×

জাতীয়

পুলিশকে যা বলেন সিফাত (ভিডিও)

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫৭ এএম

পুলিশকে যা বলেন সিফাত (ভিডিও)

মেজর সিনহা ও সিফাত/ফাইল ছবি।

‘কাম ডাউন’ বলে গুলি করেন লিয়াকত সিফাত-শিপ্রার জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ড

টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যারহস্যের জট খোলেনি এখনো। তবে তার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের জবানবন্দিতে সিনহা গুলিবিদ্ধ হতে পারেন এমন কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ ও গোয়েন্দারা। শিপ্রা ও সিফাত ঘটনার পর পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার একাধিক ভিডিও ও অডিও রেকর্ড হাতে পেয়েছে ভোরের কাগজ।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের বর্ণনায়ও ঘটনার কারণ রহস্যঘেরা। সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও রেকর্ডও হাতে পেয়েছে ভোরের কাগজ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একটি বিশেষ বাহিনীর এক কর্মকর্তাকেও সেখানে উপস্থিত দেখা গেছে। ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার স্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। শিপ্রা ও সিফাত এখন সিনহা হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামলাপুর চেকপোস্টে ‘কাম ডাউন’ বলে সিনহাকে গাড়ি থেকে নামানোর পরই ইন্সপেক্টর লিয়াতক পরপর ৩ রাউন্ড গুলি করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার ১০ মিনিট পর তাকে ট্রাকে তোলা হয়। এ ঘটনার পর টেকনাফ থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে সিনহা যে রেস্ট হাউসে উঠেছিলেন হিমছড়ির সেই নীলিমা রিসোর্টে অভিযানে যায় রামু থানা পুলিশ। তারা শিপ্রার কাছে সিনহা প্রসঙ্গে বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। সিনহা সেখানে গিয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনীকে জ্ঞাত করেছিলেন কিনা সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হয়। শিপ্রা জানান, ‘হ্যাঁ, জ্ঞাত করেছিলেন’।

এরপর সাদা ও পোশাকধারী পুলিশ তাদের কক্ষ তল্লাশি করতে সহায়তা চান। শিপ্রা তখনো জানেন না সিনহা গুলিবিদ্ধ এবং সিফাত পুলিশের কব্জায়। এ অবস্থায় তিনি একটু সময় চেয়ে মোবাইল ফোনে বারবার তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়া পাননি। এর মধ্যে পুলিশ ওই কক্ষে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালায়; যার পুরো ঘটনা ভিডিও ধারণা করা হয়। তখন শিপ্রা তাদের প্রশ্নের জবাবে জানান, তারা ট্র্যাভেল ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য এসেছেন। সিনহা ওইদিনই প্রথম সেনাবাহিনীর পোশাক পরেছেন।

তল্লাশির একপর্যায়ে সিনহার কাঠের আলমারির ড্রয়ার থেকে ৪ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করতে দেখা যায়। তবে শিপ্রার সঙ্গে থাকা স্টামফোর্ডের আরেক শিক্ষার্থী তাহসিন রিফাত নূরকে পুলিশ তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তল্লাশির সময় রিসোর্টের কেয়ারটেকারকে সঙ্গে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে তাদের পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় সাক্ষী করা হয়। অবশ্য তল্লাশির আগে ও পরে শিপ্রাকে সিনহা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও পুলিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো তথ্য তারা পায়নি। এর মধ্যেও শিপ্রা মোবাইল ফোনে সিনহা ও সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকেন। তল্লাশির পর পুলিশ শিপ্রাকে তাদের সঙ্গে নিলেও তাহসিন রিফাত নূরকে নেয়নি!

এদিকে ঘটনার পর পুলিশ কর্মকর্তরা হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সিফাতকে বাহারছড়া ফাঁড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে তারা পাহাড়ে ওঠেন এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিচে নেমে আসেন। তখন অনেক লোকজন জড়ো দেখে সিনহা নিজের পরিচয় দেন। লোকজন সরে গেলে তারা ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে গাড়িতে ওঠেন। সিনহা ছিলেন গাড়ির চালকের আসনে।

রাত ৯টার দিকে তারা বিজিবির চেকপোস্টে গেলে সিনহার পরিচয় পেয়ে তারা গাড়ি ছেড়ে দেন। এরপর শ্যামলাপুর চেকপোস্টে গেলে গাড়ির গ্লাস খুলে সিনহা নিজের পরিচয় দিলে পুলিশ তাদের যেতে বলেন, কিন্তু তখনই ইন্সপেক্টর লিয়াকত সেখানে পৌঁছে তাদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। সিফাত দুহাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছনে যান। এর মধ্যে লিয়াতক সিনহাকে বলেন ‘কাম ডাউন’। সিনহা নিচু হয়ে গাড়ি থেকে নামার পরই সিফাত পরপর ৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান। সিনহা মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই সিফাতের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্রায় ১০ মিনিট পর আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সিনহাকে একটি পিকআপে তোলা হয়।

সিফাতের ভাষ্য মতে, পাহাড়ে ওঠা এবং চেকপোস্টে গাড়ি থেকে নামা পুরো সময়টাই সিনহার অস্ত্র গাড়িতে ছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা সিফাতকে বারবার জিজ্ঞেস করেন গুলির আগে কোনো তর্ক বাদানুবাদ হয়েছে কিনা। সিফাত বলেন, লিয়াকত কয়েকবার কাম ডাউন বলার পরই গুলির শব্দ পান তিনি। পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাহারছড়া ফাঁড়িতে সিফাতকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তখন ইন্সরেপক্টর লিয়াতক ও টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশও ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিফাতের একহাতের হ্যান্ডকাফ খুলে বোতলে পানি পান করতে দেয়া হয়। বক্তব্যে গড়মিল খুঁজতে কয়েক দফায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

অন্যদিকে, ঘটনার পর পিস্তল, ইয়াবা, গাঁজাসহ ২১টি আলামত উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছে তাতে স্থানীয় নুরুল আমিন, হামিদ হোসেন ও আইয়াজ নামে ৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে সিফাতের ভাষ্য মতে, ঘটনার সময় খুব কাছে লোকজন ছিল না, দূরে ছিল। গুলির শব্দে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া হানিফসহ ৩ যুবককে পাহাড় থেকে সিনহা কীভাবে নেমেছেন সে ব্যাপারে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাতে দেখা যায় তারা বলছেন, পাহাড়ের উপরে লোকজন ও লাইট দেখে তারা ডাকাত সন্দেহ করেন।

এরপর সিনহাসহ তার টিমের সদস্যরা নিচে নেমে নিজেদের পরিচয় দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হানিফসহ অন্যরা সিনহার গায়ের পোশাক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারছিলেন না। তাদের মধ্যে একজন জানান, সিনহা ছোট একটি অস্ত্র বের করলে তারা ভয় পান। অবশ্য অস্ত্র সম্পর্কে জানতে পুলিশ ওই যুবককে অশ্লীল গালি দিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অপ্রস্তুত হন। সিনহার সঙ্গে টাঙ্গাইলে এক অনুষ্ঠানে পরিচয় বলেও জানান সিফাত।

প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই রাতে শ্যামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। পুরো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সিনহার বড় বোনের দায়েরকৃত হত্যা মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App