×

পুরনো খবর

কক্সবাজারে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০৩:৪৬ পিএম

কক্সবাজারে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা

বাংলাদেশ পুলিশ/ফাইল ছবি।

কক্সবাজারে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা

কক্সবাজারের পুলিশ/ফাইল ছবি।

পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। সেই তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনও। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিজেই মনিটরিং করছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজির আহমেদ। ইতিমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আইজিপির হাতে পৌঁছেছে। প্রতিটি প্রতিবেদনেই প্রদীপের প্রায় অভিন্ন আমলনামা রয়েছে।

জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে টেকনাফ থানার ওসি পদে রদবদলে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম রেঞ্জ কার্যালয় থেকে প্রদীপকে আগলে রাখা হতো। প্রদীপকে টেকনাফ থানা থেকে সরানোর প্রত্যেক উদ্যোগেই রেঞ্জ কার্যালয় স্থানীয় সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি এবং তার প্রথম স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহীন আকতার চৌধুরীর ডিও লেটারকে পুঁজি করে ঠেকিয়ে দিতো।

পুলিশ সদর দপ্তর ভাবছে, তখন যদি তাদের বদলি আদেশ রেঞ্জ কার্যালয় আমলে নিতো, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বদলি আদেশ কেন কার্যকর করা যায়নি তা অনুসন্ধানে উঠে আসে, প্রদীপ ছিল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য রীতিমতো সোনার ডিমপাড়া হাঁস। তাই তারা একাধিকবার সদর দপ্তরের আদেশ উপেক্ষা করে প্রদীপকে তার অপকর্মে সহায়তা করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান আর্মির নির্মমতার প্রথম শিকার পুলিশ, প্রথম অস্ত্র ধরেছিল পুলিশ বাহিনী। করোনায় জীবন বাজি রেখে সারাদেশে পুলিশ জনগণকে সচেতন করা, লকডাউন কার্যকর করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে কাজ করেছে। খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে, ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে। পুলিশ নিজের গাড়িতে রোগী ও চিকিৎসকদের পৌঁছে দিয়েছে হসপিটালে। মানুষ পুলিশকে পরিবারের সদস্য ভাবছে যখন, তখনই ঘটলো প্রদীপকাণ্ড। প্রদীপ ও তার সুবিধাভোগীদের দায় পুরো বাহিনী নেবে না— এমন স্পষ্টবাণী ইতিমধ্যে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা দিয়েছেন।

আর তাই সিনহা মো. রাশেদ খানের বোনের দায়ের করা হত্যামামলায় অভিযুক্ত সবাইকে বহিস্কার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে থানার সকল সদস্যকে অন্যত্র বদলির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রদীপের আশ্রয়দাতা হিসেবে উর্ধ্বতন যাদের নাম আসছে তাদেরকেও সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যু হয়। সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। সেই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যাদের সাক্ষী রাখা হয়েছে তারা কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং ঘটনা সম্পর্কেও কিছু জানতেন না।

এই ঘটনায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদসকে আসামি করে নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদি হয়ে কক্সবাজার আদালতে হত্যামামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যে আদালত ৭ পুলিশ সদস্যের ৭ দিন রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে হত্যামামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাবের কর্মকর্তারা। ৯ আসামির ৭ জন কারাগারে থাকলেও বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছে।

এর আগে ৬ আগস্ট সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়াস্থ বিভাগী পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে কক্সবাজার আদালতে সোপর্দ করে। আলোচিত এই ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজির আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুজনই তাদের বাহিনীকে আলাদা আলাদা নির্দেশনা দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App