×

জাতীয়

দোহাজারী-গুনদুম রেলপথ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ১০:০৬ এএম

দোহাজারী-গুনদুম রেলপথ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি

ভৌত অগ্রগতি ৪০ ও আর্থিক অগ্রগতি ২৬ শতাংশ মাত্র

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্বসহ নানাবিধ কারণে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪০ শতাংশ হলেও আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ বলে গতকাল রোববার প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে। প্রকল্পটিতে এডিবি দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। বাকিটা জিওবি থেকে দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার ৮০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও বর্তমানে ১৩৬৭ দশমিক ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ৩০-৪০ শতাংশ ভূমি এখনো অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে সব স্থানে কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে কার্যপত্র থেকে জানা গেছে।

আবার প্রকল্পটির কাজ কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে বর্তমানে সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এবং খরচ প্রথমে ১ হাজার ৮৫২ কোটি, ২য় বারে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ধরা হলেও তা ৪-৫ দফা সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

তবে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান কমিটিতে বলেছেন, জমি অধিগ্রহণ না হওয়া, বনবিভাগের গাছ কাটার অনুমতি না পাওয়া, অধিগৃহীত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় জমির মালিকরা কাজে বাধা দিচ্ছে এবং অতিবৃষ্টি ও কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারো ধীরগতিতে চলছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের আওতাধীন হওয়া সত্ত্বেও এ ধীরগতিতে রেলওয়ে তথা রেলমন্ত্রীও বিব্রত। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের একটি। তবে এখনো ভূমি অধিগ্রহণে কিছু স্থানে একটু সমস্যা রয়েছে। আসলে কক্সবাজার জেলায় প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। সে কারণে সব স্থানে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারছি না। অর্থের কোনো সমস্যা নেই। তবে মালিকানা নিয়ে মামলা মোকদ্দমা, বনভূমির গাছ গাছালি, কোথাও বাড়িঘর, দোকানপাট এসব কারণে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।

দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমার সীমান্ত সন্নিকট গুনদুম পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১০ সালে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। কিন্তু এ মেয়াদে জমি অগ্রিহণসহ তেমন কোনো কাজ হয়নি, মাত্র ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচ করতে সমর্থ হয় রেলওয়ে। পরে বারবার সময় বাড়ান হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত মাত্র ২৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এভাবে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং সময় বাড়ান হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত।

২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন জমি অধিগ্রহণের কোনো কাজ না হওয়ার পরে ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দেশি-বিদেশি ৪টি কোম্পানির সঙ্গে রেলপথ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে রেলওয়ে। ৩০ জুন ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তার পরেও প্রকল্পটির দশা এখন বেশ নাজুক-বেহাল, যা স্টিয়ারিং কমিটির কার্যপত্রে উঠে এসেছে। যার ফলে শেষ হতে কতদিন লাগবে তা বলতে পারছেন না প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা।

কার্যপত্রে দেখা গেছে- ২০১৮ সালের ৮ মে কক্সবাজার জেলায় ২১ দশমিত ৩৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিসিকে রেলের তরফ থেকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে রেল আবার গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পুনরায় জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে ডিসির মাধ্যমে চিঠি দেয়। কিন্তু এখনো কেউ কোনো কাজ করেনি। তাছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ে ১৩৬৭ দশমিক ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও মালিকানা জটিলতায় এখনো ৩০-৩৫ শতাংশ জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ফলে তারা কাজ করতে বাধা দিচ্ছে বলে কার্যপত্রে প্রকল্প পরিচালক অভিযোগ করেছেন।

উল্লেখ্য, এ প্রকল্পটি ২টি লটে ভাগ করে সম্পাদন করা হচ্ছে। ১ম লটে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ১০০ দশমিক ৮৩ কিমি, যেটির কাজ পেয়েছে যৌথভাবে চায়নার সিআরইসি ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। জমি দেবে সরকার। ১ম লটের চুক্তি মূল্য ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২য় লট রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫ কিমি। এ অংশের কাজ পেয়েছে যৌথভাবে চায়নার সিসিইসিসি ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লি.। ২য় লটের চুক্তি মূল্য ৩ হাজার ৫০২ কোটি ৫ লাখ ২ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০২ কিমি নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৮৪টি ছোট-বড় সেতু, ৯টি স্টেশন বিল্ডিং, প্লাটফর্ম ও শেড নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও সমুদ্রের ঝিনুকের আদলে কক্সবাজারে একটি আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং বানানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App