×

জাতীয়

টার্গেটে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪২ এএম

টার্গেটে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকরা

বিলাসবহুল গাড়ি

গত তিন বছরে বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি এবং বিক্রির পরিমাণ গড়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে বিগত দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় বাংলাদেশের ধনী ব্যক্তিদের এসব বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ব্যবহার বেড়েছে। এ অবস্থায় এসব গাড়ি ক্রয়ে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএর কাছ থেকে এরই মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার গাড়ি মালিকের নাম-ঠিকানা, টিন নম্বর, গাড়ির দামসহ বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে অনুযায়ী বিলাসবহুল গাড়ি মালিকদের নজরদারিতে আনার পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয়ের সঙ্গতি ও সম্পদের সামঞ্জস্যতা যাচাই-বাছাই শুরু করেছে স্বাধীন সংস্থাটি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রথমে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৫০০ সিসি বা তদূর্ধ্ব সিসির গাড়িগুলোর তথ্য চায় দুদক। কিন্তু তখন তথ্য না দেয়ায় ফের অক্টোবরে বিআরটিএকে চিঠি দেয় কমিশন। চিঠিতে আড়াই হাজার বা তার বেশি সিসি গাড়ির ব্র্যান্ডের নাম, গাড়ির মালিকের নাম ও ঠিকানা, ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর, মডেল ও আমদানির তারিখ, গাড়ির নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ, গাড়ির দাম ও ভ্যাটসহ অন্যান্য ট্যাক্সের তথ্য দুদককে দিতে বলা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গেল পাঁচ বছরে নিবন্ধন হওয়া ২ হাজার ৪৪০টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য সম্প্রতি সরবরাহ করেছে বিআরটিএ। এসব গাড়ির ৭০ ভাগ মালিক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আর ৩০ ভাগ গাড়ির মালিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি। মূলত, বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা এবং গাড়ি মালিকদের আয়-ব্যয়ের সঙ্গতি আছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতেই এসব তথ্য নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে অভিযোগ আসে, মূল্য কম ঘোষণা দিয়ে খালাস হচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। আমদানি করা গাড়ির প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। আর এসবের মাধ্যমে দুর্নীতি করে গাড়িগুলো ক্রয় করা হচ্ছে। এমনকি অনেক বিলাসবহুল গাড়ি মালিকের বিরুদ্ধেও রয়েছে শুল্ক ফাঁকিসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। যার সূত্র ধরে এসব অভিযোগ যাচাই করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। আর অনুসন্ধানের জন্যই বিআরটিএকে চিঠি দেয় কমিশন।

বিলাসবহুল গাড়ির তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর বিষয়ে কোনো অসঙ্গতি থাকলে দুদক সেটি নিয়ে কাজ করবে। আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছিল, আমরা সেই তালিকা দিয়েছি।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজিবের বিলাসবহুল একটি গাড়ি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে যেসব বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়া যাবে সেটার সত্যতা মিললেই কমিশন গাড়িগুলো জব্দ করবে। এমনকি গাড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও কার্পণ্য করবে না কমিশন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, আমরা এখন বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখব। এখানে কোনো অসঙ্গতি পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি কোনো গাড়ি মালিকের তথ্যে গরমিল পেলে তাদের সম্পদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ-এক্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অতি ধনী ব্যক্তিদের সংখ্যা দ্রুততম বৃদ্ধির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেখা গেছে, গত ৩ বছর সময়কালে বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৭.৩% বেড়েছে। এটি দেশের কোটিপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধির দ্বারা হাইলাইট হয়। ১৯৭৫ সালে ৪৭ জন লাখপতি ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে তা লাখ ছাড়িয়ে কোটির দিকে। ফলস্বরূপ, বিএমডব্লিউ, অডি, লেক্সাস, জাগুয়ার, মাসেরেটি এবং মার্সেডিজ-বেঞ্জের মতো বিলাসবহুল যানবাহনের ব্র্যান্ডগুলো ঢাকার রাস্তায় একটি সাধারণ দৃশ্য। এছাড়াও টয়োটা, নিসান এবং মিতসুবিশির হাই-এন্ড মডেলগুলো বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়িটি হলো টয়োটা করোলা। তবে সম্পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি লোক দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি বেছে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের নজরদারিতে বিষয়টি আনার জন্য ধন্যবাদ। আমরা রাস্তায় হরহামেশাই দেখি বিলাসবহুল গাড়ি চলছে, কিন্তু এগুলোর মালিক কারা সেটা রাষ্ট্রের জানা প্রয়োজন। আসলে এগুলোতে সরকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা কিংবা অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে এগুলো কেনা হচ্ছে কিনা সেটাও রাষ্ট্রকে জানতে হবে। তাই দুদকের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App