×

জাতীয়

প্রদীপ দম্পতির অঢেল সম্পদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২০, ০৯:২০ এএম

প্রদীপ দম্পতির অঢেল সম্পদ

প্রদীপ দম্পতি

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে তাদের নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের নামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে স্বাধীন সংস্থাটি। বর্তমানে তা যাচাইবাছাই চলছে। এই সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়। একই সঙ্গে তাদের সম্পদ বিবরণীর তথ্য-উপাত্ত চেয়ে নোটিস দেয়া হয়। ওই নোটিসের পর প্রদীপ ও তার স্ত্রী আলাদাভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে। সম্পদ বিবরণীতে প্রদীপের সম্পদের ঘোষণা ছিল মাত্র ৭০ লাখ টাকার কিছু বেশি। তবে চুমকীর নামেই অনেক বেশি সম্পদের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া নথিপত্রে চুমকীকে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চুমকীর সম্পদ বিবরণীতে বলা হয়, স্ত্রী চুমকির (গৃহিণী) নামে বোয়ালখালীতে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য খামার রয়েছে। পাথরঘাটায় চার শতক জমি রয়েছে চুমকির নামে, যার মূল্য ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ওই জমির ৬ তলা ভবনের বর্তমান মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার, পাঁচলাইশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকার জমি কেনা হয়। ২০১৭-১৮ সালে কেনা হয় কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় ৭৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার দাম ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

তবে তাদের দেয়া সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা সম্পদের বেশ ফারাক রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মধ্যে রয়েছে, প্রদীপের নিজের ও স্ত্রীর নামে কক্সবাজার শহরে ৪ শতাংশ জমি, ৬ তলা ভবন, ফ্ল্যাট ও দুটি হোটেলের মালিকানা। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে এর বাইরে আরো ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রদীপ দম্পতির জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা সম্পদের হিসাবে ব্যাপক গোলমাল রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তাদের হিসাবের বাইরে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগেই আসামি হতে যাচ্ছেন প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকী।

এ বিষয়ে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। অনুসন্ধান শেষ না হলে বিস্তারিত বলা যাবে না।

অন্যদিকে, এই বিষয়ে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পুলিশের চাকরিকে পুঁজি করে ২ যুগের মধ্যে প্রদীপ মানুষকে ক্রসফায়ারের ভয়, ঘুষ বাণিজ্য, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদক কিংবা এনবিআরের চোখ ফাঁকি দিতে নিজের নামে সম্পদ না রেখে সব করেছেন স্ত্রী চুমকি দাশের নামে। জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণসহ তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকার ওপর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ শুধু দেশের ভেতরেই নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারতেও অর্থপাচারের মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন বলে দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে আসছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র বলছে, দুদকে যে সম্পদ বিবরণী ওসি প্রদীপ দাখিল করেছেন, সেই সম্পদের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি সম্পদের মালিক তিনি ও তার স্ত্রী। নিজের নামে সামান্য কিছু সম্পদ করলেও বেশির ভাগই করেছেন স্ত্রী চুমকির নামে। শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগই নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচারও করেছেন প্রদীপ। এমনকি বোয়ালখালীতে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় শুরু করা মাছের খামার থেকে তার আয় দেখানো হয়েছে কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ থেকে বাঁচাতে জনপ্রতি ৫-১০ লাখ টাকা আবার ১ পরিবারের কাছ থেকেই ৭৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করার কথা প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগীরা। টেকনাফের অনেক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুট করে নিয়ে আসেন টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে টাকা দিলেও ওসি প্রদীপ টাকা পেয়ে যাওয়ার পর অনেককেই ক্রসফায়ারের নামে খুন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহাড়ছড়া এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এই ঘটনায় গত বুধবার টেকনাফের ওসি প্রদীপ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলিসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন রহমান। এরপর ৭ আগস্ট ওসি প্রদীপসহ ৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর আটক করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App