×

জাতীয়

সিফাত-শিপ্রার জীবননাশের শঙ্কায় পরিবার ও সহপাঠীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ১২:০৯ পিএম

সিফাত-শিপ্রার জীবননাশের শঙ্কায় পরিবার ও সহপাঠীরা

সিফাত-শিপ্রা

শিপ্রার রিমান্ড চায় পুলিশ ক্ষতি ছাড়া মুক্তি চান বাবা

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে থেকে গ্রেপ্তার বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথের জীবননাশের আশঙ্কা করছেন তার পরিবার ও সহপাঠীরা। এছাড়াও তাদের দ্রুত মুক্তি দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। ২ শিক্ষার্থীর মুক্তিসহ ৪ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার স্ট্যামফোর্ডের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন ও মিছিলও করে তার সহপাঠীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিল্ম ও মিডিয়া স্টাডিজ এবং স্ট্যামফোর্ড ফিল্ম স্টুডেন্ট সিনে ফোরামের উদ্যাগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়াও সিফাত ও শিপ্রার মুক্তির দাবিতে বরগুনার বামনা উপজেলায় আয়োজিত মানববন্ধনে স্থানীয় পুলিশের লাঠিপেটার অভিযোগ উঠেছে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের পুলিশ বেদম লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সিফাতের জামিনের জন্য আবেদন করা হলে তা নাকচ করে দেন টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত।

অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও পুলিশ রিমান্ড চেয়েছে বলে জানা গেছে। আজ রবিবার তার শুনানির কথা রয়েছে। গতকাল শনিবার স্ট্যামফোর্ডের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন ও মিছিল শেষে ৪ দফা দাবি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সানাউল কবীর সিদ্দিকী সাংবাদিকদের সামনে এসব দাবি তুলে ধরেন। সেখানে ২ শিক্ষার্থীর মুক্তি ছাড়াও অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, মামলার অভিযোগ থেকে দুজনকে অব্যাহতি, ২ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে সামাজিকভাবে নিরাপত্তা প্রদান। ওই ২ শিক্ষার্থী মুক্তি পেয়ে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সে সময়।

মানববন্ধনে উপস্থিত কয়েকজন সহপাঠী বলেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী হলেন সিফাত। এ জন্য জীবননাশের আশঙ্কা বেশি করছেন তারা। একই আশঙ্কা করেছেন সিফাতের খালু মাসুম বিল্লাহ। তিনি গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ও রফিক উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার সিফাতের জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন তা নাকচ করে দেন। তাই কাল সোমবার কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করা হবে। তিনি আরো বলেন, কোনো দোষ না করার পরেও সিফাতকে জামিন দেয়নি আদালত। শনিবার বামনায় মানববন্ধনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। আর সিফাতই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এখনো প্রচ- ট্রমায় রয়েছে সিফাত। জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় আমাকে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে। এমতাবস্থায় সিফাতের জীবননাশের আশঙ্কায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা ও সিফাত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। বাহারছড়া ইউনিয়নের শ্যামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের ভাষ্যমতে আত্মরক্ষার্থে ছোড়া গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সিফাতকে। এছাড়া এ তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে তারা যে রিসোর্টে উঠেছিলেন, সেখান থেকে স্ট্যামফোর্ডের আরেক শিক্ষার্থী তাহসিন রিফাত নূর ও শিপ্রাকেও আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ কিন্তু শিপ্রাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। সিফাত ও শিপ্রা ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগে তৃতীয় বর্ষে ও তাহসিন চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। এর মধ্যে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ও শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ। সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ। অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশি ও দেশীয় চোলাই মদ এবং গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন। এদিকে গতকাল শ্রিপ্রা দেবনাথের বাবা নবকুমার দেবনাথের সঙ্গে কথা হয় ভোরের কাগজের।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিজিবিতে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে একটি দুর্ঘটনায় মেরুদ-ে অনেক আঘাত পান। ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় ২০১২ সালে অবসরে যান। জীবনে অনেকদিন সীমান্তে কাজ করেছেন। ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরেছেন। মানুষের চালচলন দেখলেই বলে দিতে পারেন কে মাদক নেয় বা নেয় না। আর এখন আমার মেয়েকেই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে কখনোই এমন না। সে কুষ্টিয়া হাজরা হাটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ গ্রেড পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে আর্কিটেকচার ও ডিজাইনিংয়ের ওপর রাজশাহীতে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করে। পরে সে আমার অনুরোধে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসিতে ভর্তি হয়। পরে সেখানে পড়তে ভালো না লাগা আর চলচ্চিত্রের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়। সেখানেই ৩য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত ১ মাস ধরেই ডকুমেন্টরি বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে যেতে মানা করেছিলাম। তবুও কাজের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমাকে রাজি করে সেখানে যায়। আর এখন এমন ঘটনা ঘটলো। এ ঘটনার পর থেকেই শিপ্রার মা পূর্ণিমা দেবনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়ায় অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় স্যালাইনও দিতে হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর থেকেই মেয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি উল্লেখ করে নব কুমার বলেন, আটকের পর থেকে এখনো মেয়ের দেখা পাওয়া যায়নি। আমরা দুজনেই অসুস্থ। ছেলেটাও পড়াশোনা করছে ভারতে। তাই বোনের ছেলে তুষার কুমার দেবনাথই কক্সবাজারে রয়েছেন। তার হাতে মেয়ের জন্য কাপড় পাঠিয়েছি। তা দিতে দেয়নি। আমার সরকারের কাছে দাবি, আমি নিজেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলাম। আমার মেয়ে নির্দোষ। কোনো ক্ষতি ছাড়াই মেয়ের মুক্তি চাই আমি। এদিকে সিফাত ও শিপ্রার দুজনেরই মামলা লড়ছেন আবুল কালাম আজাদ ও রফিকউদ্দিন চৌধুরী।

আবুল কালাম আজাদের চেম্বারের ক্লার্ক সিকান্দার বাদশাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আজ রবিবার টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে শিপ্রার জামিন শুনানি রয়েছে। তবে আদালত সূত্রে জানতে পেরেছি তাকে রিমান্ডে নেয়ার জন্যও আবেদন করেছে পুলিশ। তিনি আরো বলেন, টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে গত বৃহস্পতিবার সিফাতের জামিন আবেদন করা হয়েছিল। তবে তা না মঞ্জুর করে দেন বিচারক। না মঞ্জুরের কপি হাতে পেলেই কক্সবাজার জেলা আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App