×

সাহিত্য

সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২০, ১০:০০ এএম

বিশেষ সাক্ষাৎকার ববিতা অভিনেত্রী

ববিতা। যার অর্থ হচ্ছে বঙ্গ বিজয়ী তারকা। এ দেশে একজনই ববিতা। যিনি চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় মুগ্ধ এক কবিতা হয়ে আছেন। যার অভিনয়ের আলোয় উদ্ভাসিত ঢাকাই সিনেমা। তার হাসি ও সৌন্দর্যের সুরভি ছড়িয়েছে দেশ থেকে বিদেশেও। কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে তিনি ঢাকাই ছবিকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। ‘সংসার’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন তিনি। তবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘শেষ পর্যন্ত’।

এ পর্যন্ত ৪০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিংবদন্তি এই নায়িকা স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্বীকৃতি লাভ করার গৌরব অর্জন করেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

গুণী এই শিল্পীর করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষণ্নতা আর আতঙ্কে সময় কাটছে। বাইরে মোটেও যাই না। এমনকি লিফটও ব্যবহার করি না। ছাদেও যাই না। কারণ সেখানে কাজের লোকজন যায়, তারা লিফট ব্যবহার করে। এর থেকে যতটা সাবধান থাকা যায় তাই করছি। বাড়ির ভেতরে কাজকর্ম ও ব্যায়াম করে মন ভালো রাখার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া আমার বাসার ছাদবাগান পরিচর্যা করছি। নিয়মিত নামাজ পড়ছি। চেষ্টা করছি সবসময় কোনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। যেন বিষণ্নতাকে দূরে রাখা যায়।

ববিতা বলেন, প্রতি মুহূর্তে অজানা একটা শঙ্কা কাজ করছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়েও বেশি চিন্তা হচ্ছে। আমার ছেলে অনিক কানাডায় থাকে। বড় বোন সুচন্দা আছেন আমেরিকায়। মেজ ভাইও সেখানেই থাকেন। আরেক ভাই অস্ট্রেলিয়ায়। তারা দূরে থাকায় চিন্তাটা বেশি হচ্ছে। যদিও নিয়মিত ভিডিওকলে কথা হচ্ছে। সবকিছুর মধ্যেও চেষ্টা করছি শান্ত থাকতে। এ ছাড়া পুরনো সিনেমা দেখে সময় কাটছে। সত্যজিৎ রায়সহ ভালো ভালো কিছু চলচ্চিত্রকারের ক্ল্যাসিক সিনেমাও দেখছি। অবসর পেলে ফ্লোরে হাঁটাহাঁটি করি। এসব রুটিনই হয়ে গেছে। গান শুনে মনকে যতই ডাইভার্ট করার চেষ্টা করি না কেন, তবুও শুনতে ইচ্ছে করছে না। কখন করোনার এই দুঃসহকাল শেষ হবে। এমন দুশ্চিন্তা মনকে ভারাক্রান্ত করেই রাখে সারাক্ষণ।

এ ছাড়া একটা বড় দুঃখের সংবাদ হচ্ছে- আমার পরিবারের অনেক কাছের মানুষকে করোনা কেড়ে নিয়েছে। চোখের সামনে তাদের মুখ যখন ভেসে ওঠে, তখন বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। আমার মন খারাপের আরো একটা কারণ হচ্ছে বছরে দু’বার ছেলের কাছে যেতাম। এখন তাও পারছি না। সেইসব কষ্টের এপাশ ওপাশ নিয়ে বেঁচে আছি।

করোনা চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। আমরা যতই বলি না কেন ঠিক হয়ে যাবে, সেই আগের পৃথিবীটা ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। নতুনভাবে সব কিছু রিসেট করতে হবে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রকৃতি। বেশি সমস্যা হবে পরবর্তী প্রজন্মের।

কারণ সব কিছু রাতারাতি আগের মতো হয়ে যাবে না। বরং আগের জীবনটা মনে হবে স্বপ্নের মতো। এসব কিছুর সামনে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দাঁড়িয়ে আছে। কোনো উত্তর নেই!

ববিতা বলেন, সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হয়। কিন্তু আমরা একাই ভালো থাকতে চেয়েছি। অন্যকে ভালো না রেখে নিজে ভালো থাকা যায় না। করোনার আঘাত বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা ছাড়া মানুষ যেভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, সেটি ছিল অন্যায়। প্রকৃতি দ্বারা যে আমরা নিয়ন্ত্রিত এ বিষয়টি মানুষ আগামীতে ভুলে যাবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা জানতে চাইলে ববিতা বলেন, হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আগের পৃথিবী তো ফেরত পাবো বলে মনে হচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App