×

জাতীয়

প্রদীপ ও লিয়াকতের রিমান্ড নিয়ে ধোঁয়াশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৯ এএম

প্রদীপ ও লিয়াকতের রিমান্ড নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রদীপ-লিয়াকত

আজ রিমান্ডে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামির সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে বাকি চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দেন বিচারক। নির্দেশনা মতে, সেই চার আসামিকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ ইতোমধ্যে শেষ হলেও মূল অভিযুক্ত তিনজনকে গত তিনদিনেও রিমান্ডে নেয়া যায়নি। কেন নেয়া যায়নি, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি তদন্তের ভার পাওয়া সংস্থার কেউ।

রিমান্ডের আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন, মামলার এক নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, দুই নম্বর আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তিন নম্বর আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। তাদের প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

পাশাপাশি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। শনিবার আদালতের আদেশ কপি কারাগারে এসে পৌঁছায় বলে জানান কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন। তিনি জানান, নথিপত্র আসার পর র‌্যাব সদস্যরা চার আসামিকে কারা ফটকে শনিবারই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। রবিবারও দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অপর তিন আসামিকে এখনো রিমান্ডের জন্য নিয়ে যাননি।

রিমান্ডের আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিলম্ব সম্পর্কে জানতে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর ইনচার্জ আজিম আহমেদকে ফোন করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাকে না পেয়ে র‌্যাব-১৫ এর উপঅধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসানকে ফোন করা হয়। রিং হওয়ার পর তিনি লাইন কেটে দেন। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও জবাব আসেনি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে তদন্তকারী সংস্থার কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের অপর একটি সূত্র বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা সুবিধামতো সময়ে আসামিদের রিমান্ডে নেবেন।

স্পর্শকাতর মামলা বিধায় সবকিছু গুছিয়ে তার পরই জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে হয়তো। আবার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ অডিও ক্লিপও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এসব বিষয় সূক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে সূত্রটি।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন র?্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান। শুনানি শেষে ১, ২ ও ৩ নম্বর আসামির সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর ও মামলার অন্য চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর আদালতে আনা হলে জামিনের আবেদন করেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত আসামি। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কক্সবাজার কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

এর আগে গ্রেপ্তার ওসি প্রদীপকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ৫টার দিকে কক্সবাজার আদালতে পৌঁছায় পুলিশ। তাকে আনার আগেই বিকাল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার ৬ আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। আসামিদের আদালতে হাজির করার আগে পুরো এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের পাশাপাশি আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা।

জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলী, দ্বিতীয় আসামি ওসি প্রদীপ ও তৃতীয় আসামি এসআই নন্দলাল রক্ষিতের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর, কামাল, মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক। রাত সাড়ে ৮টায় আসামিদের কারাগারে নেয়া হয়।

বুধবার রাত ১০টায় টেকনাফ থানায় আদালতের নির্দেশে মেজর সিনহার বড় বোনের করা হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন। পরে আদালত ৩০২/২০১ ও ৩৪ ধারায় করা ফৌজদারি আবেদন টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বাদীর আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে মামলার তদন্তভার কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে দিতে সুপারিশ করা হয়। মামলায় পরিদর্শক লিয়াকত, ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকতসহ সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।

মামলার অভিযোগ করা হয়, ওসি প্রদীপের ফোনে পাওয়া নির্দেশে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত গুলি করেছিলেন সিনহাকে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ‘ইচ্ছাকৃত নরহত্যা’, ২০১ ধারায় আলামত নষ্ট ও মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি এবং ৩৪ ধারায় পরস্পর ‘সাধারণ অভিপ্রায়ে’ অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে (২১) মামলার প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া আটজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং আইয়ুব আলী নামে একজন সার্জেন্টকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে যান। তারা কক্সবাজার সৈকতে অবস্থিত সেনাবাহিনীর রেস্ট হাউস জলতরঙ্গতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিংয়ে সিনহা নিহত হওয়াকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব নেই। এ ঘটনায় দুই বাহিনীর মধ্যে চিড় ধরবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মঙ্গলবার সিনহার মা নাসিমা আখতারকে ফোন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় নিহত সিনহার সফরসঙ্গী সিফাত ও শিপ্রাকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। রবিবার শিপ্রার জামিন হয়েছে।

ইউনিয়নের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাহেদুলকে। তিনি ও শিপ্রা দেবনাথ তিনটি আলাদা মামলায় কারাগারে ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App