×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষা নিতে হবে সবাইকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ০৭:০৮ পিএম

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। যখন প্রায় ধরে নেয়া হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া সম্ভবত কোভিডের থাবা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তখনই সব হিসাব উল্টে দিয়েছে মেলবোর্ন তথা ভিক্টোরিয়া। সেখানে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা আপনি জরিমানার পরিমাণ দেখলেই বুঝবেন। এ লেখা যখন লিখছি তখন বিনা প্রয়োজনে বাইরে গেলে ধরা পড়লে সেখানে ৫ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৩ লাখ টাকার সমান। যারা কোনো ধরনের লক্ষণ থাকা সতত্ত্বেও কাজে যাবেন তাদের জন্য আরো কঠিন ব্যবস্থা। তাদের ২০ হাজার ডলার জরিমানাসহ হাজতবাসেরও ভয় আছে। এখানে একটা কথা বলা দরকার। আমাদের দেশে সরকার বা প্রশাসন এমন নিষেধাজ্ঞা কিংবা আইনের আদেশ দিয়েই খালাস। তারা লোকজন কীভাবে বাঁচবেন, কী খাবেন বা কীভাবে চলবেন সে বিষয়ে কিছু বলেন না। কিন্তু এ দেশে তো তা চলে না। তাই ভিক্টোরিয়া তথা মেলবোর্নের মুখ্যমন্ত্রী এন্ডরু এও ঘোষণা দিয়েছেন যারা করোনা বা কোভিডের কারণে কাজে যাবেন না, যেতে পারবেন না তাদের চলার মতো ডলার দেয়া হবে। আর তা প্রতি ১৫ দিনে পৌঁছে যাবে যার যার অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এগুলো সাময়িক সমাধান। মূল বিষয় হলো করোনার এই আক্রমণ ফিরে এলো কীভাবে? মেলবোর্নের ঘটনা আমাদের দেশের জন্যও বড় উদাহরণ বৈকি। বিদেশ প্রত্যাগত যাদের কোয়ারেন্টাইনে হোটেলে রাখা হয়েছিল তারা কি করেছে জানেন? উৎকোচ দিয়ে সিকিউরিটি গার্ডদের বশ করে রাতে বের হয়ে গিয়েছিল হোটেল থেকে। এমনো জানা গেছে এজন্য তারা শারীরিক সম্পর্ক করতেও পিছপা হয়নি। বলাবাহুল্য, বহুজাতিক এই দেশে সবাই নামে অস্ট্রেলিয়ান হলেও সবারই আছে নিজস্ব জন্ম ও দেশ পরিচয়। জানা গেছে ওইসব সিকিউরিটি গার্ডের বেশিরভাগই ছিল মধ্যপ্রাচ্যের লোক। এই হঠকারিতা আজ এই দেশ ও জাতিকে ফেলেছে ঘোর বিপদে। একটা ব্যাপার দেখেন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের একাংশ যেমন নিয়ম মানতে নারাজ তাদের কিছুতেই বাগে আনা যায় না এখানেও তাই। করোনার মতো ভয়াবহ রোগ মহামারির সময়ও এমন আচরণ সভ্যতাকে ফেলেছে ঘোর বিপদে। ধারণা করি মহামারির পর এ নিয়ে গবেষণা হবে। বের করা যাবে কেন এই আচরণ আর কী এর প্রতিকার। কিন্তু আমাদের সমাজের আরো বিপদ হলো না আছে সুস্থ কোনো চিকিৎসা না কোনো সমাধান। পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। তারপরও কেন এই আচরণ? একটা পার্থক্য চোখে পড়বে সবার। বাংলাদেশের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা বলছেন পরিস্থিতি নাকি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু আমাদের দেশের চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম রোগী হওয়ার পরও এখানে তা বলা হয় না। বরং করোনার পর থেকে মন্ত্রীদের ঘুম হারাম। নিয়ম না মানার কারণে মন্ত্রিত্ব হারানোর ঘটনাও ঘটেছে এ দেশে। এ সততার ভেতরেই আছে সমাধান। মেলবোর্ন এই সেদিনও দুনিয়ার বসবাসযোগ্য শহরের শীর্ষে ছিল। সবকিছু মিলিয়ে বসবাসের জন্য ভালো শহরের তালিকায় থাকা এই নগরী এখন ভুতুড়ে। দীপাকে আমি সবসময় বলি, অভিবাসন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছি। শুধু সিডনিতে থাকতে তো আসিনি। শেকড় প্রোথিত হয়ে গেছে বলে যেতে পারিনি কিন্তু এখনো মনে মনে ভাবি একবার হলেও থাকতে হবে সেখানে। জীবনানন্দের ট্রাম এখন খুব বেশি দেশ বা শহরে দেখা যায় না। আধুনিকতার নামে সিডনিতে যেসব লাইট রেল ঘুরে বেড়ায় তাদের ট্রাম বললেও আমার মনে হয় মূল ট্রামের সৎ ভাই বা বোন। কলকাতা-প্যারিস এমন কিছু শহরের পাশাপাশি মেলবোর্নের সবুজ ঘেরা পথ দিয়ে বুক চিরে ঠন ঠন শব্দ তুলে যাওয়া ট্রাম মনে করিয়ে দেয় ঐতিহ্য। বেশ অনেকবার গিয়েছি সেই শহরে। সবসময় মনে হয়েছে প্রাণবন্ত আর ধ্রুপদী শহর। রাতে শহর ঘুরে না দেখলে কখনো তাকে চেনা যায় না। সিডনিতে কোনো বইয়ের দোকান বিকালের পর খোলা থাকবে এটা ভাবাও যায় না। ওখানে দেখলাম রাত ১১টায় পুরনো বইয়ের দোকানে চলছে কেনাকাটা। হওয়ারই কথা। সিডনিতে অলিম্পিক হয়েছিল আমি এ দেশে আসার পর ২০০০ সালে। ওরা করেছিল আমার জন্মেরও আগে ১৯৫৬ সালে। কমনওয়েলথ গেমস থেকে সিনেমার উৎসবে এগিয়ে থাকা এই শহরে দুবার হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। সেই ঐতিহাসিক নয়ন জুড়ানো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড এক অসাধারণ জাদুঘরও বটে। ভেতরে সাজানো শত শত বর্ষের তথ্য বাঘা বাঘা ক্রিকেটারদের বিশাল বিশাল কাট আউট মনে করিয়ে দেয় কাকে বলে ইতিহাস। যত্নে রক্ষিত আছেন শচীন-ইমরানসহ এশিয়ান তারকারাও। এই মাঠে দেখতে গিয়েছিলাম আমার স্বপ্নের খেলোয়াড় মেসিকে। আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের সে খেলায় এক গোলে জিতেছিল ওরা। এই মাঠে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়-পরাজয় দেখতে গিয়েছি অনেকবার। পুরো শহরটি তার নামের মতো ভিক্টোরিয়ান। ঐতিহ্য আর আধুনিকতায় মোড়ানো শহরের মূল রেল স্টেশনটি দেখলে আপনি চমকে যাবেন। ফিন্ডারস স্ট্রিট নামের এই স্টেশনটি অবিকল হাওড়ার মতো। গল্প আছে ব্রিটিশ আমলে সেখান থেকে পাঠানো নকশা অদল বদল হয়ে যাওয়ায় নাকি এই সাযুজ্য। এত কথা লেখার কারণ একটাই। এই নান্দনিক শিল্প সংস্কৃতির শহরটি আজ বড় বিপদে। মার্চ মাসেও যা হয়নি এপ্রিলে যা লাগেনি এখন সে কঠোর নিয়ম চাপানো হয়েছে এখানে। সবচেয়ে কড়া নজরদারি তো বটেই রাতে শুরু হয়েছে কারফিউ। অভাবিত অবাঞ্ছিত কারফিউর নাম এখানে সচরাচর শোনেনি কেউ। এ দেশের ইতিহাসে কবে কারফিউ জারি হয়েছিল জীবিত কারো মনেও নেই আর এখন তাই বলবৎ হয়েছে। এই নন্দনকানন সদৃশ্য শহরটিতে আবার শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসুক। মন থেকে চাই। মানুষ বড় অসহায় আজ সব দেশে সব শহরে। অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App