×

সারাদেশ

বালু উত্তোলনে নিরাপত্তা হুমকিতে হার্ডিঞ্জ সেতু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০৪:৫১ পিএম

বালু উত্তোলনে নিরাপত্তা হুমকিতে হার্ডিঞ্জ সেতু

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু

ঈশ্বরদীর পাকশীতে পদ্মা নদীর ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতুর খুব কাছাকাছি স্থানে নদী দখল করে পাহাড়সম বালু স্তুপ করে রাখায় নদীর গতিপথই পরিবর্তন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিরাপদ দুরত্বের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে হার্ডিঞ্জ সেতু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভরা বর্ষা মৌসমে পদ্মার তীব্র স্রোত উপেক্ষা করে নদী থেকে বালু উত্তোলন, নদীর স্বাভাবিক গতিরোধ করে বালু বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন ঈশ্বরদীর প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পাকশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস এই বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পদ্মা নদীর বিশাল এলাকা লিজ না নিয়ে লিজ গ্রহীতা কৃষকদের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে বালুর ব্যবসা করছেন আওয়ামী লীগের ‘নির্দিষ্ট’ কয়েকজন নেতা। তবে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম বলেন, এই বালুর ব্যবসার সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতার অংশগ্রহণ নেই। চেয়ারম্যান একাই এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

স্থানীয়রা বলেছেন, কৃষি লিজের জমিতে বানিজ্যিকভাবেই চলছে বালুর রমরমা ব্যবসা। চেয়ারম্যান এনাম বিশ্বাসের ভাগিনা পরিচয়ে আনোয়ার হোসেন প্রতিদিন টাকা উত্তোলনসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

একাধিক বালু ব্যবসায়ীরা জানান, তারা পদ্মা নদীর এসব জমি ভাড়া নিয়ে বালু স্তুপ করে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর ৪টি ঘাটে গড়ে প্রায় ১ হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। টাকার হিসেবে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয় এসব ঘাট থেকে।

জানা যায়, ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন ১ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয় এসব বালু মহাল থেকে। চাঁদার টাকাও ভাগ করেন চেয়ারম্যান নিজে। পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকার বালুমহালে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে ঘাটে ট্রাক-ট্রাক্টর আসছে, বালু বোঝাই করে চাঁদার টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছে । বালুঘাটের একজন ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে ৬ জন পার্টনার ৬টি বালুর স্তুপ করে ম্যানেজার নিয়োগ করে বালু বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্দিষ্ট দুরত্বের কাছাকাছি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে এই ঐতিহাসিক সেতু হুমকির মুখে পড়বে। আমি পাকশীতে নতুন এসেছি, সবকিছু জেনে বালুর ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম বিশ্বাস বলেন, রেজা নামের একজনের নামে এই বালু মহাল লিজ নেয়া আছে। অন্য স্থান থেকে বালু এনে এখানে রেখে বিক্রি করা হয়।

৮ আগস্ট পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, পদ্মা নদীর যে স্থানে বালুর পাহাড় সে জমি রেলের। স্থানীয় কৃষকরা বাৎসরিক কৃষি লিজ নিয়ে এসব জমিতে চাষাবাদ করে থাকেন। এখন সেখানে চাষাবাদের বদলে বালুর ব্যবসা করা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ এসব জমির কৃষি লিজ বাতিল করে বানিজ্যিক লিজ প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান বলেন, ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করার এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল। এখন যদি বালু ব্যবসায়ীরা আবারো বালুর ব্যবসা চলমান রাখেন তাহলে সরেজমিন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App