×

রাজধানী

আর কোনো ময়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ০১:৪৬ পিএম

আর কোনো ময়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়

সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন মেজর সিনহার মা, পাশে আছেন সাবেক সে কর্মকর্তরা। ছবি: সংগৃহী।

আর কোনো ময়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়

সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন মেজর সিনহার মা, পাশে আছেন সাবেক সে কর্মকর্তরা। ছবি: ভোরের কাগজ।

 মাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন সিনহা।

মানুষকে সারপ্রাইজ দিতে ভালবাসতো। কি করছো জানতে চাইলেই বলতো, বলার মতো কিছু হয়নি। সময় হলেই জানাবো। তবে জানতাম একটি ডকুমেন্টরী বানাচ্ছে সে। তা নিয়েই ব্যাস্ত ছিল। ডকুমেন্টরী তৈরি শেষে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল হয়তো। তবে এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে গেলো। আইনানুগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট। তবে আর কোনো ময়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।

সোমবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাছিমা আক্তার।

তিনি বলেন, আমার ছেলে দেশ ও মানুষকে ভালো বাসতো। সেনা বাহিনীর মেজর পরিচয়ে নয় নিজের মানবীক গুণাবলীর মাধ্যমেই বাঁচতে চেয়েছিল ছেলে আমার। কখনোই কর্মক্ষেত্রের পরিচয় ব্যবহার করত না সিনহা। ৩১ জুলাই রাত ১১টার দিকে সিনহাকে ফোন করেছিলেন নাছিমা আক্তার। রিং বাজলেও কেউ ফোন ধরেননি।

নাছিমা বলেন, ফোনে রিং হলেও ছেলে ফোন ধরেনি। ব্যস্ত ছিল ভেবে ফোন রেখে দিই। আনুমানিক ১২টার দিকে একজন ফোন করে আমাকে। জানতে চান, সিনহা আমার কে হয়? কোথায় কী কওে খবর রাখেন জানতে চান। ছেলে সম্পর্কে এভাবে প্রশ্ন করায় আমি একটু রাগান্বিত হই। এরপরই ওই প্রান্তে থেকে বলেন, ‘আপনি এমন করছেন কেনো, আমি টেকনাফ থানার ওসি। আমি জিজ্ঞাসা করি, আমার ছেলের কী হয়েছে? আমার ছেলে কী আপনার কাছে আছে? ফোনটা দেন। ওসি বলেন, দূরে আছে। পরে দেবো বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এরপর ছেলেকে আমি ফোন দিই, রিং বাজে, কিন্ত কেউ ফোন ধরেনি। সিনহা খুব জোরে গাড়ি চালাতো আমি ভাবলাম আবার কি হলো। এর মধ্যেই ওর দুজন বন্ধুর নাম্বার আমাকে দিয়ে রেখেছিল জরুরি প্রয়োজনে সাহাজ্যের জন্য। তখনই আমি ডায়েরী দেখে মেজর মহসিনকে ফোন দিয়ে টেকনাফ থানার ওসি ফোনের কথা জানাই। সে জানায় বিষয়টি দেখছে চিন্তা না করতে।

তিনি বলেন, ঈদের দিন সকাল ১০ থেকে সকাল ১১টার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানায় কয়েকজন পুলিশ আসেন। নানা প্রশ্ন করেন কেন চাকরি ছাড়লো ও কোনো রাাজনিতির সঙ্গে জড়িত ছিলসহ নানা প্রশ্ন করে চলে যায়। তবে তখনো আমি ভাবছিলাম হয়তো অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভূয়া সেনাবাহিনী সদস্য ভেবে গ্রেপ্তার করে এমন কিছু হয়েছে। হয়তো তাই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ভুলবোঝুবুঝি শেষ হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, একজন মা তো তার ছেলের মৃত্যুও কথা ভাবতেও পারেন না। তবে এর মধ্যেই ছেলেটা আমার মারা গেল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফোনে কথা বলেছেন। দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আইনানুগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট। তবে আর কোনো ময়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয় ও এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়েও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানা তিনি।

নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস জানান, তারা বিচার প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট। তার ভাইয়ের ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যেন দ্রুত বিচার কার্যকর হয় ও এবং মানুষোর জন্য তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের কল্যাণ সমিতির (রাওয়া) চেয়ারম্যান মেজর (অব) খন্দকার নুরুল আফসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App