায়িত্বই হচ্ছে এ ধরনের দাহ্য পদার্থের আমদানির অনুমতি দেয়া এবং নিরাপদভাবে এগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা করা। কিন্তু অপ্রতুল জনবলের দোহাই দিয়ে এরা দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। আমরা মনে করি, সারাদেশে রাসায়নিক গুদাম বা স্থাপনার ওপর একটি ব্যাপকভিত্তিক সমীক্ষা চালানো জরুরি। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি বৈরুতের বিয়োগান্ত অধ্যায়, নিমতলী ও চকবাজারের চুড়িহাট্টা ঘটনা আমাদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষা নয় কি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App