×

সারাদেশ

মধুমতির ভয়াবহ ভাঙন, নিঃস্ব শতশত পরিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০৬:১২ পিএম

মধুমতির ভয়াবহ ভাঙন, নিঃস্ব শতশত পরিবার

মহম্মদপুরে মধুমতির ভয়াবহ ভাঙন

মাগুরার মহম্মদপুরের মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও শতশত একর ফসলি জমি। জমিজমা ও ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের শতশত পরিবার। অসহায় অবস্থায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে খোলা স্থানে। তারা অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে নিঘুম রাত যাপন করছে। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজ নিচ্ছেন না বলে জানান ভাঙন কবলিত এই অসহায় মানুষেরা। মধুমতি নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, স্কুল ও অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। কয়েক দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে নদীপাড়ের অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি। এতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যাও। ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে উপজেলার ভোলানাথপুর গ্রামের ২শত বছরের পুরাতন বারোয়ারী শ্মশ্বান কালি মন্দিরটি। কালি মন্দিরের জায়গা-জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতংক। আর এই ভাঙনের ফলে উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, কালিশংকরপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, গোপালনগর, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, ও ভোলানাথপুর গ্রামগুলোর অংশ। সরেজমিনে নদী ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। আবার কেউ ভাঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত কাঁচা, পাকা বাড়িঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বিক্রি করে দিচ্ছেন গাছপালা। চোখের সামনে ভিটেবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। কয়েক দিনের অব্যাহত নদী ভাঙনে মানুষ অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন তারা। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। এ সময় চরপাচুড়িয়া গ্রামের মোঃ শহিদ মোল্যা বলেন, নদী গর্ভে আমার বাড়িঘর, গাছপালা ও তিন একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। রুইজানী গ্রামের স্মৃতি রানী বিশ্বাস কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাড়িঘর, গাছপালা ও চার একর ফসলি জমি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। বাড়ি করার আর কোন জমি নাই। ছাপড়া প্যাতে আছি কেউ আমাদের দেখতিও আসলো না। চরপাচুড়িয়া গ্রামের সামাদ ও ইকলাস জানান, নদী ভাঙনের ভয়ে আমরা রাত জেঁগে বসে থাকি। স্বর্বস্ব হারিয়ে আমরা এখন ভুমিহীন, কোথায় যাবো। তরুন সমাজসেবক চরপাচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা বিএনপি নেতা মোঃ মহিদুল ইসলাম জানান, মধুমতির ভাঙনে এসব এলাকার অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছে পরের জমিতে। এখানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো না। চরপাচুড়িয়া গ্রাম সব সময় অবহেলিত। এই অবহেলিত এলাকার জন্য কতৃপক্ষের কাছে নদী বাঁধের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জানান, নদী ভাঙন রোধে গত বছর আমরা কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাধ নির্মাণ কাজ করেছি। ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ সাপেক্ষে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা প্রর্যন্তু ৩শ মিটার এলকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। নতুন করে মধুমতির ১০টি পয়েন্টে বাধ নির্মাণ করতে আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ চেয়েছি। পানি কমলে ভাঙন এলাকা নির্ধারণ করে আমরা কাজ শুরু করবো। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানূর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App